ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

ভিটামিন ই-এর ঘাটতির ৫টি লক্ষণ, যা অবহেলা করা ঠিক নয়

প্রকাশিত: ০৩:২৯, ১৩ জুলাই ২০২৫

ভিটামিন ই-এর ঘাটতির ৫টি লক্ষণ, যা অবহেলা করা ঠিক নয়

ছবি: সংগৃহীত।

বর্তমান সময়ে মানবদেহ চরম চাপের মধ্যে রয়েছে। বাতাসে দূষণ, অতিবেগুনি রশ্মি, প্রক্রিয়াজাত খাবারের অতিরিক্ত গ্রহণ—এসব মিলিয়ে আমাদের দেহের কোষসমূহ ক্রমাগত ক্ষতির মুখে। এর ফলে তৈরি হচ্ছে ‘ফ্রি র‍্যাডিকেল’ নামের ক্ষতিকর অস্থিতিশীল অণু, যা কোষ ধ্বংস, অকাল বার্ধক্য, প্রদাহ এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগের জন্য দায়ী।

এই পরিস্থিতিতে ভিটামিন ই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি একটি ফ্যাট-দ্রবণীয় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা দেহে উৎপন্ন ক্ষতিকর ফ্রি র‍্যাডিকেল নিস্ক্রিয় করতে সাহায্য করে এবং কোষকে অক্সিডেটিভ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।

সাধারণত সুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে ভিটামিন ই-এর ঘাটতি খুব একটা দেখা যায় না, কারণ এটি অনেক খাদ্যেই স্বাভাবিকভাবে থাকে। তবে যাদের চর্বি শোষণে সমস্যা (fat malabsorption disorders) রয়েছে বা যারা অত্যন্ত কম চর্বিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে এই ঘাটতি দেখা দিতে পারে। চলুন দেখে নেওয়া যাক প্রাথমিক পর্যায়ে ভিটামিন ই-এর ঘাটতির ৫টি সাধারণত উপেক্ষিত লক্ষণ—

১. হাত-পায়ে অবশভাব বা ঝিনঝিনি অনুভব:
ভিটামিন- ই স্নায়ুকোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এর ঘাটতি হলে স্নায়ুর আবরণ (myelin sheath) ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে, ফলে হাত-পায়ে অবশভাব বা সূঁচ ফুটানোর মতো অনুভূতি দেখা দিতে পারে।

২. পেশিশক্তি হ্রাস বা দুর্বলতা:
যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন- ই না থাকলে ধীরে ধীরে পেশির দুর্বলতা বা ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। এতে সিঁড়ি বেয়ে ওঠা, ভারী কিছু তোলা বা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।

৩. সমন্বয়হীন চলাফেরা (Ataxia):
ভিটামিন ই-এর ঘাটতির অন্যতম স্পষ্ট স্নায়ুবিক লক্ষণ হলো অ্যাটাক্সিয়া, অর্থাৎ চলাফেরার সমন্বয়হীনতা। এই অবস্থায় হাঁটার সময় ভারসাম্য হারানো, হোঁচট খাওয়া বা জিনিস পড়ে যাওয়া সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। কারণ ভিটামিন ই সেরেবেলাম ও স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতায় সহায়তা করে।

৪. চোখে সমস্যা বা ঝাপসা দেখা:
ভিটামিন ই চোখের রেটিনার ফটো-রিসেপ্টর কোষকে রক্ষা করে। ঘাটতির ফলে রাতকানা, ঝাপসা দেখা বা অন্ধকারে ভালো না দেখার মতো সমস্যা শুরু হয়। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে দৃষ্টিশক্তির স্থায়ী ক্ষতিও হতে পারে।

৫. প্রতিক্রিয়ার ধীরগতি:
শরীরের রিফ্লেক্স বা প্রতিক্রিয়া ধীরে হয়ে যাওয়াও ভিটামিন ই-এর ঘাটতির একটি ইঙ্গিত হতে পারে। শুরুতে এটি খুব একটা বোঝা না গেলেও সময়ের সাথে এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ (NIH) অনুযায়ী, ১৪ বছরের বেশি বয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক ১৫ মিলিগ্রাম (প্রাকৃতিক ভিটামিন- ই-এর ক্ষেত্রে প্রায় ২২ IU) ভিটামিন ই গ্রহণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের ক্ষেত্রে এটি ১৫ থেকে ১৯ মিলিগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে।

শরীরে ভিটামিন ই-এর ঘাটতির প্রাথমিক লক্ষণগুলো চেনা এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দীর্ঘমেয়াদি স্নায়ুবিক ও শারীরিক জটিলতা থেকে রক্ষা করতে পারে। বাদাম, বীজ, সবুজ শাকসবজি, সূর্যমুখী তেল, মাছ ইত্যাদির মাধ্যমে খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ই যুক্ত রাখা জরুরি।

মিরাজ খান

×