ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

খামারে দুই তরুণের স্বপ্নজয়!!

নুর ইসলাম, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

প্রকাশিত: ২১:১৭, ৬ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২১:২২, ৬ জুলাই ২০২৫

খামারে দুই তরুণের স্বপ্নজয়!!

ছবি: জনকণ্ঠ

বর্তমানে অনেক তরুণই চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তেমনই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই তরুণ জুবাইদ হোসেন জিয়ান ও ইখতিয়ার উদ্দিন। ফেসবুকে পরিচয় থেকে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব, আর সেই বন্ধুত্বই একসময় রূপ নেয় ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বে।

জিয়ান পড়েন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগে এবং ইখতিয়ার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদে। একজন ব্যবসায়িক চিন্তায় দক্ষ, আরেকজন কৃষিতে অভিজ্ঞ এই দুজন মিলে গড়ে তুলেছেন একটি টেকসই খামার-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান।

শুরুটা যেভাবে: মাত্র ৩০ হাজার টাকা দিয়ে যাত্রা শুরু নিজেদের ৫ হাজার করে এবং বাকিটা বন্ধুদের কাছ থেকে ধার। শুরু হয়েছিল মাত্র ৭টি ছাগল নিয়ে। আজ তাদের খামারে রয়েছে ১০০টির বেশি ছাগল, ১২টি গরু, পাশাপাশি শুরু করেছেন মাছের খামারও। শাকসবজি ও নানা ফসলের চাষও করছেন তাঁরা।

দ্রুত সম্প্রসারণ ও ব্যবস্থাপনা: ২০২৪ সালের শুরুতে শুরু হয় 'কামারুন অ্যাগ্রো ফার্ম'। এক বছরের মধ্যেই তারা খুলে ফেলেছেন চারটি শাখা—খুলনা, নরসিংদী, পটুয়াখালী ও ময়মনসিংহে। ঢাকায় রয়েছে মূল নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। বর্তমানে তাদের দলে আছেন ১০ জন উপদেষ্টা, ৯ জন পরিচালক, ৪ জন ম্যানেজার, ৮ জন কর্মচারী এবং ৭ জন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। ইতোমধ্যেই তারা আয়োজন করেছেন দুটি জাতীয় সেমিনার, যেখানে তরুণদের কৃষিতে উদ্যোক্তা হওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।

শুরুর গল্প: জিয়ান বলেন, “শুরুর পথটা সহজ ছিল না। এর আগেও সাতটা ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এই উদ্যোগ ছিল অষ্টম প্রচেষ্টা। কিন্তু এবার আর পিছু হটিনি।”

ইখতিয়ার বলেন, “ছোটবেলা থেকেই কৃষি নিয়ে কিছু করার স্বপ্ন দেখতাম। আমাদের পরিকল্পনায় অনেকেই শুরুতে উৎসাহ দেয়নি। কেউ কেউ বলেছে ‘তুই ছাগল-গরু নিয়ে ব্যবসা করবি?’ কিন্তু আমরা নিজেদের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম।”

ফার্মটির দর্শন: কামারুন অ্যাগ্রো ফার্ম একটি অংশীদারিত্ব-ভিত্তিক কৃষি উদ্যোগ, যা উদ্ভাবনী ও টেকসই কৃষিকাজে বিশ্বাসী। তারা ঐতিহ্যবাহী কৌশল ও আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে ফসলের ফলন, মাটির স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করে। অংশীদারদের সম্মিলিত দক্ষতা সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে সহজ করে, যা খামারের টেকসই সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: তরুণ দুই উদ্যোক্তার লক্ষ্য খামার ব্যবস্থাপনাকে কর্পোরেট পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। তারা বিশ্বাস করেন, কৃষিকাজ মানেই কাদা-মাটিতে আটকে থাকা নয়। একজন খামারিও আধুনিক ও সম্মানজনক জীবনযাপন করতে পারেন। আর কৃষিখাতেই রয়েছে বাংলাদেশের জন্য বিশাল সম্ভাবনা।

শহীদ

×