
ছবি: সংগৃহীত
সিলেটের সকল পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া, পরিবহন শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ করাসহ ৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) থেকে সিলেট জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহনে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন বাস-মিনিবাস, কোচ-মাইক্রেবাস, ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান, সিএনজি, ইমা-লেগুনা ও পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। রোববার (৬ জুলাই) বেলা তিনটায় জেলা পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতির সভাপতি ময়নুল ইসলাম এ ঘোষণা দিয়েছেন।
এর আগে শনিবার (৫ জুলাই) পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। পরিবহন শ্রমিক নেতা ময়নুল বলেন, ধর্মঘটে কোনো পিকেটিং হবে না। কোনো গাড়ি ভাঙচুর করা হবে না, ঘরে বসে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মবিরতি পালন করবো। তিনি আরও বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার্থী, বিদেশ যাত্রী ও রোগী পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যানবাহন ধর্মঘটের আওতার বাইরে থাকবে।
শনিবার সিলেট জেলা মালিক সমিতির কার্যালয়ে বাস, ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক সংগঠনগুলোর বৈঠক হয়েছিলো। সভায় সকল সংগঠন এই সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করেছে বলে জানিয়েছেন পরিবহন নেতারা।
৬ জুলাই রোববার সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম, সাধারণ সম্পাদক শেখ এমরান হোসেন ঝুমু, সিলেট জেলা সড়ক পরিবহণ বাস-মিনিবাস, কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাজী ময়নুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুহিম স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের আমল থেকে অদ্যবদি পর্যন্ত সিলেটের গণপরিবহন-পণ্য পরিবহন ও পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিকরা বিভিন্নভাবে বঞ্চিত ও অবহেলিত। বৃহত্তর সিলেটের লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী, ব্যবসায়ী ও মালিক-শ্রমিকদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম পাথর কোয়ারী। কিন্তু ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকারের মদদপুষ্ট একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের রোষানলে পড়ে সিলেটের কোটি মানুষের জীবনে নেমে এসেছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। ২০১৮ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয় সিলেটের সকল পাথর কোয়ারীসমূহ। ফলে খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে নেমে আসে চরম দুঃখ ও দুর্দশা। কর্মহীন হয়ে পড়েন বৃহত্তর সিলেটের প্রায় কোটি মানুষ।
বর্তমানে রোজগার বঞ্চিত সিলেটের প্রান্তিক এ জনপদে বিরাজ করছে দুর্ভিক্ষাবস্থা। সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৩৬ ধারা প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার যে প্রজ্ঞপন দিয়েছেন, তা মালিক-শ্রমিককে ধ্বংস করার আরো একটি নীল নকশা। একইভাবে গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া আরেক রকম হয়রানি ও ষড়যন্ত্র। তাছাড়া গাড়ি তল্লাশির নামে পুলিশ ট্রাক শ্রমিকদেরকে প্রতিনিয়ত হয়রানি করছে।
স্মারকরিপিতে ৫ দফা দাবিগুলো হচ্ছে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৩৬ ধারা প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার বাস-মিনিবাসের ক্ষেত্রে ২০ বছর এবং ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান ২৫ বছর, সিএনজি ও ইমা লেগুনা এর ক্ষেত্রে ১৫ বছর ইকোনোমিক লাইফ নির্ধারণ করার প্রজ্ঞাপন বাতিল করতে হবে। সিলেটের সকল পাথর কোয়ারীর ইজারা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার ও সনাতন পদ্ধতিতে বালু মহাল এবং পাথর কোয়ারী খুলে দিতে হবে। বিআরটিএ কর্তৃক সকল গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র বাতিল ও গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহনের ওপর আরোপিত বার্ধিত টেক্স প্রত্যাহার করতে হবে। সিলেটের সকল ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ বন্ধ, বিদ্যুৎ মিটার ফেরত ও ভাঙচুরকৃত মিলের ক্ষতিপূরণ এবং গাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া পাথর ও বালুর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সড়কে বালু ও পাথরবাহী গাড়িসহ সকল ধরনের পণ্যবাহী গাড়ির চালকদের হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
সালাম মশরুর/রাকিব