ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

নিরাপত্তা ও উন্নয়নের নতুন দিগন্ত

১০৩৬ কি. মি. দীর্ঘ ভয়ংকর সুন্দর সীমান্ত সড়ক, যা তৈরিতে প্রাণ দিয়েছে সেনা সদস্য সহ ৭ জন

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ৭ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৯:৪৭, ৭ জুলাই ২০২৫

১০৩৬ কি. মি. দীর্ঘ ভয়ংকর সুন্দর সীমান্ত সড়ক, যা তৈরিতে প্রাণ দিয়েছে সেনা সদস্য সহ ৭ জন

ছবি: সংগৃহীত

দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ পাহাড় আর উঁচু নিচু ঢাল বেয়ে নির্মিত চোখ জুড়ানো আঁকাবাঁকা সীমান্ত সড়ক এখন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এক নতুন মাইলফলক হিসেবে দাঁড়িয়েছে। কক্সবাজারের ঘুমধুম থেকে শুরু করে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ির রামগড় পর্যন্ত ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত ঘেঁষে ১০৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটির নির্মাণ কাজ চলছে পুরোদমে।

সড়কের প্রথম পর্বে ইতোমধ্যে ৩১৭ কিলোমিটার অংশের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। একসময় দুর্গম ও অস্পষ্টভাবে চিহ্নিত এই পাহাড়ি সীমানায় এমন মসৃণ সড়ক নেটওয়ার্ক স্থাপনকে এক অভাবনীয় অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি কেবল একটি সড়ক নয়, এটি একটি দেশের মানচিত্রকে সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করে। আগে যেখানে নিরাপত্তা বেষ্টনী বা পিলার ছিল না, সেখানে এখন এই দৃশ্যমান সড়ক দেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা রাখছে।

এই সড়ক নির্মাণ শুধু দেশের দুর্গম সীমানায় অধিকার প্রতিষ্ঠাই নয়, অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উন্মোচনের পাশাপাশি পাহাড়ের মানুষের জীবনেও এনেছে আমূল পরিবর্তন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, আগে যেখানে বাজারে যাতায়াত করতে তিনদিন লেগে যেত, এখন মাত্র এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে তারা বাজারে গিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাবেচা করতে পারছেন। উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবাতেও ব্যাপক উন্নতি এসেছে; আগে চিকিৎসার অভাবে অনেকের প্রাণ যেত, এখন এক-দুই ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এটি তাদের কাছে যেন এক স্বপ্নের নাম।

সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এই অঞ্চলগুলো এতদিন কেবল মানচিত্রেই দেখা যেত, কিন্তু এখন দৃশ্যমান সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে সেসব স্থানে বিচরণ সম্ভব হচ্ছে, যা দেশের সার্বভৌমত্বের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করেছে।

আগামী ১০ বছরের মধ্যে সড়কের বাকি অংশের কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও, সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী যে তার আগেই এই বিশাল প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। একটি দেশের নিরাপত্তা কতটা সুদৃঢ়, তা অনেকাংশে তার সীমান্ত কতটা সুরক্ষিত তার উপর নির্ভর করে। স্বাধীনতার পর দীর্ঘকাল ধরে যথাযথ নজরদারীর অভাবে দেশের দুর্গম সীমানা অরক্ষিত থাকলেও, এই নির্মাণাধীন সীমান্ত সড়ক এখন বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার এক বড় হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।

তথ্যসূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=AngYa5nU92U

সাব্বির

×