
ছবি: সংগৃহীত
ইরান থেকে দ্রুতগতিতে আফগানদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে গত এক মাসেই ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি আফগান, যার মধ্যে হাজার হাজার নারীও রয়েছেন, জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হয়েছে। ইরান সরকার বেঁধে দিয়েছিল নির্দিষ্ট সময়সীমা, তার আগেই শুরু হয়েছে গণ-নির্বাসন।
এই নারীদের অনেকেই বলছেন, তারা এখন চরম অসহায় অবস্থায় রয়েছেন। আফগানিস্তানে তালেবানের কঠোর শাসনে নারীদের মুখ ঢেকে রাখা, জনসমক্ষে কথা বলা বা উপস্থিত থাকা নিষিদ্ধ। চাকরি, শিক্ষা—সবকিছুই তাদের জন্য নিষিদ্ধ। এই নিয়ম ভাঙলে জনসমক্ষে বেত্রাঘাত করা হয়।
সাহার (৪০), পাঁচ সন্তানসহ সীমান্তে দাঁড়িয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন। ইরানে তিনি দশ বছর ধরে ছোট্ট একটি সেলাইয়ের দোকান চালাতেন। সম্প্রতি একটি ঘরের জন্য জমাও দিয়েছিলেন। কিন্তু গত সপ্তাহে তাকে রাতের আঁধারে জোরপূর্বক আটক করে সন্তানসহ ফেরত পাঠানো হয়।
“আমি কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলাম, অন্তত দুদিন সময় দিন জিনিসপত্র গোছানোর জন্য। কিন্তু তারা শুনল না। আমাদের রাতের অন্ধকারে বের করে দিল, যেন আবর্জনা ফেলে দিচ্ছে,” বলেন সাহার।
আগে পুরুষদেরই বেশি ফেরত পাঠানো হতো। কিন্তু এখন নারীদেরও জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হচ্ছে। মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে শুধু একটি সীমান্ত পয়েন্ট থেকেই ১০০’র বেশি একাকী নারী ফেরত পাঠানো হয়েছে।
তালেবানের নিয়ম অনুযায়ী, পুরুষ অভিভাবক ছাড়া নারীরা ভ্রমণ করতে পারেন না। ফলে অনেক নারী সীমান্তে এসে আটকে পড়ছেন।
উচ্চ তাপমাত্রায় (৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস) অনেকে মারা যাচ্ছেন। গত দুই সপ্তাহে কমপক্ষে ১৩টি মরদেহ সীমান্তে পৌঁছেছে।
সীমান্তে পৌঁছানো মানুষরা জানাচ্ছেন, তারা ক্ষুধার্ত, পিপাসার্ত এবং ক্লান্ত। তাদের কাছে প্রায় কিছুই নেই। সাহার বলছেন, “শিরাজ থেকে জাহেদান যাওয়ার পথে আমাদের সব কিছু নিয়ে নিয়েছে। আমার ব্যাংক কার্ডে ছিল ১৫ মিলিয়ন তুমান। এক বোতল পানি কিনতে ৫০ হাজার তুমান, এক টুকরো স্যান্ডউইচের দাম ১ লাখ তুমান! না থাকলে সন্তান না খেয়েই থাকতো।”
তালেবান বলছে, তারা নারীদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয় ও পরিবহন সুবিধা দিচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। অনেক নারী বলছেন, তারা কোনো সহায়তা পাননি। তালেবানের নিয়মে নারীদের জমি, চাকরি বা একা চলাচলের অধিকার নেই।
সাহারের আফগানিস্তানে ফেরার পরিণতি ভয়াবহ। বৃদ্ধা মা ছাড়া তার আর কেউ নেই। নেই ঘর, নেই কাজ, নেই স্বামী। তিনি বলেন, “আমি বলেছিলাম, আমাকে জমি দিন, শুরু করতে চাই। তারা বলল, ‘তুমি নারী, তোমার মাহরাম নেই। তুমি অযোগ্য।’”
অনেক নারী বাধ্য হয়ে আত্মীয়স্বজন বা অপরিচিতদের আশ্রয় নিচ্ছেন। কেউ কেউ সদ্যজাত সন্তান নিয়ে ফিরে এসেও খাবার ও আশ্রয় পাচ্ছেন না।
এক নারী বলেন, “আমার বাচ্চার বয়স মাত্র চার দিন। তবু বলল, ‘তোমার সঙ্গে পুরুষ নেই, তুমি অযোগ্য।’ আমি এখন কোথায় যাব?”
সীমান্তে সাময়িক সাহায্য দিলেও জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থা দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা দিতে পারছে না।
নারীরা আরও বলছেন, ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে সীমান্তে আনার পথে তাদের গালাগাল, ঘুষ দাবি ও অসহনীয় গরমের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
“গাড়ির চালক বলল, তোমাদের জন্য এসি চালিয়ে লাভ কী! আমার সন্তান গরমে কাঁদছিল, আর তারা আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করছিল,” বলেন আরেক নারী জাহরা।
আবির