
ছবি: সংগৃহীত
অনেকেই জানেন কী কী খাবার না খাওয়া উচিত কোলেস্টেরল কমাতে—ভাজা খাবার নয়, লাল মাংস বাদ, মাখন-ক্রিমযুক্ত পাস্তা এড়িয়ে চলুন। কিন্তু যদি আমরা বরং নজর দিই কী খাওয়া উচিত? বিশেষ করে মাছ। সমুদ্রের এই সুস্বাদু, ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ প্রোটিন হতে পারে আপনার হৃদযন্ত্রের সেরা বন্ধু।
গবেষণায় দেখা গেছে, নির্দিষ্ট কিছু মাছ রয়েছে যেগুলোতে উচ্চমাত্রায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। এই স্বাস্থ্যকর চর্বিগুলো শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য করে, ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ায়। এছাড়াও এসব মাছ ভিটামিন ডি ও লিন প্রোটিনেরও চমৎকার উৎস, যা হৃদস্বাস্থ্য এবং বিপাকক্রিয়াকে উন্নত করে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক চারটি মাছ সম্পর্কে, যেগুলো কেবল সুস্বাদুই নয় বরং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেও কার্যকর—
১. স্যালমন
স্যালমন হলো সবচেয়ে পরিচিত "ফ্যাটি ফিশ"। এতে রয়েছে EPA ও DHA—দুই ধরনের দীর্ঘ শৃঙ্খলের ওমেগা-৩, যেগুলো প্রদাহ কমায়, ট্রাইগ্লিসারাইড হ্রাস করে এবং রক্তনালীগুলোকে নমনীয় রাখতে সাহায্য করে। এটি HDL কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে। স্যালমন সেলেনিয়াম ও অ্যাস্টাক্স্যান্থিন নামক এক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টেও সমৃদ্ধ।
খাওয়ার উপায়: গ্রিল করে, লেমন-গার্লিক দিয়ে বেক করে, সালাদে মিশিয়ে বা স্মোকড স্যালমন হিসেবেও খাওয়া যায়। বেছে নিন বন্য (wild-caught) স্যালমন—এতে ওমেগা-৩ বেশি ও দূষণ কম।
২. ম্যাকারেল
ম্যাকারেল হয়তো রেস্টুরেন্টে কম দেখা যায়, কিন্তু পুষ্টিগুণে অতুলনীয়। এতে রয়েছে প্রচুর ওমেগা-৩ ও মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সহায়ক। এটি ভিটামিন বি১২ ও ডি-এরও ভালো উৎস।
খাওয়ার উপায়: গ্রিল করে বা মশলা দিয়ে প্যান-সিয়ার করে খেতে পারেন। ক্যান করা ম্যাকারেল অ্যাভোকাডোর সাথে টোস্টে মিশিয়েও খাওয়া যায়।
৩. সারডিন
ছোট হলেও সারডিনে গুণের শেষ নেই। এতে রয়েছে ওমেগা-৩, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, প্রোটিন এবং কোএনজাইম কিউ১০, যা হৃদপিণ্ডের পেশিকে শক্তিশালী রাখে। পুরো মাছ খাওয়া যায় বলে এতে বেশি খনিজ পাওয়া যায়।
খাওয়ার উপায়: অলিভ অয়েল ও মরিচ ফ্লেক্স দিয়ে গ্রিল করুন, ক্যান থেকে সরাসরি লেবু দিয়ে ক্র্যাকারসে খেতে পারেন, পাস্তা বা সালাদে মিশিয়ে খেতে পারেন।
৪. রেইনবো ট্রাউট
যারা হালকা স্বাদের মাছ পছন্দ করেন, তাদের জন্য রেইনবো ট্রাউট আদর্শ। এই মাছ সাধারণত নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন ফার্মে চাষ হয়। এতে EPA ও DHA ছাড়াও রয়েছে ভিটামিন B6, ফসফরাস ও পটাশিয়াম, যা হৃদস্বাস্থ্য এবং বিপাকক্রিয়া উন্নত করে।
খাওয়ার উপায়: লেবু, হার্বস ও অলিভ অয়েল দিয়ে বেক করে, স্পাইস রাব দিয়ে গ্রিল করে বা সালাদে মিশিয়ে খেতে পারেন।
মাছ খাওয়ার কিছু নিয়ম
প্রতি সপ্তাহে ২-৩ বার তেলযুক্ত মাছ খাওয়ার চেষ্টা করুন।
ভাজার পরিবর্তে বেক, গ্রিল, স্টিম বা ব্রয়েল করুন।
প্রতি পরিমাণে ৩-৪ আউন্স (আপনার হাতের তালুর মতো) যথেষ্ট।
মাছের সঙ্গে ফাইবারসমৃদ্ধ সবজি, হোল গ্রেইন ও স্বাস্থ্যকর চর্বি খেতে হবে।
বড় মাছে যেমন সোর্ডফিশ, কিং ম্যাকারেল, টাইলফিশে পারদের পরিমাণ বেশি—এগুলো এড়িয়ে চলুন। স্যালমন, সারডিন ও ট্রাউট বেছে নিন।
মাছ পছন্দ না? চিন্তার কিছু নেই
যদি আপনি মাছ খেতে না পারেন বা পছন্দ না করেন, তবে ওমেগা-৩ এর জন্য চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিড, আখরোট এবং অ্যালগি অয়েলের মতো উদ্ভিজ্জ উৎস বেছে নিতে পারেন। যদিও এতে EPA ও DHA কম থাকে, তবু কিছু না খাওয়ার চেয়ে ভালো।
ফিশ অয়েল সাপ্লিমেন্টও একটি বিকল্প, তবে যেকোনো সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, বিশেষ করে যদি আপনি হার্টের ওষুধ খান।
সূত্রঃ Times of india
নোভা