
ছবি: সংগৃহীত
আজকের ডিজিটাল যুগে মোবাইল ফোন যেন জীবনের এক অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে। খবর, বিনোদন, সামাজিক যোগাযোগ থেকে শুরু করে অফিসের কাজ—সবকিছুতেই রয়েছে ফোনের নিরবচ্ছিন্ন ব্যবহার। কিন্তু যদি হঠাৎ একদিন, মাত্র ২৪ ঘণ্টার জন্য ফোন ছাড়াই থাকতে হয়—তাহলে কী ঘটে আমাদের মস্তিষ্কে?
প্রথমেই দেখা দেয় এক ধরনের অস্বস্তি। অনেকেই ফোমো বা “ফিয়ার অফ মিসিং আউট”-এর ভেতর দিয়ে যান। মনে হয় গুরুত্বপূর্ণ খবর, মেসেজ বা ইমেইল মিস হয়ে যাচ্ছে। এই সময় মস্তিষ্ক কর্টিসল নামের স্ট্রেস হরমোন বেশি উৎপন্ন করে, যার ফলে অস্থিরতা, ঘাম, মনোযোগের অভাব দেখা দেয়।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়—কিছু ঘণ্টা পর থেকেই দেখা যায় উল্টো চিত্র। মস্তিষ্কে ডোপামিনের মাত্রা স্থিতিশীল হতে থাকে। এতে মনোযোগ বাড়ে, ছোট ছোট কাজেও মন বসে, আর চারপাশের প্রকৃতি, মানুষ কিংবা নিজের চিন্তার জগতে নতুন করে সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয়।
এই সময় মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স বেশি সক্রিয় হয়, যা গভীর মনোযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে সক্রিয় হয়ে ওঠে ডিফল্ট মোড নেটওয়ার্ক, যা স্বপ্ন দেখা, স্মৃতিচারণ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সৃজনশীল চিন্তার সঙ্গে জড়িত। অনেক লেখক, শিল্পী কিংবা উদ্যোক্তারা এমন ফোন-মুক্ত সময়কেই তাঁদের সৃষ্টির সেরা মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
রাতের বেলাও দেখা যায় ইতিবাচক প্রভাব। স্ক্রিন থেকে আসা নীল আলো না থাকায় মেলাটোনিন নামের ঘুমের হরমোন স্বাভাবিকভাবে উৎপন্ন হয়। ঘুম হয় গভীর ও মানসম্পন্ন। পাশাপাশি ফোন ছাড়া সময় কাটালে সোশ্যাল ব্রেইন নেটওয়ার্ক বেশি সক্রিয় হয়, যা সম্পর্ক, সহমর্মিতা ও মানবিক সংযোগ বাড়াতে সহায়ক।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ফোন ছাড়া ২৪ ঘণ্টা প্রথমে অস্বস্তিকর মনে হলেও এটি এক প্রকার “ডিজিটাল ডিটক্স”। যা মস্তিষ্ক, মন, শরীর এবং সম্পর্ক—সবকিছুতেই ফিরিয়ে আনতে পারে নতুন জীবনশক্তি ও স্বস্তি।
শেখ ফরিদ