ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

রিজিক বৃদ্ধির সহজ আমল: বিশ্বনবী (সা.) প্রদর্শিত ৩ উপায়

প্রকাশিত: ০৮:১৩, ১০ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৮:১৪, ১০ জুলাই ২০২৫

রিজিক বৃদ্ধির সহজ আমল: বিশ্বনবী (সা.) প্রদর্শিত ৩ উপায়

সংগৃহীত প্রতীকী ছবি

মানুষের পার্থিব জীবনের এক অবিরাম উদ্বেগের নাম হলো রিজিক বা জীবিকা। কেউ অধিক উপার্জনের পথ খোঁজেন, আবার কেউ দারিদ্র্য কাটানোর দোয়ার সন্ধানে থাকেন। অথচ ইসলামে এমন কিছু সহজ আমল রয়েছে, যা নিয়মিত পালনের মাধ্যমে আল্লাহ রিজিকের দরজা খুলে দেন। বিশ্বনবী (সা.) এই তিনটি আমলের সুস্পষ্ট গ্যারান্টি দিয়েছেন।

চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আমল:

১. ‘লা হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ বেশি বেশি পাঠ করা

এই যিকিরটি জান্নাতের ধনভাণ্ডার এবং এটি ব্যক্তির দারিদ্র্য নাশকারী। রাসুল (সা.) বলেছেন,

 “لا حول ولا قوة إلا بالله” “লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ জান্নাতের কোষাগারের একটি ধনভাণ্ডার।” (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪২০৫)

আরেক হাদিসে আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) তাকে বলেছেন, “তুমি ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বেশি বেশি বল। কেননা তা জান্নাতের রত্নভাণ্ডারের অন্তর্ভুক্ত।” (তিরমিজি, হাদিস: ৩৬০১)

হাদিসের বাকি অংশে আরও বিবৃত হয়েছে যে, যদি কেউ সম্পূর্ণ বাক্য ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ ওয়ালা মানজায়া মিনাল্লাহি ইল্লা ইলাইহি’ পাঠ করে, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার সত্তর প্রকারের বিপদ দূর করেন এবং এগুলোর মাঝে সবচেয়ে ক্ষুদ্র বিপদ হলো দরিদ্রতা। তাই প্রত্যুষে সূর্য ওঠার আগেই অন্তত ১০০ বার এই যিকির পাঠ করলে আত্মা শুদ্ধ হয়, মন প্রশান্ত হয় এবং আধ্যাত্মিক এক আলোয় দিন শুরু হয়, যা রিজিক বৃদ্ধির উপযুক্ত ভূমি প্রস্তুত করে।

২. ফজরের দুই রাকাআত সুন্নাত নিয়মিত আদায় করা

ফজরের দুই রাকাআত সুন্নাত নামাজের মূল্য পুরো দুনিয়ার চেয়েও বেশি। আম্মাজান আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, “ফজরের দুই রাকাআত (সুন্নাত) নামাজ দুনিয়া ও তাতে যা কিছু আছে তার চেয়েও উত্তম।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস ৭২৫)

এই নামাজ কেবল একটি ইবাদতই নয়, বরং এটি এক অফুরন্ত বরকতের উৎস। ফজরের সুন্নাত আদায়ের পর কিছু সময় যিকির, কোরআন তিলাওয়াত ও ইস্তিগফারে লিপ্ত থাকা রিজিক বাড়ানোর অন্যতম কার্যকর উপায়।

৩. নিয়মিত ও সামর্থ্য অনুযায়ী সদকা করা

সদকা (দান) হলো অদৃশ্য এক অ্যান্টিবায়োটিক যা রিজিক বৃদ্ধি করে, যদিও এর পরিমাণ কম হয়। মহান আল্লাহ বলেন: ‘আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিয্কদাতা।’ (সুরা সাবা, আয়াত : ৩৯)

মহানবী (সা.) বলেছেন: ‘সদকা কখনো ধন কমায় না।’ (সহীহ মুসলিম: ২৫৮৮) একটি খেজুরও যদি আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা হয়, তাতেও আল্লাহ সন্তুষ্ট হন এবং বহুগুণে রিজিক ফিরিয়ে দেন। তাই প্রতিদিন সামর্থ্য অনুযায়ী সদকা করা একজন মুসলিমের নিয়মিত অভ্যাস হওয়া উচিত।

আজকের অর্থনির্ভর ও উদ্বেগপূর্ণ জীবনে এই তিনটি আমল হতে পারে এক স্বস্তির জানালা। এগুলো শুধু রিজিক বাড়ায় না, বরং অন্তরের অস্থিরতা দূর করে এবং আখিরাতের জন্যও সঞ্চয় হয়ে থাকে। তাই আসুন, রাসুল (সা.)-এর শেখানো এ সুন্নাত আমলগুলো আস্থা ও বরকতের প্রত্যয়ে নিজেদের জীবনে আত্মস্থ করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন।

সাব্বির

×