ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

হত্যা ও সন্ত্রাসের প্রতিবাদে বাকৃবির ছাত্র সংগঠনগুলোর নিন্দা

আ.ন.ম. রিসালাত আলিফ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ২১:২০, ১২ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২১:৩১, ১২ জুলাই ২০২৫

হত্যা ও সন্ত্রাসের প্রতিবাদে বাকৃবির ছাত্র সংগঠনগুলোর নিন্দা

রাজধানীর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় ব্যবসায়ী চাঁদ মিয়া ওরফে সোহাগকে প্রকাশ্যে হত্যা, খুলনার দৌলতপুর থানায় যুবদলের এক সাবেক নেতাকে গুলি ও রগ কেটে হত্যা এবং চাঁদপুর সদরে জুমার নামাজ শেষে মসজিদের ভেতরে এক ইমামকে চাপাতি দিয়ে জখম করার ঘটনার প্রতিবাদে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ছাত্র সংগঠনগুলো বিক্ষোভ মিছিল করেছে এবং ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

শনিবার (১২ জুলাই) ওই সকল ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আলাদা আলাদাভাবে বিক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বাকৃবি শাখা, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বাকৃবি শাখা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাকৃবি শাখা এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বাকৃবি শাখার সদস্যরা।

দিবাগত রাত ১.৩০ মিনিটে ঢাকার মিটফোর্ডে নৃশংস ওই হত্যার ঘটনা ও খুলনায় যুবদল নেতাকে রগকেটে হত্যার ঘটনাসহ দেশের চলমান সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতির প্রতিবাদে এবং জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বাকৃবি শাখা। বিক্ষোভ সমাবেশটির নেতৃত্ব দেন বাকৃবি শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মো. শফিকুল ইসলাম শফিক।

সদস্য সচিব মো. শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, প্রতিটি হত্যাই বেদনাদায়ক। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডতেই স্বজন হারানোর ঘটনা ঘটে। আমরা শুধু বিক্ষোভ করে দোষীদের বিচার চাইতে পারি কিন্তু যার স্বজন হারায় সেই বুঝে বিষয়টি কতটা বেদনার। আমরা চাই না দেশে আর কোনো হত্যাকান্ড ঘটুক। প্রতিটি ঘটনাতেই দোষীদের উপযুক্ত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। চকবাজারের খুনের ঘটনায় দায়ী প্রত্যেককে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। রাজনৈতিক পরিচয় থাকলেও অপরাধ করে কারো পার পাওয়ার সুযোগ নাই। খুনি সন্ত্রাসীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য তদন্ত ও সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোনো গাফেলতি করা যাবে না। খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। ভিকটিম পরিবারকে আইনি সহযোগিতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও দাবি জানাচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অপরাধ দমনে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। 

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বাকৃবি শাখার নেতৃবৃন্দরা এক পৃথক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চাঁদা না দেওয়ায় ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় নিন্দা ও বিচার দাবি জানিয়েছে। 

সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ বলেছেন, "জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে সারাদেশে একটি দল দখল, লুটপাট, চাঁদাবাজি, হত্যা ও ধর্ষণের মতো নানা অপরাধে লিপ্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা দেড় শতাধিক মানুষকে হত্যার মধ্য দিয়ে একটি সন্ত্রাসী ও খুনিচক্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। এমন জঘন্য ও পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড গত ৯ জুলাই প্রকাশ্যে সংঘটিত হলেও দু-একটি গণমাধ্যম ব্যতীত মূলধারার গণমাধ্যমগুলো এ বিষয়টি নিয়ে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরই তা জনদৃষ্টিতে আসে। এটি গণমাধ্যমের দায়িত্বহীনতা এবং নির্দিষ্ট রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। আমরা ব্যবসায়ী মো. সোহাগের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। এবং এই ঘটনাসহ সারাদেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে শুধু নামমাত্র বহিষ্কারের প্রহসন বন্ধ করে দলকে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত করতে দলীয় কঠোর শৃঙ্খলাবিধি আরোপের আহ্বান জানাচ্ছি।”

এদিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার সোহাগ হত্যার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাকৃবি শাখা। 

সংগঠনটির আহবায়ক আজিজুল হক আজিজ বলেন, পুরান ঢাকায় এক ব্যবসায়ীকে অমানবিক নির্যাতন করে হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ৫ ই আগস্ট পরবর্তী এই ধরনের ঘটনা ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান হিসেবে দেখছি। ৫ই আগস্ট পরবর্তী এই ধরনের ঘটনা আমাদের আরেকটি গণঅভ্যুত্থানের দিকে ঠেলে দিতে বাধ্য করা ছাড়া অন্য কিছু নয়। এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বাকৃবি শাখার সদস্যরা উপরোক্ত তিনটি ঘটনার বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ জানিয়ে বিকেল সাড়ে তিনটায় একটি বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের মুক্তমঞ্চের সামনে ওই বিক্ষোভ সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। 

বিক্ষোভ সমাবেশে সংগঠনটির সভাপতি সঞ্জয় রায় বলেন, "দেশের আইনশৃঙ্খলা ও বিচারব্যবস্থা বর্তমানে নাজুক অবস্থায় উপনীত হয়েছে। গত এক বছরে অসংখ্য খুনের ঘটনা ঘটলেও কোনোটিরই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হয়নি। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও আইন ও বিচারব্যবস্থার সংস্কারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।”

এছাড়া সন্ধ্যায় চাঁদাবাজ, ধর্ষণকারী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলও করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল জব্বারের মোড় বাকৃবির সাধারণ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা।

Jahan

×