
ছবি: সংগৃহীত
গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার তদন্তে গঠিত কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এতে উঠে এসেছে র্যাবের ‘আয়না ঘর’-এ নারীদের উপর চালানো ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা, যা নতুন করে নাড়িয়ে দিয়েছে দেশবাসীকে।
রিপোর্টে বলা হয়, অনেক পর্দানশীল নারীকে জোরপূর্বক বোরখা খুলিয়ে জানালার সামনে বসিয়ে রাখতো র্যাব, যাতে জানালার বাইরে দাঁড়ানো পুরুষ কর্মচারীরা সারাদিন তাদের দেখতে পায় এবং অশ্লীল মন্তব্য করে মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করে।
এছাড়া ভয়াবহ শারীরিক নির্যাতনের অংশ হিসেবে ‘ওয়াটারবোর্ডিং’ করা হতো। বন্দীর মুখে কাপড় বেঁধে পানির ধারাবাহিক ঢালায় দম আটকে দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালাতো। একইসাথে ইলেকট্রিক শকের মতো নির্মম পদ্ধতিও ব্যবহার করা হতো বিশেষ করে প্রস্রাবের সময় প্রাইভেট পার্টে শক দিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হতো।
কমিশনের রিপোর্টে উঠে এসেছে, দিনের পর দিন ৫-১০ হাজার মেগাওয়াটের তীব্র লাইট জ্বালিয়ে বন্দীদের ঘুমাতে না দিয়ে ‘স্লিপ ডিপ্রিভেশন’-এর মাধ্যমে পাগলপ্রায় করে তোলা হতো। অনেকেই স্থায়ীভাবে চোখের ক্ষতি বা মানসিক বিকারগ্রস্ততায় ভুগছেন।
রিপোর্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশে বলা হয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, এমনকি তার আত্মীয়রাও গুম-খুনের সাথে সরাসরি জড়িত ছিল। ভারতের ভূমিকাও উল্লেখ করে বলা হয়, প্রতিবেশী দেশটির সরকারি পর্যায়ের সহযোগিতা ছিল এই গুম-নির্যাতনের ঘটনায়।
এ প্রসঙ্গে ব্যারিষ্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, দক্ষিণ আমেরিকার সত্য-কমিশনের মতো বাংলাদেশেও গণশুনানি করে এই ভয়াবহতা সরাসরি জনগণ ও বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে হবে। প্রয়োজন নাটক, সিনেমা, ডকুমেন্টারি নির্মাণ, যাতে সারা বিশ্ব বোঝে গত ১৬ বছরে বাংলাদেশে কী ঘটেছে এবং কেন মানুষ আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করতে চায়।
তারা দাবি জানান, কমিশনের রিপোর্ট অবিলম্বে বিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার ও গণশুনানির মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে, যেন দেশের মানুষ সত্য জানতে পারে এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়।
আঁখি