
ছবি: প্রতীকী
সকালের সময়টা যে কোনো দিনের ভিত্তি গড়ে তোলে। আপনি যদি সঠিকভাবে দিনটি শুরু করতে পারেন, তাহলে সারা দিনটাই অনেক বেশি প্রোডাক্টিভ, আনন্দময় এবং সফলভাবে কাটে। কিন্তু অনেকেই এমন কিছু অভ্যাস বা ভুলে দিনের শুরুটা এমনভাবে নষ্ট করে ফেলেন, যার প্রভাব পুরো দিন জুড়ে পড়ে। যদিও এসব ভুলকে তুচ্ছ বলে মনে হতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে এর নেতিবাচক প্রভাব অত্যন্ত গভীর হয়।
প্রথম যে ভুলটি অনেকেই করে থাকেন তা হলো ঘুম থেকে ওঠার পরপরই মোবাইল ফোন হাতে নেওয়া। আমরা প্রায়ই ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে ফোন চেক করতে শুরু করি—নোটিফিকেশন, সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেইল ইত্যাদি দেখতে থাকি। এতে করে আমাদের মস্তিষ্ক এক ধরনের অস্থিরতায় পড়ে যায়। দিনের শুরুতেই নানা তথ্য প্রবাহে মন বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে এবং আমরা এক ধরনের মানসিক চাপ অনুভব করি। এর ফলে মনোযোগের ঘাটতি, কর্মক্ষমতা হ্রাস এবং উদ্বেগ দেখা দিতে পারে। অথচ এই সময়টা হওয়া উচিত আত্মবিশ্বাস ও ইতিবাচকতার চর্চার সময়।
দ্বিতীয় সাধারণ ভুল হলো প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় ঘুমানো বা বারবার ‘স্নুজ’ বাটনে চাপ দেওয়া। অনেকেই সকালে ঘুম থেকে ওঠার জন্য অ্যালার্ম দেন, কিন্তু যখন অ্যালার্ম বেজে ওঠে তখনই উঠার পরিবর্তে বারবার 'স্নুজ' দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। এতে শরীর ও মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। ঘুমের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়ে যায় এবং ঘুম থেকে ওঠার পর মনে হয় ক্লান্তি কাটেনি। ফলে শরীরে অলসতা কাজ করে, মনেও নেতিবাচক অনুভূতির সৃষ্টি হয় এবং দিন শুরু হয় এক ধরনের ঝিমধরা অবস্থায়।
তৃতীয় যে ভুলটি দিনটিকে নেতিবাচক করে তুলতে পারে তা হলো সকালে পানি না খাওয়া। দীর্ঘ সময় ঘুমানোর ফলে আমাদের শরীর পানিশূন্যতায় ভোগে। ঘুম থেকে ওঠার পরপরই অন্তত এক গ্লাস পানি না খেলে শরীরের বিপাকক্রিয়া সঠিকভাবে শুরু হয় না, হজমে সমস্যা হতে পারে এবং ত্বকেও বিরূপ প্রভাব পড়ে। অনেকেই আবার সকালে শুধু চা বা কফি পান করেন, যা শরীরকে আরও ডিহাইড্রেট করে ফেলে। সুতরাং পানি খাওয়া সকালবেলার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ যা এড়িয়ে গেলে শারীরিক দুর্বলতা এবং মানসিক ধীরগতি দেখা দেয়।
চতুর্থ ভুলটি হলো সকালের নাশতা বাদ দেওয়া। কেউ কেউ ওজন কমানোর জন্য বা সময়ের অভাবে সকালের নাশতা করেন না, যা শরীর ও মন—উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। খালি পেটে কাজে মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে, রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায় এবং এর ফলে মাথাব্যথা, মনমরা ভাব এবং ক্ষুধার তাড়নায় অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে। সঠিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন সকালের নাশতা না খেলে আপনি সারা দিন ক্লান্ত এবং অস্থির বোধ করবেন।
পঞ্চম ভুল হলো সকালে নিজেকে সময় না দেওয়া। আমরা প্রায়ই তাড়াহুড়ো করে দিনের কাজ শুরু করি—যেমন অফিস যাওয়ার তাড়া, বাস ধরার তাড়া, স্কুল বা কলেজে পৌঁছানোর তাড়া। এই হেঁপাহেঁপিতে আমরা নিজেদের সঙ্গে কাটানোর সময়টুকু হারিয়ে ফেলি। দিনের শুরুতেই যদি ১০-১৫ মিনিট সময় নিয়ে নিজের মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া যায়—যেমন ধ্যান, হালকা ব্যায়াম, বই পড়া বা কিছুক্ষণ নির্জনে সময় কাটানো—তবে মস্তিষ্ক অনেক বেশি সজাগ ও স্থির থাকে। এই ছোট্ট সময়টুকু আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, চিন্তাভাবনাকে পরিষ্কার করে এবং দিনের চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হওয়ার শক্তি জোগায়।
সকালের এই সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো যদি উপেক্ষা করা হয়, তবে দিনটি শুধু ক্লান্তিকরই নয়, অগোছালো এবং অপ্রত্যাশিতভাবে হতাশাজনক হয়ে উঠতে পারে। তাই দিনের শুরুটিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। স্মার্ট এবং সুশৃঙ্খলভাবে সকাল শুরু করলেই দিনের অন্যান্য সময়গুলো অনায়াসেই সুষ্ঠু এবং সফলভাবে পরিচালনা করা সম্ভব। প্রতিদিনের সকালের ছোট ছোট ভুলগুলো শুধরে নিয়ে একটি প্রাণবন্ত ও উপকারী দিন শুরু করা আমাদের সকলেরই অভ্যাসে পরিণত হওয়া উচিত।
এম.কে.