
ছবি: জনকণ্ঠ
সদর উপজেলার মহিনন্দ নয়াপাড়া গ্রামের প্রতিবন্ধী বাবা হাবিবুর রহমানের একমাত্র ছেলে হাফেজ মাওলানা জুনায়েদ আহমদ। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। টিউশনি করে চালাতেন নিজের ও পরিবারের খরচ। গত বছর হওয়া জুলাই অভ্যুত্থানে যোগ দিয়ে পুলিশের গুলিতে হারান তার একটি পা। এরপর থেকে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায় পরিবারটির। মানুষের সহায়তা পেলে খাবার জোটে, না হয় থাকতে হয় তাদের অভুক্ত।
জানা যায়, জুনায়েদ ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটি হাফিজিয়া মাদরাসায় পড়াশোনা করতেন। পাশাপাশি টিউশনি করে নিজের ও পরিবারের খরচ চালাতেন। কিন্তু পুলিশের গুলিতে পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে তাকে।
জুনায়েদ গণমাধ্যমে বলেন, ৫ আগস্ট দুপুরে শাহবাগ ও গণভবন ঘেরাও করার কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য মাদরাসার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে রওনা হই। এর মধ্যে পথেই পুলিশের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে যাই। এ সময় একটি ভ্যানের পেছনে গিয়ে আশ্রয় নিই। দীর্ঘক্ষণ পালিয়ে থাকার পর বুঝে ওঠার আগেই পুলিশ আমাদের কাছে চলে আসে।
এ সময় পুলিশের কাছে মাফ চেয়ে পাশের গলি দিয়ে দৌঁড় দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের গুলি করে। পরে আহত অবস্থায় লোকজন আমাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে অপারেশন করতে গিয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শে আমার পা কেটে ফেলতে হয়।
জুলাই যোদ্ধা জুনায়েদ আরো বলেন, ‘দেশের জন্য এই জাতির জন্য যতটুকু সম্ভব করেছি। আমার পা হারিয়েছি। বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান আমাদের জন্য কী করবেন তা জানি না। সংসারে আমিই উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করেছি সংসার চালানোর জন্য। এখন সব বন্ধ হয়ে গেছে’।
জুনায়েদের বাবা হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমার একটি মাত্র ছেলে। এ ছেলেটা হলো আমার ভরসার জায়গা। সংসারটা সে চালাত। আমি নিজেও অচল। কোনো কাজ করতে পারি না। মানুষ সহায়তা করলে আমার সংসার চলে। না হলে না খেয়ে পড়ে থাকতে হয়’।
স্থানীয় সাংবাদিক আমিনুল হক সাদী বলেন, প্রতিবেশী জুনায়েদের পরিবারটি একবারে অসহায়। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরাও উদ্বিগ্ন হয়ে আছি। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ জুনায়েদের পরিবারের জন্য এমন কিছু যেন করে দেয়, যা দিয়ে তারা সুন্দরভাবে চলতে পারে।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান গণমাধ্যমে বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে তাকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। একই সঙ্গে কর্মসংস্থানের উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। অচিরেই তার জন্য একটি চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।
ছামিয়া