
ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ
কাউনিয়ার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত এক সময়ের খরস্রোতা মানাস নদী আজ বর্ষা মৌসুমেও প্রায় পানি শূন্য হয়ে মিলছে না দেশী প্রজাতির মাছ। এই নদীর সীমানা কতটুকু তা কেউ জানে না। গত বছর লোক দেখান সরকারি ভাবে নদী খনন করা হলেও সেই খনন কোন কাজে আসেনি। নদীতে পানি না থাকায় দেশী মাছ না পওয়ায় বেকার হয়ে পরেছে শতশত মৎস্যজীবী পরিবার।
সরেজমিনে মানাস নদী এলাকা ঘুরে জানা গেছে একটা সময় ছিল যখন এ নদীর বুক চিরে চলতো পাল তোলা ব্যবসায়ীদের বজরা ও ভ্রমণকারীদের সাম্পান নৌকা। আজ সেই নদীতে মাটি ভরাট হয়ে পানি নেই চলছে চাষাবাদ। ভরাট হওয়া মানাস নদীতে কৃষকরা ধান চাষ আর বিভিন্ন স্থানে বানা দিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে নদীর অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছে।
মানাস নদী নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ কুড়িপাড়া গ্রাম থেকে তিস্তা ও আলাইকুড়ি প্রশাখা হিসেবে মানাস নদীর উৎপত্তি হয়ে রংপুরের গঙ্গাচরার লক্ষীটারী গজঘন্টা, মর্নেয়া হয়ে কাউনিয়া উপজেলার সারাই, হারাগাছ, শহীদবাগ, বালাপাড়া, কুর্শা, টেপামধুপুর ইউনিয়ন হয়ে পীরগাছার অন্নদানগর, কান্দি হয়ে গাইবান্ধায় যমুনা নদীতে মিলিত হয়েছে। কাউনিয়ার উপর দিয়ে প্রায় ৩০ কি. মিটার দৈর্ঘ্য এলাকা জুড়ে এ নদীর অবস্থান। সাধু গ্রামের ওসমান জানান, নদীর বুক চিরে আগে বড় বড় পালতোলা নৌকা ও ব্যবসায়ীরা বড় বড় নৌকা নিয়ে আসতো। কালের আবর্তে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন আর নদী পথে কোন নৌকা চলাতো দূরের কথা নদী হয়ে গেছে ফসলের মাঠ। কুর্শা নেংরার বাজার এলাকার মজিবর ডিলার জানান একসময় এই নদীতে শতশত জেলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো।
নদীতে পানি না থাকায় তারা আজ মাছ ধরতে নাপেরে পৈত্রিক পেশা ছেরে জীবন বাঁচার তাগিদে অন্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে। মৎস্যজীবী মনু জানান, নদীর বিভিন্ন স্থানে বানা দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ করে খেতাজাল ও কারেন্ট এবং রিংজাল দিয়ে মা ও পোনা মাছ ধরায় মাছের বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে না। লালমসজিদ এলাকার বাবু হাজি জানান, মানাস নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় কাউনিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে সেই সাথে জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। নানা প্রজাতির দেশী সুস্বাদু মাছ আজ বিলুপ্তের পথে। বিনোদমাঝি গ্রামের মোহসিন আলী জানান নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় অনেক আবেদন নিবেদনের পর খনন করা হলেও সেই খননকৃত মাটি আবার নদীতে পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। মানাস নদীর বড় বড় মাছ এলাকার মানুষের নজর কারতো।
এ নদীর মাছ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে অন্য এলাকায় রফতানি হতো। মুক্ত জলাশয় নদীতে মৌসুমের শুরুতে গত বছর যে পরিমাণ মাছ পাওয়া গেছে চলতি বর্ষা মৌসুমে তা অর্ধেকে নেমে গেছে। বাজারে চাহিদার তুলনায় আমদানি কম থাকায় মাছের দাম আকাশচুম্বী। অনেকে বলছেন বৃষ্টি হলেই মাছ বাজারে আসতে শুরু করবে কিন্তু চলতি মৌসুমে আশানুরূপ বৃষ্টি হলেও বাজারে দেশী মাছ নেই।
মৎস্য কর্মকর্তা ফরজানা আক্তর জানান মানাস নদীর বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পানির অভাবে দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় না। প্রাকৃতিক পরিবেশ, জীব বৈচিত্র্য ও নদীর অস্তিত্ব রক্ষায় ঐতিহ্যবাহী মানাস নদীটির প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ করে খনন করা হলে নদী তীরবর্তী হাজার হাজার মানুষ সেচ সুবিধা সহ নানা কাজে সুফল পেত।
ফারুক