
উন্নত জীবনের স্বপ্নে পা বাড়ানো, অথচ পা রাখার পরই যেন মৃত্যু নিশ্চিত। দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ডারিয়েন গ্যাপ (Darien Gap) এখন অবৈধ অভিবাসীদের জন্য এক বিপজ্জনক দুঃস্বপ্ন। পানামা ও কলম্বিয়ার সীমান্তজুড়ে বিস্তৃত প্রায় ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই অরণ্যপথে নেই কোনো রাস্তা, নেই আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা—আছে শুধু বন্যা, সাপ, দস্যু ও মৃত্যু।
সবুজে মোড়ানো নরক
ডারিয়েন গ্যাপকে অনেকে বলেন “সবুজ নরক”। ঘন জঙ্গল, কর্দমাক্ত জলাভূমি, খাড়া পাহাড় ও অজস্র নদী মিলে এটি পেরোনো যেন জীবনের সঙ্গে জুয়া খেলা।
এখানে বিষাক্ত সাপ, জাগুয়ার, মাকড়সা এবং প্রাণঘাতী পোকামাকড়ে ভরা পরিবেশে প্রতিদিনই অসংখ্য অভিবাসনপ্রত্যাশী অসুস্থ বা আহত হচ্ছেন।
বর্ষাকালে হঠাৎ বন্যা ও ভূমিধস এই পথকে আরও বিপজ্জনক করে তোলে। পানীয় জলের অভাব, গরম ও আর্দ্রতা মিলিয়ে ডিহাইড্রেশন ও পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই।
মানব পাচার থেকে যৌন সহিংসতা
ডারিয়েন গ্যাপ শুধুই প্রাকৃতিক নয়, মানবসৃষ্ট হুমকিতেও ভরপুর। এই এলাকায় সক্রিয় অপরাধী চক্র (যেমন গাল্ফ ক্ল্যান) অভিবাসনপ্রত্যাশীদের টাকা না দিলে হত্যা বা নির্যাতনের হুমকি দেয়।
-
নারীরা প্রতিনিয়ত যৌন সহিংসতার শিকার হন
-
শিশু ও পরিবারগুলো অপহরণ ও মুক্তিপণের শিকার
-
পাচারকারীরা প্রায়শই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে যাত্রীদের জঙ্গলে একা ফেলে পালিয়ে যায়
নিরাপত্তাহীনতা ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা
এই বিপজ্জনক পথজুড়ে সরকারি নজরদারি একেবারেই কম। অপরাধী চক্রের দৌরাত্ম্যে যাত্রীরা নিঃসহায়। মোবাইল নেটওয়ার্কের অনুপস্থিতিতে যোগাযোগও সম্ভব নয়, ফলে অনেকেই হারিয়ে যান চিরতরে।
শিশুদের জন্য মৃত্যুযাত্রা
হাজার হাজার শিশু এই পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অসুস্থ, নিখোঁজ বা মৃত্যুর শিকার হচ্ছে। গর্ভবতী নারীরাও চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন—অনেকে জঙ্গলের মধ্যেই সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
প্রতিবছর শত শত মৃত্যু
ডারিয়েন গ্যাপে প্রতি বছর শত শত মানুষ মারা যান। কারও মৃত্যু হয় নদীতে ডুবে, কেউ মারা যান বন্যপ্রাণীর হাতে বা অসুস্থ হয়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৃতদেহ উদ্ধার সম্ভব হয় না।
কারা এই পথ ব্যবহার করে?
মূলত ভেনিজুয়েলা, হাইতি, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের দরিদ্র জনগণ এই পথে যাত্রা করে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফ্রিকা থেকেও অনেক মানুষ এই বিপজ্জনক পথে পা রাখছে, বৈধ উপায়ে ভিসা না পাওয়ায়।
গ্যাপ বন্ধ হবে?
পানামার নতুন প্রেসিডেন্ট এই পথ বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রও সহায়তা দিচ্ছে ডিপোর্টেশন ফ্লাইট ও লজিস্টিক সহায়তা দিয়ে।
তবে বাস্তবতা হলো, যতক্ষণ দারিদ্র্য আর হাহাকার থাকবে, মানুষ এই ঝুঁকি নিতে বাধ্য হবে।
স্বপ্নের পথে মৃত্যু নয়
ডারিয়েন গ্যাপ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার চেষ্টা মানেই জীবনকে বাজি রাখা। কেউ পৌঁছান, কেউ চিরদিনের জন্য হারিয়ে যান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিকল্প ও বৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়া ছাড়া এই দুঃস্বপ্ন থামানো যাবে না।
ফুয়াদ