ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

আড্ডা যেখানে, গল্প সেখানে

মোঃ নাহিদ সায়াদাত ফুয়াদ

প্রকাশিত: ০১:০৮, ৭ জুলাই ২০২৫

আড্ডা যেখানে, গল্প সেখানে

ছবি: জনকণ্ঠ

দেখতে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের পাঠ চুকিয়ে ফেলার সময় এসে গেছে। ক্লাসরুমের বাইরেও যে আরেকটা জীবন ছিল। সেই জীবনের নাম ‘মেস জীবন’। ক্যাম্পাসের গণ্ডি পেরিয়ে যেখানে গড়ে ওঠে অকৃত্রিম বন্ধুত্ব, অন্তরঙ্গ ভ্রাতৃত্ববোধ আর সারল্যে ভরা গল্পের অজস্র রাত।

একসঙ্গে ক্লাস করা কিংবা দল বেঁধে ক্যাম্পাসে ঘোরা, সন্ধ্যার পরে ছাদে বসে চলতে থাকা আড্ডা। সব মিলিয়ে এক অপূর্ব অধ্যায়। যে অধ্যায়ের পাতায় পাতায় লেখা থাকে অমলিন স্মৃতি। সময় হয়তো থেমে যায় না, কিন্তু এই বন্ধনগুলো সময়কে থামিয়ে দিতে পারে। হারিয়ে যাওয়া সময়ের আফসোস যতটা, তার চেয়েও অনেক বেশি রয়ে যায় না-বলা ভালোবাসার অনুভব। যা আজও অটুট, আজও সমান প্রগাঢ়।

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনের এক অনন্য অংশ মেস জীবন। পড়াশোনার বাইরে এখানেই গড়ে ওঠে সহানুভূতির এক পরিপূর্ণ জগত, যেখানে সিনিয়র-জুনিয়রের সম্পর্ক কেবল শ্রেণিগত নয়। বরং এক উষ্ণ হৃদ্যতার বন্ধন।

“আমরা একটা পরিবার” এই বাক্যটি বারবার মনে করিয়ে দেয় বার্ষিক আয়োজনগুলোকে। এবছরের মতো এবারও আয়োজন করা হয়েছিল আমাদের মেসের বার্ষিক অনুষ্ঠান। শুরুটা হয়েছিল একেবারে সকালবেলার ব্যস্ততায়।

সকালের ঘুম ভাঙিয়ে দেন পারভেজ ভাই। “তাড়াতাড়ি উঠো, বাজারে যেতে হবে।” রাইসুল, নিউটন ভাই আর আমি হন্তদন্তভাবে রেডি হই। বাজার করি গভীর রাত পর্যন্ত, সবজিতে ঠাসা ব্যাগ নিয়ে ফিরি মেসে। রাতে কাটাকাটি করে রেখে দেওয়া হয় পরদিনের রান্নার জন্য। যেন এক উৎসবের প্রস্তুতি।

বার্ষিক অনুষ্ঠানে জমে ওঠে ফুটবল ম্যাচ। সিনিয়র বনাম জুনিয়র। মাঠে যেন এক মিনি বিশ্বকাপ! খেলা শুরুর আগে দলগত ছবি, তারপরেই মাঠ কাঁপানো রোমাঞ্চ। কেউ গোল মিস করলে মজা, কেউ গোল করলেই হিরো। শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলে ড্র হলেও স্মৃতির খাতায় এই খেলা জায়গা করে নেয় চিরস্থায়ীভাবে।

রাত নামলেই ছাদ হয়ে ওঠে আমাদের আড্ডার আঙিনা। কেউ রান্নায় ব্যস্ত, কেউ তরকারি কাটাকাটিতে, কেউ হালকা গলায় গান ধরেছে। আর বাকিরা সেই ছন্দে তাল মিলিয়ে গল্পে মেতে ওঠে। রাত ১১টায় রান্না শেষে শুরু হয় এক বিশাল ভোজ। হাসি, মজা, গল্প আর পরস্পরের ঠাট্টায় গমগম করতে থাকে পুরো ঘর। এইসব মুহূর্তই বলে দেয়, “এটাই জীবন।”

মেসে কারও সাথে রক্তের সম্পর্ক নেই, তবু ভালোবাসার গভীরতায় এই সম্পর্ক হার মানায় সবকিছুকে। সিনিয়ররা যেন বড় ভাই, যারা শাসন করে ভালোবাসা দিয়ে। এ এক পারিবারিক আবহ। যেখানে কেউ একা নয়, কেউ অপরিচিত নয়। এই বন্ধন, এই ভ্রাতৃত্ববোধ সারাজীবনের সম্বল হয়ে থাকে।

মেস জীবন কেবল কয়েকটা বছর নয়, কেবল চার দেয়ালের ভেতরকার স্মৃতি নয়। এ এক জীবন্ত অধ্যায়, যা হৃদয়ে গাঁথা থেকে যায় আজীবন।

লেখক, মোঃ নাহিদ সায়াদাত ফুয়াদ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, সমাজ বিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগ।

শহীদ

×