ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

ডিমেনশিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, ছড়াচ্ছে ভয় ও ভ্রান্ত ধারণা

প্রকাশিত: ২২:৩৪, ১২ জুলাই ২০২৫

ডিমেনশিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, ছড়াচ্ছে ভয় ও ভ্রান্ত ধারণা

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রায় ৫.৮ মিলিয়ন মানুষ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত। দেশটিতে গড় আয়ু বাড়তে থাকায় ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১ কোটি ৩৮ লাখে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক হলেও ডিমেনশিয়া নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে নানা ভুল ধারণা এবং ভয় কাজ করে, যা রোগটিকে ঘিরে সামাজিক অপবাদ ও মানসিক চাপ আরও বাড়ায়।

এ প্রসঙ্গে ‘মেডিকেল নিউজ টুডে’ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা ডিমেনশিয়া সম্পর্কে প্রচলিত ১১টি মিথ বা ভুল ধারণা ভেঙে তুলে ধরেছেন।

১. বয়স বাড়লে ডিমেনশিয়া হবেই

এটি সত্য নয়। ডিমেনশিয়া বার্ধক্যের স্বাভাবিক পরিণতি নয়। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রে ৬৫–৭৪ বছর বয়সীদের মাত্র ৩% আলঝাইমারস রোগে আক্রান্ত।

২. ডিমেনশিয়া ও আলঝাইমারস একই রোগ

আসলে, আলঝাইমারস হলো ডিমেনশিয়ার একটি ধরন। ডিমেনশিয়ার অন্যান্য ধরন হলো: ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশিয়া (FTD), ভাসকুলার ডিমেনশিয়া, লুই বডি ডিমেনশিয়া ইত্যাদি।

৩. পরিবারে কেউ আক্রান্ত হলে আমিও হবো

সব ক্ষেত্রে নয়। যদিও কিছু ধরনের ডিমেনশিয়ায় জেনেটিক প্রভাব থাকতে পারে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বয়সই প্রধান ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান।

৪. ডিমেনশিয়া কেবল বৃদ্ধদের হয়

বেশিরভাগ রোগী বয়স্ক হলেও অল্প বয়সে (৩০–৬০ বছর) ডিমেনশিয়ার আগমন একেবারে অসম্ভব নয়। এটিকে বলা হয় ‘আর্লি অনসেট ডিমেনশিয়া’।

৫. অ্যালুমিনিয়াম পাত্রে রান্না করলে আলঝাইমারস হয়

পুরনো গবেষণার কিছু প্রভাব থাকলেও, আজ পর্যন্ত অ্যালুমিনিয়াম পাত্র ব্যবহারের সাথে আলঝাইমারসের সরাসরি কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।

৬. ডিমেনশিয়া মানেই অর্থহীন জীবন

অসংখ্য মানুষ ডিমেনশিয়া নিয়ে সার্থক জীবন যাপন করছেন। রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে কেউ কেউ গাড়ি চালানো বা হাঁটা-চলার মতো কাজ চালিয়ে যেতে পারেন।

৭. স্মৃতিভ্রষ্টতা মানেই ডিমেনশিয়া

স্মৃতি হঠাৎ খারাপ হওয়া মানেই যে ডিমেনশিয়া, তা নয়। মানসিক চাপ, ঘুমের সমস্যা, বা অন্য কিছু কারণেও অস্থায়ী স্মৃতিভ্রষ্টতা হতে পারে।

৮. ডিমেনশিয়া প্রতিরোধযোগ্য

সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য না হলেও, কিছু ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান (যেমন—ধূমপান, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, একাকীত্ব) নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব।

৯. ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট খেলে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ হয়

সাম্প্রতিক গবেষণায় এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে ভিটামিন বা খনিজ সাপ্লিমেন্ট কগনিটিভ ডিক্লাইন বা ডিমেনশিয়া ঠেকাতে পারে।

১০. সব ডিমেনশিয়া রোগী আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন

সব রোগীর ক্ষেত্রে তা হয় না। আগ্রাসী আচরণ দেখা দিতে পারে মানসিক বিভ্রান্তি, শারীরিক যন্ত্রণা কিংবা পরিচর্যাকারীর সাথে খারাপ সম্পর্কের কারণে।

১১. ডিমেনশিয়া মরণব্যাধি নয়

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ডিমেনশিয়া মৃত্যুর অন্যতম কারণ হতে পারে। ২০২০ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৭০–৯৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ১৩.৬% মৃত্যুর পেছনে ডিমেনশিয়া একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে।


বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডিমেনশিয়া নিয়ে ভয় স্বাভাবিক হলেও ভুল ধারণা ও গুজব আমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়। আধুনিক চিকিৎসা ও গবেষণার অগ্রগতির মাধ্যমে ডিমেনশিয়া নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে কার্যকর সমাধান খোঁজার কাজ চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতা ও প্রাথমিক জীবনধারায় পরিবর্তনের মাধ্যমেই এ রোগের প্রভাব কমানো সম্ভব।

Jahan

×