
কুড়িগ্রামের উলিপুরে প্রায় ৩ মাস ধরে মাদ্রাসা মাঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আসছে না। পচা পানির দুর্গন্ধ ও মশার উপদ্রবে তারা অতিষ্ঠ। এমন চিত্র থেতরাই দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, মাদ্রাসার সুপার ওয়াহেদ আলী থেতরাই ইউনিয়নের বিবাহ রেজিস্টার হওয়ায় মাদ্রাসার প্রতি তার উদাসীনতায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিনের এ সমস্যা সমাধানে তার তেমন কোনো উদ্যোগও দেখা যায়নি। ফলে প্রতিষ্ঠানটির দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর পড়াশোনা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
থেতরাই দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোরছালিন বলেন, হাঁটুসমান পচা পানি ভেঙে ক্লাসে যেতে হয়। পচা পানির কারণে চুলকানি হয়। ক্লাসে থাকা যায় না মশার উপদ্রবে। ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাছুমা বেগম বলেন, এমন পচা দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে ভেজা পাজামা পরে ক্লাস করতে হয়। এটা মেয়েদের জন্য খুব কষ্টকর। ক্লাসে গন্ধে থাকা যায় না। তাই মাদ্রাসা যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন তার মা-বাবা।
শিক্ষার্থীর অভিভাবক জোবেদ আলী বলেন, পচা পানির কারণে আমার ছেলের পায়ে ঘা ও চুলকানি হয়েছে। ওষুধ দিলেও ভালো হয় না। এই অবস্থায় আমি কীভাবে আমার সন্তানকে মাদ্রাসায় পাঠাবো? পানি না শুকালে ছেলেমেয়েরা যাওয়া সম্ভব নয়। আমরা খুব চিন্তায় আছি।
স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম রব্বানী বলেন, সুপার স্থানীয়দের চাকরি না দিয়ে তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী নিলুফা আক্তারকে আয়া পদে চাকরি দেওয়ায় স্থানীয়দের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে সুপার পানি নিষ্কাশন বন্ধ করে দেন।
নূর হোসেন বলেন, আগে মাঠের পানি মাদ্রাসার পশ্চিম দিক দিয়ে যেত। কিন্তু মাদ্রাসার বাউন্ডারি ওয়াল দেওয়ায় এখন তা যাচ্ছে না। পরে কমিটির সদস্য ও সুপার আমার পুকুর দিয়ে পানি বের করার কথা বলেন, আমি সম্মতি দিই। কিন্তু পচা পানি আসায় আমার পুকুরের অনেক মাছ মরে যায়। এজন্য আমি আর পানি যাওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছি। ইউএনও আমাকে ডেকেছিলেন, তাকেও বিষয়টি বুঝিয়ে বলেছি।
মাদ্রাসার সুপার ওয়াহেদ আলী বলেন, বিষয়টি মাদ্রাসার সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। তিনি উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করিয়েছেন। পরে নূর হোসেনকে তার পুকুর দিয়ে পানি নিষ্কাশনের অনুরোধ জানানো হলেও তিনি রাজি হননি। এ অবস্থায় শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সামর্থ্য নেই মাঠে মাটি ফেলে ভরাট করার। সভাপতিকে বিষয়টি জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো. আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। বিষয়টি জানতাম না। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে থেতরাই দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার সাহা বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে উভয় পক্ষকে ডেকে সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু নূর হোসেন রাজি হননি। তবে আমি সুপারকে বলেছি, দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেবো। তিনি স্থানীয়ভাবে মাঠ ভরাটের ব্যবস্থা করবেন।
সানজানা