ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

সকালে ফোন চার্জিং করা কি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে?

প্রকাশিত: ০৭:২৫, ১৩ জুলাই ২০২৫

সকালে ফোন চার্জিং করা কি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে?

ছ‌বি: প্রতীকী

সকালে ফোন চার্জিং করা কি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে? এই প্রশ্নটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক স্পর্শ করে। আধুনিক যুগে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘুম থেকে উঠে ফোনের ব্যাটারি চার্জে সংযোগ দেওয়া একধরনের অভ্যাস হয়ে গেছে। তবে অনেকেই ভাবেন, সকালবেলায় ফোন চার্জিং করলে কি কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা হতে পারে? বিশেষ করে চার্জিংয়ের সময় ফোনের বিকিরণ বা বৈদ্যুতিক কারেন্টের প্রভাব নিয়ে নানা ধরনের ধারণা ও গুঞ্জন রয়েছে। আসুন এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।

প্রথমেই বলা যেতে পারে, ফোন চার্জিং একটি ইলেকট্রিক্যাল প্রক্রিয়া, যেখানে ফোনের ব্যাটারি পুনরায় চার্জ হতে থাকে। সাধারণত ফোনের চার্জার থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়, যা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বৈদ্যুতিক কারেন্ট। চার্জিং চলাকালীন সময় ফোন থেকে সামান্য তাপ নির্গত হয় এবং ফোনের ভিতরে ব্যাটারি ও অন্যান্য অংশগুলো কাজ করে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া কি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর?

তথ্য অনুযায়ী, মোবাইল ফোন চার্জিং করার সময় নির্গত বিকিরণ বা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড (EMF) খুবই স্বল্পমাত্রার এবং সাধারণত স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে না। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, চার্জিংয়ের সময় ফোন থেকে নির্গত বিকিরণ দৈনন্দিন ব্যবহারের অন্যান্য বৈদ্যুতিক ডিভাইস থেকে নির্গত বিকিরণের চেয়ে অনেক কম। তাই ফোন চার্জিং নিজেই সরাসরি কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে না।

তবে ফোন চার্জিংয়ের সময় যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখতে হয় তা হলো নিরাপত্তা। বিশেষ করে সকালে, ঘুম থেকে উঠে ফোন চার্জিং করতে গিয়ে আমরা অনেক সময় একসঙ্গে অন্য কাজও করি, যেমন ফোন হাতে নিয়ে বসে থাকা, ফোন নিয়ে বিছানায় পড়ে থাকা বা চার্জারের সংযোগে অবহেলা করা। এই অভ্যাস থেকে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। যেমন, পুরোনো বা নিম্নমানের চার্জার ব্যবহার, অথবা চার্জার ও ফোনের তার ক্ষতিগ্রস্ত হলে শর্ট সার্কিট বা আগুন লাগার ঝুঁকি থাকতে পারে। তাই চার্জিং-এর সময় অবশ্যই ভালো মানের চার্জার ব্যবহার করতে হবে এবং চার্জিং স্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

সকালে ফোন চার্জিং করার আরেকটি দিক হলো মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব। অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথম কাজ হিসেবে ফোন হাতে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া চেক করা শুরু করেন। এতে অনেক সময় চার্জিং হলেও ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার হয়, যা চোখের উপর চাপ সৃষ্টি করে, মনোযোগ কমায় এবং ঘুমের প্যাটার্ন নষ্ট করতে পারে। ফলে সকাল থেকেই মানসিক চাপ বা উদ্বেগ বেড়ে যেতে পারে। যদিও এই সমস্যা ফোন চার্জিংয়ের সাথে সরাসরি যুক্ত নয়, তবে চার্জিংয়ের সময় ফোন ব্যবহারের ফলে যে সমস্যা গুলো হয় তা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

আরেকটি বিষয় হল, ফোন চার্জিং করার সময় শরীরের যোগাযোগের সম্ভাবনা। কখনো কখনো ফোন চার্জের সাথে যুক্ত তার বা চার্জার শরীরের সান্নিধ্যে থাকলে বা ভেজা হাত দিয়ে ফোন ছুঁলে বৈদ্যুতিক শক লাগার সম্ভাবনা থাকে। যদিও এটি খুবই বিরল এবং সচেতন থাকলে এড়ানো যায়, তবুও এটি একটি ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করা যায়। তাই সকালে ফোন চার্জিং করার সময় ভেজা হাতে ফোন ছোঁয়া বা চার্জারের সাথে শরীরের যোগাযোগ এড়ানো উচিত।

ফোন চার্জিংয়ের সময় একাধিক ডিভাইস একসাথে চার্জ দিলে চার্জারের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা ডিভাইসগুলোর নিরাপত্তা ও কার্যকারিতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে চার্জার অতিরিক্ত গরম হতে পারে, যা অগ্নিসংযোগের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠে দ্রুত কাজ সেরে ফেলতে গিয়ে এ ধরনের ভুল হতে পারে। তাই চার্জিংয়ের সময় ফোনের নিরাপত্তা ও চার্জারের গুণগত মানে সচেতন হওয়া জরুরি।

সারসংক্ষেপে, সকালে ফোন চার্জিং নিজে থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে না। তবে চার্জিংয়ের সময় নিরাপত্তা এবং চার্জারের গুণগত মানের প্রতি যত্নবান না হলে ক্ষতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। এর পাশাপাশি, চার্জিংয়ের সময় ফোন অতিরিক্ত ব্যবহারে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তাই সকালে ফোন চার্জিং করার সময় সতর্কতা অবলম্বন এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা বাঞ্ছনীয়। যেমন, ভালো মানের চার্জার ব্যবহার, ভেজা হাত না দিয়ে ফোন চার্জ করা, ফোন চার্জিং চলাকালীন অতিরিক্ত ব্যবহার এড়ানো, এবং চার্জিংয়ের স্থান নিরাপদ রাখা।

সর্বোপরি, ফোন চার্জিং একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যা সচেতনতার সঙ্গে করলে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে না। তাই সকালে ফোন চার্জিং সম্পর্কে অপ্রয়োজনীয় আতঙ্ক না নিয়ে স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ অভ্যাসে নিজেকে অভ্যস্ত করা উচিত।

এম.কে.

×