ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

প্রাকৃতিক ৬ চিকিৎসক: রোগ নয়, সুস্থতাই হোক অভ্যাস

বদরুল ইসলাম, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, বরগুনা

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ৭ জুলাই ২০২৫

প্রাকৃতিক ৬ চিকিৎসক: রোগ নয়, সুস্থতাই হোক অভ্যাস

ছবি: সংগৃহীত

প্রকৃতির ছয় আশ্চর্য চিকিৎসক আমাদের পাশে রয়েছেন প্রতিনিয়ত, শুধু তাদের গুরুত্ব বোঝার প্রয়োজন।

আজকের আধুনিক জীবনযাত্রা আমাদের স্বাভাবিক স্বাস্থ্যচক্রকে ব্যাহত করছে। প্যাকেটজাত খাবার, অনিয়মিত ঘুম, মানসিক চাপ এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা আমাদের অসুস্থতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অথচ আমাদের চারপাশেই রয়েছে এমন ছয়জন ‘প্রাকৃতিক ডাক্তার’, যাদের প্রতিদিন সঠিকভাবে অনুসরণ করলেই শরীর ও মন দুটোই থাকবে সুস্থ ও সতেজ।

চলুন জেনে নিই এই ছয় প্রাকৃতিক চিকিৎসক এবং কীভাবে তাদের জীবনযাপনে সঠিকভাবে গ্রহণ করা যায়—

১. সূর্য আলো
সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-এর প্রাকৃতিক উৎস। এই ভিটামিন শরীরের হাড় শক্ত রাখতে সাহায্য করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

সঠিক পদ্ধতি:

  • সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে অন্তত ১৫-৩০ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকা ভালো।
  • সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে এলে উপকার বেশি।
  • দুপুরের তীব্র রোদ এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।

২. পর্যাপ্ত ঘুম
ঘুম হচ্ছে শরীরের মেরামতির সময়। পর্যাপ্ত ও গভীর ঘুম মানসিক চাপ কমায়, স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এবং হরমোন ভারসাম্য বজায় রাখে।

সঠিক পদ্ধতি:

  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও জাগার অভ্যাস করুন।
  • রাতে ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।
  • ঘুমানোর আগে মোবাইল স্ক্রিন ও চা-কফি এড়িয়ে চলুন।

৩. বিশুদ্ধ পানি
পানি শরীরের টক্সিন দূর করে, হজমে সাহায্য করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল রাখে।

সঠিক পদ্ধতি:

  • দৈনিক কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
  • সকালে খালি পেটে এক গ্লাস কুসুম গরম পানি পান করুন।
  • খাবারের ৩০ মিনিট আগে ও পরে পানি পান করা ভালো।

সঠিক খাদ্যাভ্যাসই সুস্থতার মূল চাবিকাঠি। প্রাকৃতিক ও অপ্রক্রিয়াজাত খাবার আমাদের শরীরকে দেয় প্রয়োজনীয় পুষ্টি।

সঠিক পদ্ধতি:

  • মৌসুমি ফল ও সবজি নিয়মিত খান।
  • অতিরিক্ত তেল, চিনি, লবণ এড়িয়ে চলুন।
  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার গ্রহণ করুন।

৫. ব্যায়াম বা চলাফেরা
নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম দেহে শক্তি বৃদ্ধি করে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।

সঠিক পদ্ধতি:

  • প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করুন।
  • ঘরে বসেও স্ট্রেচিং বা যোগব্যায়াম করা যায়।
  • কাজের ফাঁকে ফাঁকে উঠুন, কিছুক্ষণ হাঁটুন।

৬. পর্যাপ্ত বাতাস বা নিঃশ্বাস
বিশুদ্ধ বাতাস শরীর ও মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ করে, যা মনকে প্রশান্ত রাখে ও মনোযোগ বাড়ায়।

সঠিক পদ্ধতি:

  • প্রতিদিন ভোরে বা সন্ধ্যায় কিছুক্ষণ খোলা জায়গায় সময় কাটান।
  • ধ্যান ও শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম অনুশীলন করুন।
  • দূষিত জায়গা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন।

চিকিৎসকের পরামর্শ
ডা. সালমা ইয়াসমিন শাম্মি নামের একজন চিকিৎসক বলেন, “বর্তমানে আমরা নানা ধরনের অসুস্থতার শিকার হচ্ছি, যার বেশিরভাগই জীবনযাত্রাজনিত বা লাইফস্টাইল ডিজিজ। অথচ আমরা যদি প্রতিদিনের জীবনে কিছু সহজ অথচ কার্যকর অভ্যাস গড়ে তুলি—যেমন: পর্যাপ্ত ঘুম, বিশুদ্ধ পানি পান, ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাদ্য, খোলা হাওয়ায় সময় কাটানো এবং সূর্যের আলো গ্রহণ—তাহলেই আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই অনেকটা বেড়ে যায়।

এগুলোকে আমরা ‘প্রাকৃতিক ডাক্তার’ বলি, কারণ এগুলো কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে।

বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও ডায়াবেটিস/উচ্চ রক্তচাপ/হৃদরোগ আক্রান্ত রোগীদের জন্য এগুলো অত্যন্ত উপকারী।

চিকিৎসা শুধু ওষুধ নির্ভর নয়—সুস্থ জীবনযাপনই সবচেয়ে বড় ও স্থায়ী চিকিৎসা। তাই রোগ প্রতিরোধে এই ছয় প্রাকৃতিক ডাক্তারকে প্রতিদিনের জীবনে গুরুত্ব দিন।”

ওষুধ নয়, সচেতনতা ও অভ্যাসই প্রকৃত চিকিৎসক
প্রাকৃতিক এই ছয় ডাক্তার আমাদের প্রতিদিনের জীবনে নিয়মিতভাবে নিয়ে আসলে শরীর, মন, আত্মা—তিনটি দিকেই আসবে ভারসাম্য ও সুস্থতা।
আমাদের উচিত প্রকৃতির এই উপহারগুলোকে অবহেলা না করে ভালোভাবে গ্রহণ করা, তবেই ‘রোগ নয়, সুস্থতাই হবে অভ্যাস’।

মুমু ২

×