ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

শেরপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের জীবন্ত সাক্ষী, শের আলী গাজীর মাজার

সাফিজল হক তানভীর, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, শেরপুর

প্রকাশিত: ০২:৪৮, ১৪ জুলাই ২০২৫

শেরপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের জীবন্ত সাক্ষী, শের আলী গাজীর মাজার

ছবি: জনকণ্ঠ

শেরপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী ইতিহাসে এক বিশিষ্ট নাম শের আলী গাজী। তিনি ছিলেন এক সাহসী, ন্যায়পরায়ণ এবং প্রজাবান্ধব নেতা, যিনি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময় স্থানীয় জনগণের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন। আজ তাঁর নামে শেরপুর সদর উপজেলার গাজিরখামার গ্রামে নির্মিত হয়েছে একটি মাজার, যা স্থানীয়ভাবে শের আলী গাজীর মাজার হিসেবে পরিচিত। এটি কেবল একটি ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, বরং এই অঞ্চলের মানুষের জন্য ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সংগ্রামের প্রতীক।

ইতিহাস অনুযায়ী, শের আলী গাজী ছিলেন একজন জমিদার এবং শাসক যিনি সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘব ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছিলেন। শোনা যায়, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি জনগণের মধ্যে ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়, কারণ তিনি কখনও ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি, বরং নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সবসময়।

বর্তমানে তাঁর সমাধিস্থলটি একটি পূর্ণাঙ্গ মাজারে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর বহু ভক্তগণ দূরদূরান্ত থেকে এসে এখানে দোয়া-মোনাজাত করেন। স্থানীয়ভাবে এখানে ওরস মাহফিলের আয়োজনও করা হয়, যেখানে ভক্তরা মিলিত হয়ে ফাতেহা পাঠ ও লঙ্গর বিতরণের মাধ্যমে দিনটি পালন করেন। এসময় এলাকার মানুষের মাঝে এক ধরনের আধ্যাত্মিক আবেশ এবং ঐতিহাসিক চেতনার উন্মেষ ঘটে।

শের আলী গাজীর মাজার এলাকাটি খুবই শান্ত ও নির্মল পরিবেশে অবস্থিত। মাজার চত্বরটি সাজানো হয়েছে নানা ফুলগাছ ও ছায়াদানকারী বৃক্ষে, যার মাঝে বসার ব্যবস্থা ও একটি ছোট মসজিদও রয়েছে। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, এখানে আসলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায় এবং দোয়ায় ফল পাওয়া যায়। ফলে এটি কেবল একটি ঐতিহাসিক স্থান নয়, বরং এক ধরনের আধ্যাত্মিক কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে উঠেছে।
স্থানীয়দের দাবি, সরকার যদি এই মাজারটি সংস্কার ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে, তবে এটি শেরপুর জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যে অনেক ইতিহাস গবেষক এবং সাংবাদিক মাজারের ঐতিহাসিক গুরুত্ব নিয়ে গবেষণা ও প্রতিবেদন করছেন। জেলা প্রশাসন এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ যদি মাজারের ইতিহাস সংরক্ষণ ও প্রচারে কাজ করে, তবে নতুন প্রজন্ম এখান থেকে শিক্ষা নিতে পারবে।

শের আলী গাজীর মাজার শুধু একজন ব্যক্তির কবরস্থান নয় এটি শেরপুরবাসীর সংগ্রাম, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আত্মমর্যাদার একটি পরিচয় বহন করে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ন্যায়ের পক্ষে সাহস নিয়ে দাঁড়ানো মানুষদের নাম ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে।

Mily

×