
ছবি: সংগৃহীত
হাসতে পারা মানুষের একটি সহজাত অনুভূতি হলেও, বিশ্বের কিছু মানুষ এই মৌলিক কাজটিও করতে পারেন না। এমনই একটি বিরল রোগের নাম মোবিয়াস সিনড্রোম (Moebius Syndrome)। এটি এমন এক জটিল স্নায়ুবিক সমস্যা, যা মুখের অভিব্যক্তি ও চোখের নড়াচড়ার নিয়ন্ত্রণ করে এমন মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলোকে প্রভাবিত করে।
কতটা বিরল এই রোগ?
এই রোগটি এতটাই বিরল যে, সঠিকভাবে কতজন এতে আক্রান্ত হন, তার নির্ভরযোগ্য হিসাব নেই। ২০২১ সালে ইতালিতে পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী, প্রতি ১ লাখ নবজাতকের মধ্যে মাত্র ০.৩ জন এতে আক্রান্ত হন। আবার নেদারল্যান্ডসে করা ১৯৯৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ১ লাখে ২.১ নবজাতক এই রোগে আক্রান্ত হন। কিছু গবেষণা অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রতি ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ শিশুর মধ্যে মাত্র একজন এতে আক্রান্ত হয়।
এত কম সংখ্যায় ধরা পড়ার পেছনে প্রধান কারণ হলো—মোবিয়াস সিনড্রোম সম্পর্কে অনেক চিকিৎসকেরই সচেতনতার অভাব এবং এ রোগ শনাক্ত করার মানদণ্ড সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়েছে।
কী কারণে হয় মোবিয়াস সিনড্রোম?
এই রোগে প্রধানত দুটি ক্রেনিয়াল নার্ভ–অ্যাবডুসেন্স নার্ভ (CN VI) ও ফেসিয়াল নার্ভ (CN VII)–অনুপস্থিত বা বিকলাঙ্গ থাকে।
এই স্নায়ুগুলো চোখের পাশের দিকের নড়াচড়া, হাসা, চোখ টিপানো, কপাল কুঁচকানো এবং অন্যান্য মুখের অভিব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ করে। কখনো কখনো এই রোগের সঙ্গে আরও কিছু স্নায়ুজনিত সমস্যাও যুক্ত থাকে।
সুনির্দিষ্ট কারণ এখনও অজানা হলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি ‘স্পোরাডিক’ অর্থাৎ বংশগত নয়, এলোমেলোভাবে দেখা যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে পরিবারে একই রোগ দেখা গেছে। বিজ্ঞানীরা PLXND1 ও REV3L নামে কিছু জিনের মিউটেশনকে দায়ী করছেন।
গর্ভাবস্থায় কিছু ওষুধ ও মাদকদ্রব্যের (যেমন অ্যালকোহল, কোকেইন, থ্যালিডোমাইড, মাইগ্রেনের ওষুধ ইরগোটামিন) সংস্পর্শে আসাও এর ঝুঁকি বাড়ায়।
উপসর্গ কী কী?
মোবিয়াস সিনড্রোমে আক্রান্তদের মুখের অন্তত এক পাশে পক্ষাঘাত থাকে, ফলে হাসতে বা চোখ ঘোরাতে পারে না। মুখে কোনো অভিব্যক্তি থাকে না, এমনকি কান্না বা হাসির সময়ও না।
শিশুদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত লালা ঝরা, চোখে তাকাতে পুরো মাথা ঘোরানো, খাওয়ার সময় অসুবিধা, ছোট চোয়াল বা জিভ, কানে শ্রবণ সমস্যাও দেখা দিতে পারে। অনেকের আঙুল বা পা ভিন্ন গঠনের হয়। কিছু ক্ষেত্রে মোটর স্কিল ডেভেলপমেন্টে বিলম্ব ঘটে, তবে পরে তা স্বাভাবিক হয়ে যায়।
এর আগে মোবিয়াস সিনড্রোমে আক্রান্তদের অনেককেই অটিজম রোগী বলে মনে করা হতো, তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মুখে অভিব্যক্তির অভাব ও দেরিতে কথা বলার কারণে তারা ভুলভাবে অটিস্টিক হিসেবে চিহ্নিত হতেন।
চিকিৎসা পদ্ধতি কী?
চিকিৎসা নির্ভর করে রোগীর উপসর্গের ওপর। অনেক সময় শরীরের অন্য অংশ থেকে পেশি বা নার্ভ এনে মুখে প্রতিস্থাপন করা হয়, যাতে মুখের নড়াচড়া, চোখ টিপানো, চিবানো ও হাসা ফিরে আসে।
শিশু অবস্থায় খাবার খাওয়াতে ফিডিং টিউবের প্রয়োজন হতে পারে। চোখের সুরক্ষায় সানগ্লাস, আই ড্রপ প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়। চোখের স্কোয়িন্ট সারাতে অস্ত্রোপচার করা যায়।
স্পিচ থেরাপি, ফিজিওথেরাপি ও প্রয়োজনে প্রস্থেটিক সাপোর্ট রোগীদের জীবনযাত্রা সহজ করতে সাহায্য করে।
যথাযথ চিকিৎসা ও সাপোর্ট পেলে মোবিয়াস সিনড্রোমে আক্রান্তরা সাধারণত স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন এবং তাদের আয়ু স্বাভাবিক থাকে।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স।
রাকিব