
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ভুয়া পশু চিকিৎসকের সংখ্যা। গ্রাম-গঞ্জে সরকারি সেবা অপ্রতুলতার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির প্রতারক ব্যক্তি নিজেদের পশু চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে সাধারণ খামারিদের প্রতিনিয়ত প্রতারণা করছেন। তারা নামমাত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে ‘ডাক্তার’ সেজে পশু চিকিৎসা দিচ্ছেন। এতে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন খামারিরা; পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি এমনকি পরোক্ষভাবে মানুষও।
জানা গেছে, উল্লাপাড়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রায় পাঁচ শতাধিক নামধারী পশু চিকিৎসক রয়েছে। এদের অধিকাংশই নামসর্বস্ব কোনো প্রতিষ্ঠান কিংবা সংস্থা থেকে তিন/ছয় মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে ডাক্তার বনে গেছেন। অনেকেই নিজেদের পরিচিতি বাড়াতে ভুয়া কিছু প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে একাধিক ডিগ্রি সংযোজন করছেন। তারা স্থানীয় হাট-বাজারে ঔষধের দোকান খুলে সেখানে নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি করছেন। ভুয়া চিকিৎসকদের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় আসল ও নকল চিনতে বিভ্রান্ত হচ্ছেন প্রান্তিক খামারিরা।
গবাদিপশুর সামান্য কিংবা জটিল সমস্যায় এদের শরণাপন্ন হলে তারা না বুঝেই অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন পুশ করে থাকেন। রোগ নির্ণয় না করেই চিকিৎসা দেওয়ার কারণে কখনও কখনও ছোটখাটো রোগ জটিল আকার ধারণ করে। এরপর তারা পশুটিকে উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন বা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে রেফার করেন—তখন যখন আর কিছু করার থাকে না।
একাধিক খামারি ও কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি গ্রাম বা বাজারে দু-একজন পশু চিকিৎসকের ওষুধের দোকান আছে। তারা ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়ে পশু চিকিৎসা করেন। রোগ নির্ণয় না করেই চিকিৎসা দেওয়ায় সামান্য কিছু রোগ সারলেও অধিকাংশই জটিল হয়ে যায়। মাঝে মাঝে ভুল চিকিৎসায় পশুর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। তখন তারা নানাভাবে শান্তনা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেন।
প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এসব ভুয়া চিকিৎসকের দৌরাত্ম্য বেড়ে চলেছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। তাদের দাবি—খামারি ও কৃষকদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় যত দ্রুত সম্ভব এসব ভুয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। হাট-বাজারের এসব ভুয়া চিকিৎসকদের ওষুধের দোকানেও অভিযান চালানোর দাবি জানানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুয়া পশু চিকিৎসক বলেন, “লেখাপড়া শেষ করে বেকার ছিলাম, কোনো কাজ ছিল না। পরে একজনের পরামর্শে তিন মাসের একটি প্রশিক্ষণ নিয়ে পশু চিকিৎসা শুরু করি। শুরুতে গরু-ছাগলের জ্বর-ঠান্ডার চিকিৎসা করলেও এখন সব রোগের চিকিৎসা দেই। জটিল কিছু দেখলে সিনিয়রদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে পরামর্শ নিই।”
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এম এ মতিন বলেন, “গ্রাম-গঞ্জে নামধারী প্রাণি চিকিৎসকের সংখ্যা বেড়েছে। এদের ভুল চিকিৎসায় যখন প্রাণি মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায় তখন আমাদের কাছে পাঠানো হয়। তখন প্রাণি মারা গেলে দায় আমাদের ওপরই পড়ে। এসব ভুয়া ডাক্তাররা গ্রামীণ খামারিদের টার্গেট করেন। তারা নিয়ম না মেনে এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন পুশ করেন। পরে ভুল চিকিৎসায় প্রাণি মারা গেলে খামারিদের শান্তনা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেন, ফলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না।”
উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত বলেন, “এমন হয়ে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সানজানা