
ছবি: সংগৃহীত
মিটফোর্ড হাসপাতালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক মহলে দোষারোপের প্রবণতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির নেতা শহিদুল ইসলাম বাবলু। তিনি ঘটনার সঙ্গে বিএনপি বা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম জড়ানোর পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য দেখছেন বলে দাবি করেছেন।
বাবলু স্বীকার করেন যে, এই হত্যাকাণ্ডে বিএনপি গভীরভাবে মর্মাহত এবং দল এই ঘটনাকে কোনোভাবেই সমর্থন করছে না। তবে তিনি প্রশ্ন তোলেন, "এখানে শুধু বিএনপিকে যে আপনি দায় দিচ্ছেন, রাষ্ট্র সমাজের কি কোনো দায় নাই?" তার মতে, দেশের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিএনপি সমর্থন করে, এবং সমাজে পারিবারিক বা ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে সংঘাত নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। তিনি অভিযোগ করেন, "একটা ঘটনা ঘটলেই মানে একেবারে হুক্কা হওয়া বিশেষ করে একটা বিশেষ রাজনৈতিক দল তারা এটাকে এমনভাবে ব্রান্ডিং করে ভাবখানা এমন যে বিএনপির চেয়ারপার্সন মানে ঘটনা ঘটেছে মিডফোর্ডে। আপনি সাথে সাথেই আপনি তারেক রহমানকে নিয়ে এমন সব অশ্রাব্য গালাগালি আক্রমণ এর কি কারণ?"
বিএনপি নেতা বলেন, মিটফোর্ডের ঘটনাটি একটি ব্যবসায়িক দ্বন্দের ফল। যদিও অভিযুক্ত ব্যক্তি দলের সাথে জড়িত থাকতে পারে, তবে বিএনপি তাৎক্ষণিকভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে কঠোর বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। বাবলু জোর দিয়ে বলেন, "আমাদের দল কি শেল্টার দিয়েছে? এই ঘটনা কি আমরা আনন্দিত? তা আপনি কি কারণে শুধু টার্গেট?" তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এবং ইঙ্গিত দেন যে, নির্বাচনের আগে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি দেখিয়ে নির্বাচন পেছানোর একটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
সোহাগ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার জসিমউদ্দিন জানিয়েছেন, এটি চাঁদাবাজি নয়, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে খুন হয়েছে এবং গ্রেপ্তারকৃতদের রাজনৈতিক পরিচয় এখনো নিশ্চিত নয়। এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে রতন ভাই নামের এক বিশ্লেষক বলেন, পুলিশের তদন্তে রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ার পরও রাজনৈতিক দলগুলোর এমন প্রতিক্রিয়া তাদের নিজস্ব লাভালাভের কথা চিন্তা করেই হচ্ছে। তিনি জুলাই ২০২৪ এর অভ্যুত্থানের পর মানুষের উচ্চ প্রত্যাশা এবং বর্তমান সমাজের হতাশার কথা তুলে ধরেছেন। তার মতে, অপরাধ দমনের চেয়ে অপরাধীর রাজনৈতিক পরিচয় সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা হয়।
রতন ভাই পুলিশের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘটনা আসার আগে পুলিশ বা পথচারীদের তেমন ভূমিকা দেখা যায়নি। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, যদি পুলিশ অপরাধীর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে ভীত থাকে, তাহলে দুর্বৃত্তপনা, পুলিশের দায়িত্বহীনতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরকে দোষারোপ করার প্রবণতা বাড়বে।
মব কালচার নিয়ে শহিদুল ইসলাম বাবলু বলেন, এটি দীর্ঘদিনের সামাজিক অবক্ষয়ের ফল এবং শুধুমাত্র বিএনপি না থাকলে অপরাধ বন্ধ হবে না। তিনি মনে করেন, ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন স্থানে যে মব কালচার দেখা গেছে, তা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির একটি কারণ হতে পারে।
রতন ভাইয়ের মতে, জুলাই অভ্যুত্থানের সময় যখন মানুষ বুলেটের সামনে দাঁড়াতে পেরেছিল, তখন বর্তমান সমাজে প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ডে কেউ বাধা দিতে আসে না, এটি একটি গভীর সামাজিক পরিবর্তনকে নির্দেশ করে। তিনি বলেন, তখন আন্দোলন একটি চরিত্র, বন্ধুত্ব এবং দায়িত্ববোধ তৈরি করেছিল, যা এখন অনুপস্থিত।
শেষ পর্যন্ত, শহিদুল ইসলাম বাবলু জোর দিয়ে বলেন, সরকারের যতটুকু দায়, তার চেয়ে তিনগুণ বেশি দায় বিএনপিকে চাপানো হচ্ছে, যা এই বিতর্কের মূল সমস্যা।
তথ্যসূত্র: https://www.facebook.com/watch/?v=1263928148471563&rdid=tXKUAWxwFd5MAAoC
সাব্বির