
ছবি: সংগৃহীত
আধুনিক বিশ্বে প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। সামরিক আধিপত্য নিশ্চিত করতে ক্ষমতাধর দেশগুলো একের পর এক সর্বাধুনিক প্রযুক্তির অস্ত্র ও যান আবিষ্কারে ব্যস্ত। এরই ধারাবাহিকতায় এবার চীন সফলভাবে উড়িয়েছে এমন একটি হাইপারসনিক যুদ্ধবিমান, যার গতি ঘন্টায় প্রায় ১৫ হাজার কিলোমিটার—বিশ্বকে চমকে দিয়েছে এ অর্জন।
চীনের নর্থ ওয়েস্টার্ন পলিটেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা সম্প্রতি পরীক্ষামূলকভাবে আকাশে ওড়ান ‘ফেতিয়ান টু’ নামের এই হাইপারসোনিক এয়ারক্রাফটটি। চীনা সংবাদমাধ্যমগুলোর দাবি, এটি মাক সিক্সেরও বেশি গতি অর্জন করেছে, যা ঘন্টায় ১৪,৮০০ কিলোমিটার বা ৯,২০০ মাইল। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি হাইপারসোনিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটি বিপ্লবী মাইলফলক।
দুই ইঞ্জিন, এক যাত্রা: প্রথমবার রকেট ও র্যামজেট একসাথে
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই যুদ্ধবিমানটিতে রয়েছে রকেট এবং র্যামজেট—দুই ধরনের প্রপালশন ইঞ্জিন। উড্ডয়ন পর্বে রকেট ইঞ্জিনের সাহায্যে এটি আকাশে উঠে, পরবর্তীতে বাতাসের অক্সিজেন ব্যবহার করে র্যামজেটে স্থানান্তর হয়—পুরো প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হয় চলন্ত অবস্থাতেই।
এই রূপান্তরকে গবেষকরা বলছেন ‘অভূতপূর্ব প্রকৌশলিক কীর্তি’। কারণ এ ধরনের হাইব্রিড ইঞ্জিনের সমন্বয়, বিশেষ করে বাস্তব উড়ন্ত অবস্থায়, এতদিন শুধু গবেষণাগারেই সীমাবদ্ধ ছিল।
বৈশ্বিক নিরাপত্তা বিশ্লেষণে সাড়া
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল বাজেট অফিসের ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, হাইপারসনিক অস্ত্রগুলো এতটাই দ্রুতগতির ও অনির্দেশ্য যে, শত্রুপক্ষের পক্ষে তা সনাক্ত ও প্রতিহত করা প্রায় অসম্ভব। এই ধরণের বিমানগুলো কম উচ্চতায় উড়ে, ফলে রাডার ফাঁকি দিয়ে এগিয়ে যেতে সক্ষম।
এই কারণে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই হাইপারসনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে বিশাল বিনিয়োগ করেছে। চীনের ফেতিয়ান টু এর সাফল্য এখন ওয়াশিংটনে নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিরোধের বাইরে, হুমকি বাড়াচ্ছে
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই যুদ্ধবিমান শুধু নজরদারির জন্যই নয়, হাইপারসনিক মিসাইল বহনের সক্ষমতা থাকলে তা হয়ে উঠবে একইসাথে আক্রমণ ও প্রতিরক্ষার এক মহাশক্তি। রাডার ফাঁকি দিয়ে আঘাত হানা এবং নিরাপদে ফিরে আসা—সবই সম্ভব হবে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে।
চীনা সংবাদমাধ্যম একটি লঞ্চপ্যাডে থাকা ফেতিয়ান টু এর ছবিও প্রকাশ করেছে। যদিও এখনো এর ওজন, আকার কিংবা অস্ত্র বহনের ক্ষমতা নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের আগেই চীন?
এর আগেও হাইপারসোনিক প্রযুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছিল। ট্রাম্প প্রশাসন ২৭টি চীনা প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল এই প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। কিন্তু চীনের এই সাফল্য এখন সেই সমস্ত নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই প্রযুক্তিগত আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতের যুদ্ধে হাইপারসনিক অস্ত্রই হতে পারে গেম চেঞ্জার। আর চীন যদি এই দৌড়ে এগিয়ে থাকে, তাহলে বৈশ্বিক সামরিক ভারসাম্য নতুনভাবে পুনর্গঠিত হতে পারে।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=Ko7o6X6QBvo
রাকিব