
ছবি: সংগৃহীত
বিদেশে পড়াশোনা একটি জীবন বদলে দেওয়া অভিজ্ঞতা হলেও, এর সঙ্গে একটি বড় আবেগগত মূল্যও জড়িত—প্রিয়জনদের ছেড়ে যাওয়া। তরুণ ও একাকী শিক্ষার্থীদের জন্য এটি হয়তো সহনীয়, তবে যাদের পরিবার বা সন্তান রয়েছে, তাদের জন্য দূরত্বের ভাবনা কখনো কখনো বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
সৌভাগ্যক্রমে, কিছু দেশ পারিবারিক সংহতির গুরুত্ব অনুধাবন করে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য এমন সুযোগ তৈরি করেছে যাতে তারা স্বামী/স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে পড়াশোনা করতে পারে। এই ডিপেনডেন্ট ভিসা প্রোগ্রামগুলো শুধুমাত্র পরিবারকে একত্রে রাখার সুযোগ দেয় না, বরং পরিবারের সদস্যদের জন্য কাজ, পড়াশোনা এবং স্বাগতিক দেশের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার পথও উন্মুক্ত করে।
আপনি যদি পরিবার ছাড়া বিদেশে পড়তে যাওয়ার কথা ভাবতেই না পারেন, তাহলে জেনে নিন এমন ছয়টি দেশের নাম যেখানে আপনি পরিবারসহ উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন।
১. অস্ট্রেলিয়া: অস্ট্রেলিয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে নমনীয় ডিপেনডেন্ট ভিসা সুবিধা দেয়। আপনি চাইলে শিক্ষার্থী ভিসা (Subclass 500) আবেদন করার সময় বা পড়াশোনা শুরু করার পরেও স্বামী/স্ত্রী ও সন্তানদের যুক্ত করতে পারেন। সরকার দক্ষ অভিবাসী বেতনসীমা A$70,000-এ উন্নীত করায়, পরিবার নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতের স্থায়ী সুযোগও তৈরি হতে পারে।
২. কানাডা: পরিবারের একতাকে অগ্রাধিকার দেয় কানাডা। বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয় ও বহুসাংস্কৃতিক পরিবেশের পাশাপাশি, কানাডা শিক্ষার্থীদের জন্য স্পাউস ওপেন ওয়ার্ক পারমিট ও সন্তানদের জন্য ডিপেনডেন্ট ভিসার সুযোগ দেয়। স্বামী/স্ত্রী পূর্ণকালীন চাকরির সুযোগ পান, আর সন্তানরা স্কুলে ভর্তি হতে পারে। ২০২৪–২০২৬ সালের ইমিগ্রেশন পরিকল্পনায় ‘ফ্যামিলি রিইউনিফিকেশন’কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যা বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আশাব্যঞ্জক।
৩. জার্মানি: মানসম্মত শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং পরিবার নিয়ে বসবাস সব একসঙ্গে চাইলে জার্মানি হতে পারে আদর্শ। ‘ফ্যামিলি রিইউনিয়ন ভিসা’-র মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সহজেই পরিবার নিয়ে থাকতে পারেন। ইউরোপে বসবাস ও সন্তান বড় করার জন্য এটি অন্যতম সেরা দেশ। যোগ্যতা পূরণ করলে স্বামী/স্ত্রীও পূর্ণকালীন কাজ করতে পারেন। উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং শিক্ষা–সব কিছু মিলিয়ে জার্মানি একটি আকর্ষণীয় পছন্দ।
৪. নিউজিল্যান্ড: প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং পারিবারিক সহায়তা এই তিনে মিলেই গড়ে উঠেছে নিউজিল্যান্ডের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা। Skilled Migrant Category-সহ নানা ভিসা স্কিমে আপনি আপনার জীবনসঙ্গী ও ২৪ বছর বয়স পর্যন্ত সন্তানের সঙ্গে থাকতে, পড়তে বা কাজ করতে পারবেন।
৫. ফিনল্যান্ড: বিশ্বের সুখী ও নিরাপদতম দেশ ফিনল্যান্ড আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবারের সদস্যদেরও স্বাগত জানায়। শিক্ষার্থী হিসেবে পড়াশোনা করতে গেলে, আপনার স্বামী/স্ত্রী ও সন্তানরা রেসিডেন্স পারমিট নিয়ে আপনার সঙ্গে থাকতে পারে। সবচেয়ে বড় সুবিধা—স্বামী/স্ত্রী পূর্ণকালীন চাকরির সুযোগ পান। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা আর প্রকৃতির অপরূপ রূপ উপভোগ করতে করতে আপনি ও আপনার পরিবার একসাথে এগোতে পারবেন।
৬. যুক্তরাজ্য (স্মরণীয় উল্লেখ): এই তালিকার অন্যান্য দেশের মতো নমনীয় না হলেও, যুক্তরাজ্যে পোস্টগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ের (৯ মাসের বেশি সময়ের) কোর্সে পড়তে গেলে পরিবার নিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। স্ত্রী/স্বামী কাজ করতে পারেন, তবে বর্তমান কঠোর ভিসা নীতির কারণে আবেদন করার আগে হালনাগাদ তথ্য জেনে নেওয়া জরুরি। বিদেশে পড়াশোনার মানে এখন আর পরিবারকে পিছনে ফেলে আসা নয়। সঠিক দেশ বেছে নিলে আপনি উচ্চশিক্ষা ও পরিবারের সঙ্গে থাকার আনন্দ—দু’টিই উপভোগ করতে পারেন। অস্ট্রেলিয়ার কর্মসুযোগ, কানাডার মুক্ত পারমিট বা জার্মানির পুনর্মিলন নীতিমালার মতো সুবিধা নিয়ে এই দেশগুলো প্রমাণ করে—বিশ্বমানের শিক্ষা ও পরিবারের উষ্ণতা একসঙ্গে পাওয়া সম্ভব।
শহীদ