
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে বাদাম অন্তর্ভুক্ত করা স্বাস্থ্যকর একটি পদক্ষেপ হতে পারে বলে জানিয়েছে সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণা। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাদাম ও বাদাম-দুধ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, হৃদ্স্বাস্থ্য রক্ষা, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস দীর্ঘমেয়াদে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে প্রভাব ফেলে। অনেক সময় এটি স্মৃতিভ্রংশ, হৃদরোগ এবং অন্যান্য জটিলতাও ডেকে আনে। গবেষণায় দেখা গেছে, বাদামজাতীয় খাবার—বিশেষ করে আলমন্ড—রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। যদিও সব গবেষণাতেই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়নি, তবে এলডিএল কোলেস্টেরল, হিমোগ্লোবিন A1C ও অন্যান্য ডায়াবেটিস-সংশ্লিষ্ট সূচক হ্রাস পেয়েছে নিয়মিত বাদাম খাওয়ার ফলে।
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ডায়াবেটিস হৃদরোগের অন্যতম প্রধান ঝুঁকি। বাদামে থাকা মনো ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান এলডিএল কমিয়ে এইচডিএল কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে।
ওজন ব্যবস্থাপনাতেও বাদামের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। প্রোটিন, আঁশ এবং স্বাস্থ্যকর চর্বিতে ভরপুর এই বাদাম খেলে দীর্ঘ সময় ক্ষুধা কম অনুভূত হয়। এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যেসব ব্যক্তি ৫০ গ্রাম বা তার বেশি বাদাম প্রতিদিন খান, তাদের শরীরের গঠনে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে।
ম্যাগনেশিয়ামের দিক থেকেও বাদাম গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের ২৩টি বাদামে প্রায় ৭৬.৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম থাকে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। কারণ দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তে শর্করা থাকলে শরীর থেকে অতিরিক্ত ম্যাগনেশিয়াম বেরিয়ে যেতে পারে।
খাদ্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, প্রতিদিন ১ আউন্স (প্রায় ২৩টি বাদাম) গ্রহণই যথেষ্ট। অতিরিক্ত খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, কারণ বাদামে ক্যালরি ও চর্বি বেশি। এছাড়া চিনিযুক্ত বা লবণযুক্ত বাদাম এড়িয়ে চলারও পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
সাধারণ খাবারে বাদাম যোগ করা খুব সহজ। ওটমিল, সালাদ, ফল, সবজি বা স্মুদির সঙ্গে বাদাম খাওয়া যায়। এছাড়াও, আনসুইটেনড বাদাম দুধ সিরিয়াল, চা বা কফিতে ব্যবহার করা যায়। বাদাম মাখনও একটি বিকল্প, তবে সেটিও যেন চিনি ও লবণমুক্ত হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি।
বাদামের পাশাপাশি অন্যান্য উপকারী বাদামের মধ্যে রয়েছে পিনাট, ক্যাশু, পেস্তা ও আখরোট, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ ও উপকারী খাবার হিসেবে বিবেচিত।
বাদাম ও বাদামজাত পণ্যের সঠিক ব্যবহারে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, ওজন ঠিক রাখা ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। তবে প্রতিদিন নির্ধারিত পরিমাণে খাওয়া এবং প্রক্রিয়াজাত বাদাম এড়িয়ে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Jahan