ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

বিসিএসে পাঁচবার ব্যর্থ, ষষ্ঠবারেই বাজিমাত করলেন আরিফা

তানিম তানভীর, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ইবি

প্রকাশিত: ০০:২৫, ৭ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০০:৩৬, ৭ জুলাই ২০২৫

বিসিএসে পাঁচবার ব্যর্থ, ষষ্ঠবারেই বাজিমাত করলেন আরিফা

ছবি: জনকণ্ঠ

৪৪তম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) গণিত বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরিফা সুলতানা। পাঁচ বছরের সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে আট বছরের সংসার সামলিয়ে ছয়বারের চেষ্টায় অবশেষে তিনি এ সাফল্য অর্জন করেন।

তার শ্বশুরবাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে। তিনি ২০০৭ সালে মণিরামপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১০ সালে মণিরামপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।

সাফল্যের অনুভূতি জানিয়ে আরিফা সুলতানা বলেন, “রেজাল্ট দেখে স্বপ্নের মতো লাগছিল। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আল্লাহর রহমত আর শুভাকাঙ্ক্ষীদের দোয়া ও সমর্থনেই আমার আজকের এই সফলতা।”

দীর্ঘ এই যাত্রায় অনুপ্রেরণার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমার আম্মু অত্যন্ত মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও নানা প্রতিকূলতায় বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেননি। সেই তাগিদ আমাদের ছয় ভাইবোনের মধ্যেই ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। আম্মুই আমাদের অনুপ্রেরণার মূল ভিত্তি। বিয়ের পর আমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের পেয়েছি সবসময় ইতিবাচক সমর্থক হিসেবে। বিশেষ করে আমার স্বামী প্রায়ই বলতেন, ‘তুমি তোমার মতো এগিয়ে যাও, আমি পাশে আছি।’ এই আশ্বাস আমাকে নির্ভার রাখতো।”

আরিফার স্বামী রবিউল ইসলাম বলেন, “আমার স্ত্রী একজন উদ্যমী নারী। আমি বরং হতাশার সময়গুলোতে তার পাশে ছিলাম, তবে আমার পরিবারের সমর্থন ছিল আরও বেশি। তার এই সাফল্যে আমরা গর্বিত।” বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নের প্রেরণা হিসেবে আরিফা বলেন, “এটা আমার নিজের স্বপ্ন ছিল না, আমার ভাইয়া-ই প্রথম অনুপ্রেরণা জোগায়। তার পরামর্শেই প্রথম বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি।”

আরিফার বড় ভাই, খুলনা পাবলিক কলেজের সহকারী অধ্যাপক তাকদীরুল গনি বলেন, “ভালো কিছু করতে হলে সময় দিতে হয়। এইচএসসি থেকেই তাকে সাহস দিয়ে এসেছি। মনে আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যখন সে ল্যাপটপ চায়, আমি বলেছিলাম প্রয়োজনে আমাদের বাগানের গাছ বিক্রি করেও কিনে দেবো। যদিও সেটা আর লাগেনি, কিন্তু এই আশ্বাস থেকেই সে অনুপ্রেরণা পায়।”

বিসিএস প্রস্তুতির বিষয়ে আরিফা বলেন, “সিলেবাস ও বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে প্রতিটি টপিক ধরে বই শেষ করেছি। নতুন কিছু মার্ক করে পড়েছি, শেষে মডেল টেস্ট দিয়ে নিজেকে যাচাই করেছি। দুর্বলতা থাকলে আবার শুরু করেছি।”

তিনি আরও বলেন, “আট বছরের সংসার এবং পাঁচ বছরের সন্তানের দায়িত্বের পাশাপাশি বিসিএসের মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সফল হওয়া সহজ ছিল না। আমি ৩৭তম থেকে ৪৪তম বিসিএসে মোট ছয়বার অংশ নিই। তিনবার প্রিলিতে ফেল করি, ৪১তমতে নন-ক্যাডারে থাকি, আবার ৪৩তমেও প্রিলি ফেল। শেষ পর্যন্ত ৪৪তম বিসিএসে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাই।”

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, “বিসিএস ক্যাডার হতে চাইলে শুধু লক্ষ্য ঠিক রেখে নিয়মিত চেষ্টা করতে হবে। অজুহাত নয়, নিজের হাতেই অজুহাত দূর করতে হবে। যেহেতু বিসিএস দীর্ঘমেয়াদি একটি জার্নি, তাই অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা স্বচ্ছলতা থাকা প্রয়োজন। স্বচ্ছলতা হয়তো সাফল্য আনে না, তবে মানসিক স্বাচ্ছন্দ্য এনে আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।” তিনি বলেন, “পেশাগত দায়িত্ব সর্বোচ্চ আন্তরিকতায় পালন করে, সমাজের ঝরে পড়া শিশুদের জন্য কাজ করতে চাই।”

শহীদ

×