
২০২৫ সাল। পৃথিবী অনেকটাই আগের জায়গা পেরিয়ে এসেছে, কিন্তু কোভিড-১৯ এখনও তার অনিশ্চিত রূপে আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে। যখনই মনে হয় এটি হয়তো অতীত হয়ে গেছে, তখনই আরেকটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট উদ্ভব ঘটায় আরও সংক্রামক, আরও জটিল, এবং শনাক্ত করাও কঠিন। ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আবারও কোভিড সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে, যার পেছনে রয়েছে ওমিক্রনের একটি নতুন সাব-লাইনেজ। যদিও এর উপসর্গ তুলনামূলকভাবে মৃদু, কিন্তু পরিস্থিতি হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।
আপনি বা আপনার পরিবারে কেউ অসুস্থবোধ করলে, নতুন এই কোভিড ভ্যারিয়েন্টের উপসর্গ, পরীক্ষার পদ্ধতি, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধমূলক করণীয় সম্পর্কে জানা থাকলে আপনি থাকবেন এক ধাপ এগিয়ে। নিচে থাকছে বিস্তারিত নির্দেশিকা।
নতুন কোভিড ভ্যারিয়েন্ট (২০২৫)-এর সাধারণ উপসর্গ
এই ভ্যারিয়েন্টের লক্ষণগুলো সাধারণত মৃদু হলেও মৌসুমী ফ্লু বা অ্যালার্জির সঙ্গে মিল থাকার কারণে অনায়াসে বিভ্রান্তি হতে পারে। সতর্ক থাকার জন্য লক্ষ্য করুন এসব উপসর্গ:
হালকা জ্বর বা শীত,গলা ব্যথা বা অস্বস্তি,নাক বন্ধ বা সর্দি,শুকনো কাশি, যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে,ক্লান্তি ও হালকা মাথাব্যথা,বমিভাব, ক্ষুধামন্দা বা ডায়রিয়া,শরীরে ব্যথা, বিশেষ করে পেশিতে।
২০২৫ সালের কোভিড শনাক্তকরণ পদ্ধতি
উপসর্গ মৃদু হলেও দ্রুত পরীক্ষা সংক্রমণ ছড়ানো রোধে এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
১. র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট (RAT):
দ্রুত স্ক্রিনিংয়ের জন্য উপযোগী। ফলাফল পজিটিভ হলে নিশ্চিত ধরা হয়। তবে নেগেটিভ ফলাফল পাওয়ার পরও উপসর্গ থাকলে অবশ্যই PCR করাতে হবে।
২. আরটি-পিসিআর টেস্ট:
কোভিড শনাক্তে এখনও সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি। উপসর্গযুক্ত বা ঝুঁকিপূর্ণদের জন্য বিশেষভাবে কার্যকর।
৩. মাল্টিপ্লেক্স পিসিআর টেস্ট (COVID + Flu):
কোভিড, ইনফ্লুয়েঞ্জা বা অন্য কোনো শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ আছে কি না, তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।
পরামর্শ:
র্যাপিড টেস্টে নেগেটিভ এলেও উপসর্গ থাকলে পিসিআর করে নিশ্চিত হন।
যাদের জন্য জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা
অধিকাংশ মানুষ বাড়িতেই সেরে ওঠেন। তবে কিছু শ্রেণির মানুষের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিতে পারে:
ষাটোর্ধ্ব বয়স্ক,ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ফুসফুস বা কিডনি রোগে আক্রান্ত,ইমিউন-কমপ্রোমাইজড (এইচআইভি, ক্যানসার, অঙ্গ প্রতিস্থাপনকারীরা),গর্ভবতী নারী ও শিশু,যারা এখনও টিকা নেননি।এছাড়া ‘লং কোভিড’ এখনও একটি বড় উদ্বেগ। সেরে ওঠার পরও অনেকে ব্রেইন ফগ, শ্বাসকষ্ট, দুর্বলতা বা হজমজনিত সমস্যায় ভুগছেন।
চিকিৎসা ও করণীয়
মৃদু থেকে মাঝারি সংক্রমণের জন্য (বাড়িতে থাকলে):,পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পানি পান,জ্বর বা ব্যথার জন্য ওষুধ,গলা ও নাকের জন্য স্টিম ইনহেলেশন,অক্সিজেন লেভেল মনিটরের জন্য পালস অক্সিমিটার ব্যবহার।
যেসব লক্ষণ দেখা দিলে হাসপাতালে যেতে হবে:
টানা তিন দিন ১০২°F বা তার বেশি জ্বর,শ্বাস নিতে কষ্ট বা বুক চেপে ধরা,অক্সিজেন লেভেল ৯৪ শতাংশের নিচে,পুরোনো রোগের অবনতি।
ভ্যাকসিনই এখনও সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরক্ষা।ওমিক্রন-ভিত্তিক বুস্টারসহ আপডেটেড ডোজ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।সতর্ক থাকার জন্য জীবনধারায় পরিবর্তন আনুন।সাইট্রাস ফল, আদা, রসুন, হলুদ ইত্যাদি ইমিউন-বুস্টিং খাবার খান,হালকা ব্যায়াম, হাঁটা বা ইয়োগা অভ্যাস করুন,পর্যাপ্ত ঘুম (৭–৮ ঘণ্টা) নিন,মানসিক চাপ এড়াতে মেডিটেশন বা ডিপ ব্রিথিং করুন,ভার্চুয়ালি বন্ধু-পরিবারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকুন।
প্রতিরোধই সবচেয়ে বড় প্রতিকার।ঘন ঘন হাত ধোয়া,ভিড় বা বদ্ধ জায়গায় মাস্ক পরা।ঘরের জানালা খুলে রাখুন, পর্যাপ্ত বায়ুচলাচল নিশ্চিত করুন.অসুস্থ হলে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন।
নিয়মিত টিকা ও বুস্টার নেওয়া,পজিটিভ হলে নিজেকে আইসোলেট করুন।
২০২৫ সালের নতুন কোভিড ভ্যারিয়েন্ট আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, ভাইরাস রূপ বদলাচ্ছে আমাদেরও সচেতনতা বাড়াতে হবে। সময়মতো পরীক্ষা, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও টিকা গ্রহণের মাধ্যমে এই ভাইরাসের প্রভাব কমিয়ে আনা সম্ভব। নিজের ও অন্যের সুরক্ষার জন্য সর্বদা সচেতন থাকুন, লক্ষণগুলো অবহেলা করবেন না।
সূত্র:https://tinyurl.com/bdd4syr3
আফরোজা