
চাঁদাবাজদের হাতে নিহত ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের কবরের পাশে তার স্ত্রীর আহাজারি
চাঁদাবাজির জেরেই পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে প্রকাশ্যে মাথা থেঁতলে নির্মমভাবে হত্যা হয়। পরিবারও দাবি করেছে, ‘ওরা প্রতি মাসে দুই লাখ করে টাকা চাইছিল। না দেওয়ায় তারা সোহাগকে শেষমেষ নির্মমভাবে হত্যা করে।’ এ ঘটনায় পুলিশ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করছে। তাদের মধ্যে ছাত্রদল নেতা তারেক রহমান রবিন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। পুলিশ বলছে, ‘চাঁদাবাজি নয়, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।’
নৃশংস এই খুনের নেতৃত্বে ছিল যুবদল নেতা মহিন ও ছাত্রদল নেতা অপু দাস। ওই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা মহিন-অপু সিন্ডিকেটে অতিষ্ঠ। চাঁদা না দিলেই দোকান বন্ধ করে দেয়, ব্যবসায়ীদের মারধর করে। নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দেশজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ-প্রতিবাদ হয়েছে। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির তিন অঙ্গ সংগঠনের পাঁচজনকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অর্ধশতাধিক লোক এ হামলায় অংশ নেয়। এর মধ্যে রিয়াদ, সজীব, নান্নু, লম্বা মনির ও ছোট মনিরসহ পাঁচজন মিলে সোহাগের মাথা থেঁতলে মৃত্যু নিশ্চিত করে। তারা সবাই মহিনের ঘনিষ্ঠ অনুসারী। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, চাঁদা না দিলেই দোকান বন্ধ করে তাদের মারধর করা হয়। শুধু এখানে নয়। বংশালের নয়াবাজার, কাগজ মার্কেট, চৌধুরী মার্কেট, বাগদাসা লেন, কসাইটুলি, বাবুবাজার ব্রিজ সংলগ্ন মার্কেটসহ প্রায় ৩০-৪০টি মার্কেটে চাঁদাবাজির কারণে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা।
এদিকে নিহত সোহাগের স্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, ওরা প্রতি মাসে দুই লাখ করে টাকা চাইছিল। না দেওয়ায় তারা আমার স্বামীকে শেষমেষ মেরে ফেলল। অথচ পুলিশ হত্যাকারীদের বাঁচাতে চায়। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ওই হত্যাকাণ্ডে যাদের অংশ নিতে দেখা গেছে এবং নেপথ্যে যাদের নাম আসছে, তারা সবাই পূর্ব পরিচিত। এক সময় তাদের কয়েকজন সোহাগের ব্যবসার সহযোগী ছিলেন। এ ঘটনায় নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এরপর পুলিশ মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিনকে (২২) গ্রেপ্তার করে। এ সময় রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এরপর শুক্রবার কেরাণীগঞ্জ ইবনে সিনা হাসপাতাল এলাকা থেকে আলমগীর (২৮) ও মনির ওরফে লম্বা মনির (৩২) নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানান, শুক্রবার গভীর রাতে টিটন গাজী (৩২) নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, নিহত সোহাগ ও হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া মাহমুদুল হাসান মহিন, টিটুসহ অন্যরা ৩০ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিতে দেখা যায়। স্থানীয়রাও তাদের সবাইকে যুবদলের নেতা বলে জানেন। স্থানীয় একাধিক ব্যবসায়ী জানান, মহিন-অপু সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরেই মিটফোর্ড এলাকায় চাঁদাবাজি ও ব্যবসা দখলের রাজত্ব কায়েম করেছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের ওপর নেমে আসে ভয়াবহ নির্যাতন। প্রকাশ্যে অস্ত্র উচিয়ে ভয়-ভীতি দেখানো ছিল নিয়মিত ঘটনা।
যেভাবে পৈশাচিক হত্যা ॥ হত্যাকাণ্ডের পরের দিন ঘটনার লোমহর্ষক ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের ভেতর থেকে প্রায় বস্ত্রহীন এক যুবককে দুইজন টেনেহিঁচড়ে বের করে রাস্তায় নিয়ে এসে গালে চড় মারছেন একজন। আরেকজনকে বুকের ওপর লাফাতে দেখা যায়। আরেকজন এসে প্রায় নিস্তেজ যুবকের মাথায় লাথি মারে। এসময় রাস্তা থেকে একটি বড় কংক্রিটের অংশ হাতে তুলে নেন হাল্কা আকাশি রঙের শার্ট ও জিন্সের প্যান্ট পরা একজন। মাথার ওপরে কংক্রিটের বোল্ডার তুলে সজোরে সোহাগের পেট আর বুকের মাঝ বরাবর আঘাত করেন তিনি। সোহাগ দুই হাত আর দুই পা ছড়িয়ে রাস্তায় পড়ে থাকেন। এরপর একদম বুক বরাবর আবার আঘাত করলে সোহাগ একপাশে মুখ ফিরিয়ে নেন। তখন টি-শার্ট আর গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরা আরেকজন একপাশ থেকে হেঁটে এসে আরেকটা বড় কংক্রিটের অংশ মাথায় তুলে সোহাগের মুখ বরাবর আঘাত করেন। এরপর আরেকটি ইট নিয়ে এসে তার মাথায় আঘাত করেন অপর একজন। পাশ থেকে আবার মাথায় আঘাত করেন আরেকজন। এভাবে বারবার মারতে মারতে মাথা থেঁতলে সোহাগের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। আর এই পুরো হামলা এবং হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেন মহিন ও অপু দাস।
চাঁদা না দিলে দোকান বন্ধ, মারধর ॥ স্থানীয় ব্যবসা ও এলাকাবাসীরা জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই চকবাজার ও মিটফোর্ড এলাকায় সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন মহিন ও অপু দাস। বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন ব্যবসায়ীরা। ফুটপাত দখল করে দোকান থেকে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে হুমকি দিয়ে চাঁদা তোলা ছিল তাদের নিত্যদিনের কাজ। যারাই চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানাতেন তাদেরই মারধর করা হতো এবং দোকান বন্ধ করে দেওয়া হতো।
যুবদল ও ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, সোহাগ একসময় মহিনের সঙ্গে চলাফেরা করলেও এলাকায় বিদ্যুতের তামার তার ও সাদা তারের অবৈধ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শুরু করে। এরই জের ধরে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। তামার তার ও সাদা তারের ব্যবসার সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ ছিল সোহাগের কাছে। সেটির নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া ছিল মহিন, অপু, চকবাজার থানা যুবদলের সাবেক সদস্য সারোয়ার হোসেন টিটু, যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রজ্জব আলী পিন্টুসহ মিটফোর্ড হাসপাতালের একটি চক্র। তারা ওই অবৈধ বাণিজ্যের ৫০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ চেয়েছিল। তা নাহলে নিয়মিত চাঁদা দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল। এর জেরেই দ্বন্দ্ব এবং নৃশংস হত্যাকাণ্ড বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় কয়েক ব্যবসায়ী জানান, সোহাগকে হত্যার কয়েকদিন আগেও এক অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ীকে চাঁদার জন্য সবার সামনে বেধড়ক মারধর করেন মহিন ও অপু দাস। এছাড়াও গত মার্চ মাসে রজ্জব আলী পিন্টু, রবিন এবং আরও বেশ কয়েকজন স্থানীয় বিএনপি নেতা ইসহাক আলী সরকারের নেতৃত্বে গোলাগুলি এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্যবসায়ীদের ওপর চাঁদার জন্য হামলা করে। এই ঘটনায় চকবাজার থানায় তাদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলাও হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, নয়াবাজার বাগাদাস লেনের যুবদল নেতা ওয়াহিদের সহযোগী তানভীর হোসেন নয়াবাজার কাঁচাবাজার মার্কেটে চাঁদা না দেওয়ায় কয়েকটি দোকান দখল করে নেয়। তারা পুরান ঢাকার কসাইটুলি পলি হোটেল চাঁদার টাকা না পেয়ে মারধর করে স্থানীয় বিএনপির সিয়াম পারভেজসহ কয়েকজন। হোটেলে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ কিছুদিন তৎপরতা দেখায়। এরপর তা থেমে যায়। এছাড়া এখানকার আশেপাশের প্রায় ২০টি মার্কেটের কয়েক শতাধিক ব্যবসায়ী এদের আতংক দিন কাটাতে হয়। চাঁদা না দিলে মারধর ও দোকানপাট বন্ধ।
সোহাগের স্ত্রীর আহাজারি ॥ শুক্রবার সকালে ময়নাতদন্ত শেষে সোহাগের লাশ ঢাকা থেকে গ্রামের বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে নানা বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সোহাগের স্ত্রী ও দুই সন্তানের আহাজারিতে সেখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।
নিহতের স্ত্রী লাকি বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার স্বামীর ব্যবসা সহ্য হচ্ছিল না ওদের। দীর্ঘদিন ধরেই আমার স্বামীর দোকান থেকে চাঁদা দাবি করে আসছিল হত্যাকারীরা। তারা প্রতি মাসে দুই লাখ করে টাকা চাইছিল। আমার স্বামী তা দিতে চায়নি। শেষমেশ আমার স্বামীকে মেরেই ফেললো।’
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মাত্র সাত মাস বয়সে বজ্রপাতে সোহাগের বাবা আইউব আলী মারা যান। এরপর তার মা আলেয়া বেগম জীবিকার তাগিদে সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় চলে যান। ঢাকায় থেকেই সোহাগ বড় হয়েছেন এবং মেসার্স সোহানা মেটাল নামের একটি দোকান পরিচালনা করতেন মিটফোর্ড এলাকায়। দীর্ঘদিন ধরে দোকান থেকে প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছিল একটি সন্ত্রাসী চক্র। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় বুধবার বিকেলে সোহাগকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে তারা। এতেও চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সোহাগকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে পাথর মেরে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলেও সোহাগের স্বজনদের অভিযোগ, পুলিশ জড়িতদের বাঁচাতে কারসাজি করছে। তারা জানান, প্রকৃত অপরাধীদের বাদ দিয়ে মামলায় নিরীহদের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। সোহাগের বোন সাজেদা বেগম বলেন, আমার ভাই প্রায় ১০-১৫ বছর ধরে ব্যবসা করছিলেন। প্রতি মাসে তার কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। এছাড়াও তার ব্যবসাটাও নিয়ে নিতে চেয়েছে অভিযুক্তরা। তবে আমার ভাই তাদের চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তারা আমার ভাইকে ডেকে নিয়ে মারধর করেন এবং নির্মমভাবে পাথর মেরে হত্যা করে। নিহত সোহাগের ছেলে সোহান (১০) ও মেয়ে সোহানা (১৪) কাঁদতে কাঁদতে বলে, আমরা এখন এতিম হয়ে গেছি। বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেল। যারা বাবাকে মেরেছে, আমরা তাদের ফাঁসি চাই।
দুই আসামির রিমান্ড ও জবানবন্দি ॥ ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার তারেক রহমান রবিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আর হত্যা মামলায় টিটন গাজী নামের আরেক আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই মো. মনিরের আবেদনে শনিবার ঢাকার মহানগর হাকিম হাসিব উল্লাহ গিয়াস রবিনের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আসামি তারেক রহমান রবিন রাজধানীর চকবাজার থানার ৩০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক। একই বিচারক টিটন গাজীর রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন। প্রসিকিউশন পুলিশের এসআই তানভীর মোর্শেদ চৌধুরী এ তথ্য জানান।
৫ জন বহিস্কার ॥ এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির তিন অঙ্গ সংগঠনের পাঁচজনকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা হচ্ছেন- যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক রজ্জব আলী পিন্টু ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক সাবাহ করিম লাকি, স্বেচ্ছাসেবক দলের কালু ওরফে ‘স্বেচ্ছাসেবক কালু’ এবং ছাত্রদলের চকবাজার শাখার সদস্য সচিব অপু দাস ও মাহমুদুল হাসান মাহিন।
ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে হত্যাকাণ্ড বলছে পুলিশ ॥ চাঁদাবাজি নয়, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) হত্যা করা হয়েছে। একটি দোকানে কারা ব্যবসা করবে তা নিয়ে আগে থেকেই দ্বন্দ্ব চলছিল। হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহাগ এবং হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে তাদের একসঙ্গে ব্যবসাও ছিল। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ ও র্যাব মোট ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
শনিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।
গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে তিনি বলেন, ঘটনার নেপথ্য নিয়ে অনেক রকম কথাবার্তা আমরা মিডিয়ায় দেখতে পাচ্ছি। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, ওই এলাকায় ভাঙাড়ি ব্যবসা খুব প্রচলিত। সেখানে একটি ভাঙাড়ি দোকান ছিল। সেই দোকানে কারা ব্যবসা করবে, এ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। আমরা জানতে পেরেছি, যিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এবং হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে যাদের সন্দেহ করা হচ্ছে, তারা পরস্পর সম্পর্কিত। তারা একসঙ্গে ব্যবসাটা কিছুদিন করেছে। কিন্তু তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে একপর্যায়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। তারা নিজেদের মতো করে ব্যবসা করার জন্য সোহাগের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হয় এবং এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে লালবাগ বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ জসীম বলেন, বুধবার বিকেল ৬টার দিকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে একদল লোক লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) নামের এক ব্যক্তিকে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পর কোতোয়ালি থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরবর্তীতে ১০ জুলাই এ ঘটনায় নিহতের বড় বোন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ নিহতের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য তা হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
পুলিশ ১১ জুলাই ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত আসামি মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিনকে (২২) গ্রেপ্তার করে। এ সময় রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাব আলমগীর (২৮) ও মনির ওরফে ছোট মনির (২৫) নামের আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া শুক্রবার রাতে মো. টিটন গাজী (৩২) নামে আরও এক এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
লালবাগ বিভাগের ডিসি আরও বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ অত্যন্ত তৎপর রয়েছে। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মূল রহস্য উদ্ঘাটন, সংশ্লিষ্ট সব অপরাধী গ্রেপ্তার এবং সোহাগ কেন এই ঘটনার শিকার হলো তা উদ্ঘাটনের জন্য একটি চৌকস টিম গঠন করা হয়েছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্যানেল/মজি