ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

সিভি পাঠাচ্ছেন, কিন্তু রেসপন্স পাচ্ছেন না? হতাশ হবেন না, প্রস্তুত হোন

প্রকাশিত: ১০:৫০, ৭ জুলাই ২০২৫

সিভি পাঠাচ্ছেন, কিন্তু রেসপন্স পাচ্ছেন না? হতাশ হবেন না, প্রস্তুত হোন

ছ‌বি: প্রতীকী

আপনি হয়তো অনেক কষ্ট করে একটা চমৎকার জীবনবৃত্তান্ত (CV) তৈরি করেছেন। ভালোভাবে টাইপসেট করেছেন, ইংরেজিতে ঝরঝরে ভাষায় লিখেছেন, অভিজ্ঞতা, শিক্ষা, দক্ষতা সব সুন্দর করে সাজিয়েছেন। এরপর বিভিন্ন জায়গায় সেটি ইমেইলে পাঠাচ্ছেন কিংবা জব পোর্টালে আপলোড করছেন। কিন্তু দিন পেরিয়ে যাচ্ছে, সপ্তাহ পার হয়ে যাচ্ছে কোনো রেসপন্স নেই। ইন্টারভিউ তো দূরের কথা, অনেক সময় তো রিজেকশন ইমেইলটাও আসে না। মন খারাপ হওয়াটা স্বাভাবিক। মনে হতে পারে, আপনার চেষ্টা বিফলে যাচ্ছে। নিজেকে নিয়ে সন্দেহ তৈরি হতে পারে— আমি কি যোগ্য না? আমার কোথাও ভুল হচ্ছে?

এই হতাশা অনেকের মধ্যেই কাজ করে, বিশেষ করে ক্যারিয়ারের শুরুতে বা ট্রানজিশনের সময়। কিন্তু এখানে হতাশ হওয়ার চেয়ে জরুরি হলো নিজেকে নতুনভাবে প্রস্তুত করা। আপনি যেভাবে আবেদন করছেন, সেটি হয়তো যথেষ্ট নয়। আপনি যাদের কাছে আবেদন করছেন, তারা প্রতিদিন শত শত এমন ইমেইল পাচ্ছেন। আপনি যেন সেই ভিড়ে হারিয়ে না যান, সেজন্য কিছু বিষয় ভেবে দেখতে হবে।

প্রথমত, আপনার CV কি সত্যিই চাকরি প্রাপ্তির উপযোগী? একাডেমিক সিভি আর ইন্ডাস্ট্রি সিভির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, আমরা শুধু আমাদের ডিগ্রি আর কোর্স লিস্ট দিয়ে CV সাজিয়ে ফেলি, কিন্তু হায়ারিং ম্যানেজার খোঁজে সমস্যার সমাধানকারীকে—এমন কাউকে, যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে মান যুক্ত হবে। আপনি কিভাবে কোনো প্রকল্পে অবদান রেখেছেন, কি কি সমস্যা সমাধান করেছেন, টিমে কিভাবে কাজ করেছেন—এই ধরনের ইনফো থাকা উচিত। শুধুমাত্র "I am a quick learner" বা "hardworking" বললে চলবে না, সেটা প্রমাণ করতে হবে উদাহরণ দিয়ে।

দ্বিতীয়ত, আপনি কি প্রতিটি চাকরির বিজ্ঞাপনের সঙ্গে মিলিয়ে নিজের সিভি কাস্টমাইজ করছেন? একই CV সব জায়গায় পাঠালে তা সব জব রোলে খাপ খাবে না। কোনো প্রতিষ্ঠানে হয়তো তারা "communication skill" বেশি চায়, আবার কোথাও "data analysis" জরুরি। আপনি যদি সেসব প্রয়োজন অনুযায়ী নিজের স্কিল হাইলাইট না করেন, তাহলে আপনার আবেদন হয়তো চোখেই পড়বে না। ATS (Applicant Tracking System) অনেক জায়গায় ব্যবহৃত হয়, যেটা নির্দিষ্ট কীওয়ার্ড না থাকলে CV-ই স্ক্যান করে না। আপনি যদি কাস্টমাইজড না করেন, তাহলে হয়তো মানুষ তো দূরের কথা, মেশিনও আপনার ফাইল খুলছে না।

তৃতীয়ত, অনেক সময় রেসপন্স না পাওয়ার পেছনে কারণ হতে পারে কাভার লেটার না পাঠানো। যদিও অনেকেই ভাবে কাভার লেটার অতিরিক্ত কিছু নয়, কিন্তু অনেক নিয়োগদাতা এখনো এটিকে গুরুত্ব দেয়। কাভার লেটার আপনি কেন সেই কোম্পানির জন্য উপযুক্ত, কেন আপনি ওই পজিশনের প্রতি আগ্রহী—এসব সংক্ষেপে জানায়। এটা আপনাকে বাকিদের চেয়ে আলাদা করে তোলে। শুধু বায়োডেটা না দিয়ে নিজের কণ্ঠস্বর যুক্ত করা মানে আপনি উদ্যোগী ও আগ্রহী—এই বার্তাটা পৌঁছায়।

চতুর্থত, আপনাকে আপনার অনলাইন প্রোফাইল ঠিকঠাক রাখতে হবে। লিংকডইন প্রোফাইল আজকের দিনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক নিয়োগকারী আপনার সিভি পাওয়ার পর প্রথমেই আপনার লিংকডইন চেক করে। সেখানে আপনার ছবি, হেডলাইন, সামারি, অভিজ্ঞতা ও স্কিলসেকশন ঠিক আছে কি না, সেটা দেখে তারা প্রথম ধারণা তৈরি করে। আপনি যদি সেখানে অ্যাকটিভ থাকেন, পোস্ট করেন, কনটেন্ট শেয়ার করেন—তাহলে আপনার উপস্থিতি আরও দৃঢ় হয়।

পঞ্চমত, আপনি শুধু আবেদন করছেন, কিন্তু নেটওয়ার্কিং করছেন কি? অনেক সময় চাকরির বাজারে যোগাযোগ বা রেফারেল বড় ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে। আপনি যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে কারো সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন, অন্তত জানাতে পারেন যে আপনি আবেদন করেছেন—তাহলে সেই ব্যক্তি হয়তো আপনার রিজুমে রিক্রুটারের চোখে আনতে পারেন। এটাকে ভুলভাবে নিলে চলবে না—এটা ধূর্ততা নয়, বরং বাস্তবতা। আপনি কতটা অ্যাকটিভলি নেটওয়ার্ক করছেন, সেটাও চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—সময়। আপনি হয়তো খুব ভালো একটা CV পাঠালেন, কিন্তু প্রতিষ্ঠান তখনো শর্টলিস্ট করা শুরুই করেনি। আবার আপনি হয়তো আবেদনের ডেডলাইনের একদিন আগে পাঠালেন, তখন হয়তো আগেই শর্টলিস্ট শেষ। তাই ধৈর্য রাখতে হবে। প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ। কেউ কেউ প্রথম ১০টা আবেদনেই চাকরি পায়, আবার কেউ হয়তো ১০০টা পাঠিয়েও রেসপন্স পায় না—এটা ব্যক্তিভেদে আলাদা।

সবচেয়ে জরুরি বিষয়টি হলো—মানসিক প্রস্তুতি। আপনি যতোবার রিজেকশন পাবেন, ততোবার শেখার সুযোগ পাবেন। যেখান থেকে রেসপন্স পাচ্ছেন না, সেটাকে সিগন্যাল ধরে নিন। বুঝে নিন কোথায় ঘাটতি হচ্ছে। নিজের CV অন্য কারো—বিশেষ করে HR বা অভিজ্ঞদের—দেখিয়ে নিন। কেউ আপনাকে হয়তো এক লাইন পরামর্শ দেবে, যেটা আপনার গোটা প্রোফাইল পাল্টে দিতে পারে।

চাকরি পাওয়া কেবল যোগ্যতার প্রশ্ন নয়—এটা কখনো কখনো সঠিক সময়ে, সঠিক জায়গায় সঠিকভাবে নিজেকে উপস্থাপন করার দক্ষতাও। তাই হতাশ না হয়ে নিজেকে নতুনভাবে প্রস্তুত করুন। সময় দিন, কৌশল ঠিক করুন, নিজের প্রতিক্রিয়া গুছিয়ে নিন। আপনি যে পরিশ্রম করছেন, সেটার প্রতিদান একদিন অবশ্যই আসবে—শুধু লেগে থাকতে হবে।

স্মরণে রাখুন—আপনার যোগ্যতা তখনই কাজে আসবে, যখন আপনি সঠিকভাবে সেটা তুলে ধরতে পারবেন। আর সেখানেই প্রস্তুতি সবচেয়ে জরুরি। রেসপন্স না পেলেও থামবেন না—আপনার সময় আসবেই।

এম.কে.

×