ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

সরকারি চাকরি না হলে জীবন শেষ? ভাবনাটা বদলে ফেলুন আজই!

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ৭ জুলাই ২০২৫

সরকারি চাকরি না হলে জীবন শেষ? ভাবনাটা বদলে ফেলুন আজই!

ছ‌বি: প্রতীকী

সরকারি চাকরি না হলে জীবন শেষ— এমন ধারণা আমাদের সমাজে অনেকটাই গেঁড়ে বসে আছে। অনেকেই ভাবেন, সরকারি চাকরিই সবচেয়ে নিরাপদ, সম্মানজনক ও জীবনযাত্রার নিশ্চয়তা দেয় এমন একমাত্র পথ। তাই সরকারি চাকরির প্রতি এক ধরনের অতিরিক্ত আবেদন, চাপ আর অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ থাকে। কিন্তু এই ধারণাটা সম্পূর্ণ সত্য নয়। আধুনিক যুগে ক্যারিয়ারের নানা অপশন ও সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে সরকারি চাকরি ছাড়াও মানুষ সফলতা ও আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য অর্জন করতে পারে। তাই এই চিন্তাধারা থেকে বের হয়ে এসে নিজের লক্ষ্য ও দক্ষতা অনুযায়ী পথ খোঁজা উচিত।

প্রথমেই বলতে হয়, সরকারি চাকরির প্রতি মানুষ কেন এত বেশি আকৃষ্ট হয়? এর কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সরকারি চাকরির স্থায়িত্ব। চাকরি চলে যাওয়ার আশঙ্কা কম, বেতন নির্দিষ্ট ও নিয়মিত, বিভিন্ন ভাতা-ভোগ লভ্যাংশ থাকে, আর কিছুটা হলেও সামাজিক মর্যাদা পাওয়া যায়। আবার পরিবার ও সমাজও অনেক সময় সরকারি চাকরিকে বেশি প্রাধান্য দেয়, যা অনেককে অনুপ্রাণিত করে। বিশেষ করে আমাদের দেশের মতো জায়গায় যেখানে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা, সরকারি চাকরি যেন এক ধরনের নিরাপত্তার আশ্রয়স্থল।

তবে, সরকারি চাকরি না পেলেই জীবন শেষ হয়ে যাবে এমন মানসিকতা খুবই ক্ষতিকর। এর ফলে অনেক তরুণ-তরুণী অপ্রয়োজনে চাপের মধ্যে পড়ে যায়, হতাশ হয়, আত্মবিশ্বাস হারায়, এমনকি নিজেদের মেধা ও সম্ভাবনাকে ঠিকমতো কাজে লাগানোর সুযোগ হাতছাড়া করে। আজকের ডিজিটাল যুগে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরির বিকল্প রয়েছে। ফ্রিল্যান্সিং, উদ্যোক্তা, তথ্য প্রযুক্তি, ক্রিয়েটিভ আর্টস, ডিজিটাল মার্কেটিং, অনলাইন ব্যবসা, বেসরকারি খাতে চাকরি এসব অনেক বেশি সম্ভাবনাময়।

এখন অনেক প্রতিষ্ঠানেই দক্ষতা ও পারফরম্যান্সের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, শুধু ডিগ্রি বা সরকারি চাকরির সিলেকশন না হওয়ায় আপনি পিছিয়ে থাকবেন এমন ধারণা নয়। বেসরকারি খাত কিংবা নিজস্ব উদ্যোগে অনেকেই স্বল্প সময়েই উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছেন। দেশের অভিজ্ঞ উদাহরণগুলো দেখলেই বোঝা যায়, শুধু সরকারি চাকরিই একমাত্র সফলতার মাপকাঠি নয়।

সরকারি চাকরি না হলে জীবনের অর্থহীন হয়ে যাওয়া, অর্থনৈতিক সংকট ছাড়া আরও কিছু নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। যেমন— আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া, সামাজিক ও পারিবারিক চাপ বৃদ্ধি পাওয়া, হতাশা ও মানসিক চাপ বাড়া, স্বপ্ন ও লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যাওয়া। এসব কারণে জীবন মানসিক ও শারীরিকভাবে দৃষ্টিতে সংকুচিত হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, জীবন নানা রঙের ও বিভিন্ন গন্তব্যের পথ দিয়ে এগিয়ে যায়।

জীবনে সফলতার জন্য প্রয়োজন নিজের দক্ষতা চেনা, আগ্রহের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা এবং সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ। সরকারি চাকরির বাইরেও উন্নতির অনেক সুযোগ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, তথ্য প্রযুক্তি খাতে আজকের তরুণরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে পারে। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কাজ গ্রহণ, নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করা, নিজের পণ্য বা সেবা বিক্রি করা— এসবের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে আয় করা সম্ভব।

তাছাড়া, ব্যবসা শুরু করেও অনেকেই সফল হয়েছেন। নিজের উদ্যোগ থেকে ছোট বা মাঝারি ব্যবসা গড়ে তোলা এবং সেটি ক্রমশ বৃদ্ধি করা সম্ভব। এই ধরনের উদ্যোগ জীবনের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দেয়, এবং নিজেদের ওপর ভরসা বাড়ায়।

শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জনেও এখন নানা সুযোগ-সুবিধা সহজলভ্য। অনলাইন কোর্স, বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ভিডিও লেকচার, ওয়ার্কশপ—এসবের মাধ্যমে আপনি নিজের দক্ষতা বাড়িয়ে নিতে পারেন। নিজের আগ্রহ অনুসারে নতুন নতুন জ্ঞান অর্জন করলে বিভিন্ন ক্ষেত্রেই ক্যারিয়ার গঠন করা যায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও এখন বড় প্ল্যাটফর্ম, যেখানে নিজের কাজ, চিন্তা, শিল্পকর্ম বা সেবা প্রচার করে অর্থ আয় করা সম্ভব। অনেকেই ব্লগিং, ইউটিউব, পডকাস্টিং বা সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছেন।

তাছাড়া, সরকারি চাকরির তুলনায় বেসরকারি খাতে কাজ করলে অধিক স্বাধীনতা ও বিভিন্ন সৃজনশীল সুযোগ পাওয়া যায়। আধুনিক ও দ্রুত পরিবর্তনশীল বাজারে কাজের গতি ও পরিবেশ অনেকটাই গতিশীল ও চ্যালেঞ্জিং। এতে কাজের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

সব মিলিয়ে বলতে হয়, সরকারি চাকরিই একমাত্র পথ নয়। জীবনের মানে ও সফলতার সংজ্ঞা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। কেউ হয়ত সরকারি চাকরিতে খুশি থাকেন, আবার কেউ বেসরকারি খাতে অথবা নিজের ব্যবসায় আনন্দ পান। তাই জীবনের পথ খুঁজতে গিয়ে সরকারি চাকরি না পাওয়া বা না নেওয়াকে জীবন শেষ ভাবা উচিত নয়। বরং নিজেকে জানার, দক্ষতা বাড়ানোর, আত্মবিশ্বাস জোগানোর এবং নতুন সুযোগ অন্বেষণের মধ্য দিয়েই জীবন অর্থপূর্ণ করা যায়।

অতএব, সরকারি চাকরি না হলে জীবন শেষ— এমন অদূরদর্শী ও সীমাবদ্ধ চিন্তা আজই বদলে ফেলুন। জীবনের একাধিক দিক রয়েছে, যেখানে নিজের স্বপ্ন ও লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব। ধৈর্য্য ধরে নিজের উপর বিশ্বাস রেখে, সঠিক পরিকল্পনা করে এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যে কোনো ক্ষেত্রেই সফল হওয়া যায়। আধুনিক বিশ্বে প্রগতি আর বিকাশের পথে অনেক সুযোগ অপেক্ষা করছে, সেগুলো গ্রহণ করাই হলো আধুনিক ও মুক্ত চিন্তার পরিচায়ক।

আপনার জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখুন, নতুন পথ খুঁজুন, নিজের স্বপ্ন পূরণে মনোনিবেশ করুন। সরকারি চাকরি না পাওয়া বা না নেওয়াকে জীবনের ব্যর্থতা ভাবা ভুল। সফলতা আসলে আপনার মনোভাব, চেষ্টা আর পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করে। তাই আজই সেই নেতিবাচক ধারণা থেকে বের হয়ে, জীবনের নতুন সূচনা করুন।

এম.কে.

×