
ব্রাজিলে শুরু হচ্ছে ব্রিক্স সম্মেলন। তাতে যোগ দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু এই আন্তর্জাতিক জোটের প্রধান দুই সদস্যরাষ্ট্র চীন এবং রাশিয়ার শীর্ষনেতা ব্রাজ়িলে যাননি। তাঁদের অনুপস্থিতি নিয়ে চর্চা চলছে।
কেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ব্রিক্স সম্মেলনে যোগ দিতে ব্রাজ়িলে গেলেন না, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে।
বিশেষত সাম্প্রতিক সময়ে তাঁদের ব্রিক্স-এ অংশগ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে মত অনেকের। পুতিন অবশ্য সশরীরে না গেলেও ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন।
জিনপিং নিজে না গিয়ে ব্রাজিলে পাঠিয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংকে। তিনি ব্রাজিলে পৌঁছে গিয়েছেন। তবে জিনপিংয়ের অনুপস্থিতি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, গত ১২ বছরে এই প্রথম তিনি ব্রিক্স সম্মেলনে থাকছেন না। একই ভাবে পুতিনের না-থাকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেকের মতে, জিনপিং এবং পুতিন না-থাকায় ব্রাজিলের ব্রিক্স সম্মেলন অনেকাংশে গুরুত্ব হারিয়েছে।
২০০৯ সালে ব্রিক্স গঠিত হয়েছিল। ব্রাজ়িল, চিন, রাশিয়া, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা এর প্রাথমিক সদস্য দেশ। এ ছাড়াও পরে বেশ কিছু দেশ এই আন্তর্জাতিক জোটে যোগ দিয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, ইরান, ইথিওপিয়া, মিশর এবং ইন্দোনেশিয়া।
ভূ-রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এটি মূলত আমেরিকার বিপরীত একটি জোট। তবে ব্রিক্স নেতারা একে পশ্চিম-বিরোধী বলে স্বীকার করেন না। সম্প্রতি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তাঁর অভিবাসন নীতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক, শুল্কনীতি এবং অতি সম্প্রতি পশ্চিম এশিয়ায় ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগদান আমেরিকার ভিতরে এবং বাইরে ক্রমাগত সমালোচিত হচ্ছে। ব্রিক্স-এর মাধ্যমে এই আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি কাজে লাগাতে পারত চীন-রাশিয়া, মত বিশেষজ্ঞদের। জিনপিংয়ের না থাকার সিদ্ধান্তের নেপথ্যে অন্য কারণ দেখছেন কেউ কেউ।
চীনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয়েছে, ব্রাজিলে জিনপিং যেতে পারছেন না তাঁর ব্যস্ত সূচির কারণে। ওই সময়ে তাঁর অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। তা ছাড়া, চলতি বছরেই ব্রাজিল থেকে ঘুরে এসেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট। বৈঠকও করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভার সঙ্গে।
বিশেষজ্ঞদের একটি অংশের মতে, জিনপিং এ বার ব্রাজিলে গেলেন না চীনের অভ্যন্তরীণ কারণে। অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি পরিচালনায় মন দিয়েছেন তিনি। সে ক্ষেত্রে ব্রিক্স আর তাঁর অগ্রাধিকারে নেই। এ বছরের ব্রিক্স থেকে বেজিংয়ের বড় কোনও প্রাপ্তির সম্ভাবনাও নেই বলে অনেকের মত।
পুতিন সশরীরে ব্রাজিলে যেতে পারবেন না। কারণ, ব্রাজিল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। ওই আদালতের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী, ইউক্রেনে যুদ্ধ করার অভিযোগে পুতিনকে গ্রেফতার করতে হবে ব্রাজিল সরকারকে। একই কারণে ২০২৩ সালে ব্রিক্স-এর আর এক সদস্য রাষ্ট্র দক্ষিণ আফ্রিকার সম্মেলনে সশরীরে যেতে পারেননি পুতিন।
ফুয়াদ