
ছবি: সংগৃহীত
ডেডলাইন, প্রেজেন্টেশন বা পারফরম্যান্স রিভিউ নয়—জেনারেশন Z-র কর্মস্থলে মানসিক চাপের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে একটি সাধারণ বিষয়: ইমেইল পাঠানো। সঠিক টোন, শুভেচ্ছাবাক্য, সাইন-অফ—সবকিছু নিয়েই অতিরিক্ত চিন্তা তাঁদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইমেইলের মতো দৈনন্দিন অফিস কাজেও কেন মানসিক চাপ?
সোশ্যাল মিডিয়ার স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ভাষার সঙ্গে অভ্যস্ত জেনারেশন Z যখন কর্মজীবনে পা রাখছে, তখন প্রথাগত পেশাদার যোগাযোগ, বিশেষ করে ইমেইল, তাঁদের কাছে জটিল ও চাপের মনে হচ্ছে। ফলে ছুটি চাওয়ার মতো সাধারণ মেইল লিখতেও অনেকেই দ্বিধায় ভুগছেন।
মনের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে ইমেইল!
স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রাজীব মেহতা বলেন, “ডিজিটাল নেটিভ বলে পরিচিত জেনারেশন Z পেশাদার জীবন শুরু করেছে। তাঁদের অনেকেই অতিরিক্ত উদ্বেগে ভোগে, যার প্রভাব পড়ে ইমেইল লেখার মতো সাধারণ কাজেও। পেশাগত শিষ্টাচার নিয়ে অনিশ্চয়তা তাঁদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তোলে।”
ডা. মেহতা আরও বলেন, “অনেকেই সরাসরি কথা বলার থেকে ইমেইলকে নিরাপদ ভাবেন। এতে যদিও তাৎক্ষণিক অস্বস্তি কমে, তবে এটি ‘anxious-avoidant behaviour’—যা ব্যক্তিত্বের বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।”
ইমেইল উদ্বেগের মূল কারণ ও এর প্রভাব
কারণ:
সঠিক ভাষার ধরন, টোন, শুভেচ্ছাবার্তা, ফলো-আপের সময়—এসব নিয়ে অনিশ্চয়তা
ছোট বানান ভুলকেও বিশাল সমস্যা মনে হওয়া
ইমেইল পাঠাতে বিলম্ব, অতিরিক্ত পুনঃপাঠ
সব কিছু নিয়ে অনর্থক চিন্তা
ফলাফল:
মনোযোগ কমে যাওয়া
উৎপাদনশীলতা হ্রাস
অনুপস্থিতির হার বাড়া
নেতৃত্বের দায়িত্ব নিতে ভয়
মানসিক সুস্থতা না থাকায় চাকরি ছেড়ে দেওয়া
ম্যানেজার ও প্রতিষ্ঠানের করণীয়:
এই সমস্যার সমাধানে শুধু ব্যক্তি নয়, বরং প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থাপনাকেও দায়িত্ব নিতে হবে। হোমসফাই রিয়েলটির এইচআর ভাইস প্রেসিডেন্ট নেহা মিশ্রা বলেন, চারটি কৌশল হতে পারে কার্যকর—
কর্মীদের স্বীকৃতি দেওয়া—গেমিফাইড রিওয়ার্ড সিস্টেম ও পাবলিক প্রশংসা
অফিস ক্যালেন্ডারে নিয়মিত ‘ওয়েলনেস উইক’ রাখা
পরামর্শ সেবা ও রেগুলার ফিডব্যাকের মাধ্যমে সহায়ক সিস্টেম তৈরি
কর্মীদের মানসিক অবস্থা বোঝার জন্য মুড সার্ভে ও রিয়েল-টাইম রেসপন্স ব্যবস্থা চালু করা
জেনারেশন Z-কে ইমেইল উদ্বেগ কমাতে ১০টি টিপস:
ইমেইল লেখার দক্ষতা বাড়ানোই এই উদ্বেগ কমাতে পারে—বলেন টেলর এলিজাবেথ, ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স কোচ।
১. অডিয়েন্স বুঝে লিখুন: সিনিয়রদের সঙ্গে কথা বলার ভাষা আলাদা হবে সহকর্মীদের চেয়ে।
২. সুস্পষ্ট সাবজেক্ট লাইন: অর্থবোধক ও প্রাসঙ্গিক হেডিং দিন।
৩. ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলুন: মার্জিত ও সঠিক ভাষা ব্যবহার করুন; অতিরিক্ত ইমোজি নয়।
৪. সতর্ক শুভেচ্ছা ও বিদায়বাক্য: "Dear [Name]" দিয়ে শুরু, "Best regards" দিয়ে শেষ করুন।
৫. অতিরিক্ত ব্যক্তিগত কথা নয়: অফিস ইমেইলে আবেগ প্রকাশে সংযম দরকার।
৬. স্পষ্ট ও সংক্ষিপ্ত হন: ছোট করে হলেও পরিষ্কারভাবে লিখুন।
৭. পাঠানোর আগে পড়ে নিন: বিশেষ করে বিতর্কিত বা সমালোচনামূলক ইমেইল।
৮. সময়জ্ঞান বজায় রাখুন: অফিস আওয়ারে ইমেইল পাঠান ও তাত্ক্ষণিক রিপ্লাই প্রত্যাশা না করুন।
৯. প্রফেশনাল সিগনেচার রাখুন: নাম, পদবি, যোগাযোগ নম্বর যুক্ত করুন।
১০. ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করুন: পরিস্থিতি বুঝে ভাষা ও টোন ঠিক করুন।
নোভা