ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

লিভারের যত্নে বেশি কিছু নয়, ছোট ছোট ৭টি অভ্যাসই যথেষ্ট!

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৭:৪০, ৭ জুলাই ২০২৫

লিভারের যত্নে বেশি কিছু নয়, ছোট ছোট ৭টি অভ্যাসই যথেষ্ট!

ছবি: সংগৃহীত

প্রতিদিন সকালটা কেমন কাটছে, তা কেবল আপনার মেজাজ নয়, শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ—লিভার—এর উপরও গভীর প্রভাব ফেলছে। আপনি যদি ভাবেন সকালে এক কাপ চা আর একটু অলসতা ক্ষতি করে না, তাহলে আপনার লিভার হয়তো চুপচাপ সে ক্ষতির বোঝা বইছে।

লিভার এমন এক অঙ্গ, যা শরীর থেকে টক্সিন বের করে, চর্বি ও শর্করা মেটাবলাইজ করে, ওষুধ ভাঙে, হরমোন ব্যালেন্স করে. অর্থাৎ আপনাকে সুস্থ রাখার নীরব কারিগর। কিন্তু আপনার কিছু সাধারণ সকালবেলার অভ্যাস তাকে বিপদে ফেলছে প্রতিদিন।

১. সকালের খাবার না খাওয়া
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং যতই জনপ্রিয় হোক না কেন, সকালের খাবার বাদ দিলে লিভার পড়ে বিপাকে। কারণ রাতে না খেয়ে থাকার পর লিভারকে কাজ করতে হয় গ্লুকোজ সরবরাহে। এতে কর্টিসল বেড়ে যায়, যা লিভারের উপর বাড়তি চাপ তৈরি করে।

সমাধান
ক্ষুধা না থাকলেও একগ্লাস গরম পানি, একটি সেদ্ধ ডিম বা কিছু ভেজানো বাদাম খেতে পারেন। এতে লিভার সক্রিয় হয় ধীরে ও স্বাস্থ্যকরভাবে।

২. চিনি দিয়ে ভরা ব্রেকফাস্ট
সিরিয়াল, জ্যাম-টোস্ট, মাফিন বা এমনকি “হেলদি” গ্র্যানোলা বারে থাকে উচ্চমাত্রায় ফ্রুক্টোজ, যা সরাসরি লিভারে জমে চর্বি তৈরি করে। এতে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ হতে পারে।

সমাধান
ওটস, ডিম-সবজি, গ্রিক দই বা মুগ ডালের চিলা খেতে পারেন, যা ফাইবার সমৃদ্ধ ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৩. খালি পেটে সাপ্লিমেন্ট বা ওষুধ খাওয়া
ভিটামিন A, D, E, K বা হারবাল সাপ্লিমেন্ট খালি পেটে নিলে লিভারের ডিটক্স সিস্টেমে চাপ পড়ে।

সমাধান
প্রতিটি সাপ্লিমেন্টের লেবেল পড়ুন। প্রয়োজনে খাবারের পরেই খান এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অপ্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্ট খাবেন না।

৪. সকালে শারীরিক পরিশ্রম না করা
ঘুম থেকে উঠে সোশ্যাল মিডিয়ায় ৪৫ মিনিট কাটানো লিভারের পক্ষে ক্ষতিকর। মৃদু শারীরিক কার্যকলাপ লিম্ফ প্রবাহ বাড়ায় ও লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।

সমাধান
১০ মিনিট হাঁটা, স্ট্রেচিং বা হালকা যোগব্যায়াম করলেই চলবে।

৫. অতিরিক্ত ডিটক্স ড্রিংকস খাওয়া

আজকাল ডিটক্স শব্দটি যেন আমাদের সকালের রুটিনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ পান করছেন লেবু, মধু, হলুদ, রসুনের মিশ্রণ, কেউ আবার তার সঙ্গে যোগ করছেন অ্যাপেল সিডার ভিনেগার, কালো মরিচ, চিয়া সিড, এমনকি মেথিও! উদ্দেশ্য একটাই—দেহকে ডিটক্সিফাই করা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সত্যিই কি এই সমস্ত উপাদান একসাথে খেয়ে লিভারের উপকার হচ্ছে, নাকি অজান্তেই চাপ বাড়ছে শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফিল্টারিং অঙ্গটিতে?

লিভার আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক ডিটক্স ইঞ্জিন। অতিরিক্ত কোনো কেমিক্যাল মিশ্রণ, এমনকি প্রাকৃতিক উপাদান হলেও, লিভারকে প্রতিদিন নতুন উপাদান ভেঙে প্রক্রিয়াজাত করতে হয়। আপনি যদি প্রতিদিন সকালে নানা কিছু মিশিয়ে “ডিটক্স ড্রিংকস” পান করেন, তবে তা দীর্ঘমেয়াদে লিভারের উপরে অতিরিক্ত কাজের চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

সমাধান

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সকালের এমন 'এক্সপেরিমেন্ট' শরীরে অমিল তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে খালি পেটে ভিনেগার, রসুন বা অতিরিক্ত হলুদ হজমতন্ত্র ও লিভারের উপর ঝুঁকি বাড়ায়। এর ফলে অ্যাসিডিটি, গ্যাস্ট্রিক এমনকি লিভারের কার্যকারিতায় বিঘ্ন ঘটতে পারে।

৬. রাত জেগে সকাল শুরু করা
রাতে দেরিতে ঘুমানো, ওটিটি দেখার অভ্যাস লিভারের বিশ্রাম ব্যাহত করে। ঘুমের অভাব রক্তে কর্টিসল ও ব্লাড সুগার বাড়ায়, যা লিভারের ক্ষতি করে।

সমাধান
রাত ১০:৩০-১১টার মধ্যে ঘুমাতে যান এবং রাতের খাবারও হালকা রাখুন।

৭. স্ট্রেস দিয়ে দিন শুরু করা
সকালে ইমেইল, ওয়ার্ক চ্যাট বা নেতিবাচক চিন্তা দিয়ে দিন শুরু করলে কর্টিসল বেড়ে যায়, যা লিভারের সুস্থতা নষ্ট করে।

সমাধান
সকালে ৫ মিনিট ডিপ ব্রেথিং, ধ্যান বা নিজেকে সময় দিন। এতে মানসিক চাপ কমে ও লিভারের কাজ সহজ হয়।

আপনার লিভারকে সুস্থ রাখতে দামি ডিটক্স প্যাকেজ দরকার নেই। নিয়মিত পানি পান, ভালো ঘুম, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ও হালকা এক্সারসাইজই যথেষ্ট।

মুমু ২

×