ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

মার্কিন কিশোরদের মধ্যে প্রিডায়াবেটিস বাড়ছে কেন?

প্রকাশিত: ০১:৫৫, ১৩ জুলাই ২০২৫

মার্কিন কিশোরদের মধ্যে প্রিডায়াবেটিস বাড়ছে কেন?

ছবি: সংগৃহীত।

সম্প্রতি মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (CDC)-এর এক বিশ্লেষণে উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে: ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তিনজন কিশোর-কিশোরীর একজন প্রিডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিল। ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় ৮.৪ মিলিয়ন বা ৮৪ লাখ কিশোরের রক্তে চিনির মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে — যা ২০২০ সালের ১৮ শতাংশ থেকে অনেকটাই বেশি।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এটিকে "সিরিয়াস ওয়েক-আপ কল" বা গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলছেন, প্রিডায়াবেটিস হলো টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের মতো জটিল সমস্যার ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

প্রিডায়াবেটিস এমন একটি অবস্থা যেখানে রক্তে গ্লুকোজ বা চিনির মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, তবে এখনো টাইপ ২ ডায়াবেটিসের পর্যায়ে যায়নি। এটি শরীরের ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার প্রাথমিক ইঙ্গিত। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে বেশিরভাগ প্রিডায়াবেটিস রোগী টাইপ ২ ডায়াবেটিসে রূপান্তরিত হয়। এ অবস্থায় হার্ট, রক্তনালী এবং কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে।

কিশোরদের মধ্যে প্রিডায়াবেটিস সাধারণত স্পষ্ট কোনো লক্ষণ ছাড়াই দেখা দেয়। বেশিরভাগ সময় এটি রুটিন রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়ে। যদিও কিছু ক্ষেত্রে গলায় বা বগলের কাছে গাঢ়, মসৃণ ত্বকের দাগ (acanthosis nigricans) একটি সম্ভাব্য লক্ষণ হতে পারে।

প্রিডায়াবেটিসের ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা (বডি ফ্যাট ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ায়), পরিবারের কারও টাইপ ২ ডায়াবেটিস থাকার ইতিহাস,অতিরিক্ত মিষ্টি পানীয়, জাঙ্ক ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া, দৈহিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামের ঘাটতি।

ভাগ্যক্রমে, প্রিডায়াবেটিস অনেক সময়ই জীবনধারায় পরিবর্তনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধ করা সম্ভব। CDC বলছে, “স্বাস্থ্যকর খাওয়া ও নিয়মিত শরীরচর্চা — এই সাধারণ অভ্যাসগুলোই বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।”

উদাহরণস্বরূপ, শাকসবজি, ফল, আঁশযুক্ত খাবার ও সুষম প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। মিষ্টি পানীয় ও মিষ্টি জাতীয় খাবার কমিয়ে ফেলা জরুরি। হাঁটা, সাইক্লিং বা খেলাধুলার মতো ব্যায়াম করলে শরীর ইনসুলিন ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারে।

কিশোরদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ:
প্রতিদিন অন্তত ৬০ মিনিট শারীরিক কার্যকলাপে অংশ নেওয়া (যেমন: হাঁটা, খেলাধুলা, বাইক চালানো), খাদ্যাভ্যাসে ভাজাপোড়া ও মিষ্টিজাতীয় খাবার বাদ দিয়ে ফল, সবজি, শস্য ও লিন প্রোটিনের উপর জোর দেওয়া, যাদের ওজন বেশি, তাদের ক্ষেত্রে মাত্র ৫–১০% ওজন কমালেই রক্তে চিনির মাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব পড়ে, যেসব কিশোরদের ঝুঁকি রয়েছে, তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি; ১০ বছর বয়স থেকে ওভারওয়েট শিশুদের স্ক্রিনিং শুরু করা যেতে পারে

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়াকে ভবিতব্য হিসেবে মেনে নেওয়ার কিছু নেই। সচেতনতা, নিয়মিত চর্চা ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুললে অনেক কিশোরই স্বাভাবিক রক্তচিনির মাত্রায় ফিরে যেতে পারে এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস এড়াতে সক্ষম হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে হলে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, বলছে CDC।

মিরাজ খান

×