ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, তবে উজানের পানি নামার কারণে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চলের উপজেলা 

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফেনী

প্রকাশিত: ২১:০২, ১৩ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২১:০৩, ১৩ জুলাই ২০২৫

ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, তবে উজানের পানি নামার কারণে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চলের উপজেলা 

ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ভাঙনের কারণে বন্যার পানি ফুলগাজী, পরশুরাম উপজেলা থেকে নামতে থাকলেও ফেনী সদর উপজেলা, ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী, দাগনভূঞা এলাকায় বানের পানি বাড়া অব্যাহত রয়েছে। এতে বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা ৩৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। জেলার ১১৪টি গ্রাম বন্যাকবলিত। বছর না ঘুরতেই এসব এলাকার মানুষ আবারও বন্যার দুর্ভোগে পড়েছে। লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। জেলায় ৮৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১১৫০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।

জেলা প্রশাসন থেকে ফুলগাজী, পরশুরাম, সোনাগাজী, ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞার ত্রাণ কাজের জন্য নগদ ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১৬০ মেট্রিক টন চাল, ২২শ প্যাকেট উপবৃত্তি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যেসব এলাকার পানি নামতে শুরু করেছে, সেসব এলাকার রাস্তা সহ বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন ভেসে উঠতে শুরু করেছে। পুকুরের মাছ, ক্ষেতের ফসল, খামারের মুরগি ভেসে গেছে।

এর আগে টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) জেলার উত্তরের সীমান্তবর্তী পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী এলাকাগুলো বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। তবে ধীরে ধীরে এসব এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। অন্যদিকে, ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার কিছু অংশে এখনো লোকালয়ে পানি জমে আছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গেল বছরের বন্যায়ও মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের শতাধিক স্থানে ভেঙেছিল। পরে ২০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে বাঁধগুলো মেরামত করা হলেও বছর না পেরোতেই আবারও ভেঙেছে। পাউবোর যথাযথ তদারকি ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বাঁধ ভেঙে প্রতিবছর এমন দুর্ভোগে পড়তে হয় বলছেন তারা।

জেলা কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, এবারের বন্যায় মৎস্য খাতে ৮ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, কৃষিতে ৫ হাজার ৫৬৪ দশমিক ৬১ হেক্টর ফসলি জমি দুর্যোগে আক্রান্ত ও প্রাণিসম্পদে ৬৪ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫০ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ফুলগাজী উপজেলার কমুয়া এলাকার খামারি মো. রহিম বলেন, গত বছরের বন্যায় অন্তত ২০ লাখ টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এবারও পানিতে ডুবে মুরগি মারা গেছে। মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে। প্রতিবারই বাঁধ ভাঙে, পানি আসে, তারপর সকলে আশ্বাস দেয়। এসব এ জনপদে নিয়মে পরিণত হয়েছে।

ছাগলনাইয়া উপজেলার মহামায়া এলাকার বাসিন্দা ফরিদা সুলতানা বলেন, পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। তবে ঘরে পানি ঢুকে আসবাবপত্র অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা ঠিকভাবে পূর্বাভাস পাই না। পরিকল্পিত নদী শাসন ও বাঁধ নির্মাণ না করে পানি উন্নয়ন বোর্ড সবসময় শুধু ভারী বৃষ্টি আর উজানের পানিকে দায়ী করে কাজ সারেন। এই দুর্ভোগ থেকে কবে মুক্তি মিলবে, জানি না।

আকস্মিক ভাঙনস্থলের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, আগে শুধু ভাঙন এলাকার নাম অনুযায়ী ভাঙনস্থলের সংখ্যা জানতে পেরেছি। শুক্রবার থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সরেজমিন ঘুরে ভাঙনের চূড়ান্ত পরিসংখ্যান দিয়েছেন। সেজন্য চারদিন ধরে ২০টি ভাঙনের তথ্য থাকলেও এখন বেড়েছে।

তিনি বলেন, যেসব ভাঙনস্থল নদীর সঙ্গে মিশে গেছে সেগুলোতে এখনো লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। পানি নেমে যাওয়ার পর বাঁধের ভাঙন অংশের মেরামত কাজ শুরু হবে।

উল্লেখ্য, গেল বছরের ২৪ জুলাই-আগস্টে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে ফেনীর জনপদ। তারমধ্যে ১৯ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া বন্যার ভয়াবহতা ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সব ইতিহাস। ভয়াবহ এ বন্যায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৯ জন। এছাড়াও সড়ক যোগাযোগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মোটরযান, ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় প্রত্যেক খাতেই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়ে গেছে শত কোটি টাকা।

আফরোজা

×