ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

ছোট দেশ, কিন্তু কেউ যুদ্ধ চায় না! জর্ডানকে ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যের বিস্ময়কর সমীকরণ

প্রকাশিত: ১৮:৪৪, ৬ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৯:১৫, ৬ জুলাই ২০২৫

ছোট দেশ, কিন্তু কেউ যুদ্ধ চায় না! জর্ডানকে ঘিরে মধ্যপ্রাচ্যের বিস্ময়কর সমীকরণ

মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত রাজনীতির মাঝে একটি ছোট ও তুলনামূলক শান্ত দেশ—জর্ডান। আকারে ছোট হলেও এর কৌশলগত ও ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব এতটাই প্রবল যে, কেউই এর সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে চায় না। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর পেছনে রয়েছে একাধিক ভিন্ন মাত্রার কারণ—স্থিতিশীলতা, পশ্চিমা মিত্রতা, ইসরায়েলের সাথে শান্তি চুক্তি এবং আঞ্চলিক ভারসাম্য রক্ষার ভূমিকা।

 ভূ-রাজনৈতিক স্পর্শকাতরতা

জর্ডানের অবস্থানই তাকে করে তুলেছে কৌশলগতভাবে অতি গুরুত্বপূর্ণ। উত্তরে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া, পূর্বে ইরাক, দক্ষিণে সৌদি আরব, আর পশ্চিমে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড—এই দেশগুলোর মাঝে অবস্থিত জর্ডান কার্যত এক ‘বাফার জোন’।
জর্ডান যদি যুদ্ধে জড়ায় বা অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে, তাহলে পুরো অঞ্চলেই সহিংসতার ঢেউ উঠতে পারে, যার প্রভাব সরাসরি ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনে পড়বে।

 আন্তর্জাতিক শক্তিধর মিত্রদের ছায়া

জর্ডান যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ মিত্র। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সামরিক সাহায্য দেয়, আধুনিক অস্ত্র ও হেলিকপ্টার সরবরাহ করে।
সম্প্রতি ইরান-ইসরায়েল ড্রোন দ্বন্দ্বে জর্ডান নিজ আকাশসীমায় ইরান থেকে আসা ড্রোন ভূপাতিত করে স্পষ্ট করেছে—সে শুধু দর্শক নয়, প্রভাবশালী খেলোয়াড়ও।

 ইসরায়েলের সাথে শান্তিচুক্তির অন্যতম কারিগর

১৯৯৪ সালে মিশরের পর জর্ডানই দ্বিতীয় আরব দেশ যারা ইসরায়েলের সাথে শান্তি চুক্তি করে। এই চুক্তির ফলে জর্ডান পানি ও গ্যাস সরবরাহ পায় ইসরায়েল থেকে। পাশাপাশি, জর্ডানই মুসলিমদের পবিত্র স্থান আল-আকসা মসজিদ কমপ্লেক্সের অভিভাবক হিসেবে কাজ করে।
এই শান্তিপূর্ণ সম্পর্কের ধাক্কা লাগলে তা সরাসরি ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও অঞ্চলিক শান্তির উপর আঘাত হানবে।

শরণার্থীদের আশ্রয়দাতা: মানবিক ভারসাম্য রক্ষাকারী রাষ্ট্র

জর্ডানে বর্তমানে প্রায় ১৩ লাখ সিরীয় শরণার্থী ছাড়াও বহু ফিলিস্তিনি ও ইরাকি শরণার্থী রয়েছে। এই বিপুল দায়িত্ব নিয়েও জর্ডান স্থিতিশীল থেকে যাচ্ছে। কোনো যুদ্ধ বা অস্থিরতা সৃষ্টি হলে এই শরণার্থী সমস্যার আন্তর্জাতিক রূপ নিতে বেশি সময় লাগবে না।

সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী ও আধুনিক কৌশল

জর্ডানের সেনাবাহিনী আকারে ছোট হলেও, প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতিতে প্রশংসনীয়। পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে নিয়মিত যৌথ মহড়া ও প্রযুক্তিগত সমন্বয় তাদের সক্ষমতা বাড়িয়েছে। বিমান বাহিনীও কার্যকর ও সুসজ্জিত।

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: হাশেমীয় রাজতন্ত্রের ভারসাম্যপূর্ণ শাসন

বাকি মধ্যপ্রাচ্যের তুলনায় জর্ডান অভ্যন্তরীণভাবে অনেক বেশি স্থিতিশীল। হাশেমীয় রাজপরিবারের নেতৃত্বে দেশটি জাতিগত ও রাজনৈতিক বৈচিত্র্যকে এক ছাতার নিচে রাখছে সফলভাবে।

জর্ডান না থাকলে যুদ্ধ গড়াবে পুরো মধ্যপ্রাচ্য

বিশ্লেষকদের মতে, জর্ডানকে আক্রমণ মানেই মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার স্তম্ভ ভেঙে ফেলা। যে কোনও আঞ্চলিক সংঘাত জর্ডানের ভারসাম্য নষ্ট করলে তা একটি Domino Effect সৃষ্টি করতে পারে। আর সে কারণেই, এই ছোট দেশটির বিরুদ্ধে কেউই সরাসরি যুদ্ধে যেতে চায় না।

ফুয়াদ

×