
ছবি: জনকণ্ঠ
জুলাই বিপ্লবে চট্টগ্রাম এক ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছে। অনেক ক্ষেত্রে সারা বাংলাদেশের আন্দোলনে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবেও ভূমিকা রেখেছে চট্টগ্রামের আন্দোলন।
চট্টগ্রামের আন্দোলনের কর্মসূচি ৬ জুলাই থেকে শহরকেন্দ্রিক হয়ে আসে। তখন থেকে আন্দোলন নিয়ে নানা পরিকল্পনা করতে হতো আমাদের। বিশেষ করে, ১৫ জুলাই থেকে যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা হয় সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ কর্তৃক, তখন থেকে চট্টগ্রাম শহরের আন্দোলনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম মহানগরে শৃঙ্খলা বিভাগ তৈরি করে আমাকে শৃঙ্খলা বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আন্দোলনের সময় সিদ্ধান্তগুলো যখন নেওয়া হতো, তখন সমন্বয়কদের বৈঠকের আগে চট্টগ্রামের দায়িত্বশীল, সমন্বয়কদের মধ্যে একটা অভ্যন্তরীণ মিটিং হতো, সেটার পক্ষেই সমন্বয়কদের বৈঠকে অধিকাংশ মতামত আসতো এবং সিদ্ধান্ত হতো।
আন্দোলনে নগরভিত্তিক জনশক্তিদের অর্গানাইজড করা, প্রোগ্রামস্থলের চারপাশে শৃঙ্খলা বিভাগ সাজানো, আন্দোলনের লজিস্টিক সাপোর্ট যেমন মাইক, ব্যানার, লাঠি, মারবেলসহ গুলতি, ইটের টুকরা এগুলোর ব্যবস্থা করা ছিল আমার দায়িত্ব।
এছাড়া, আন্দোলনের ফিল্ডে তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্তগুলো আমরা কয়েকজন মিলে নিতাম—১৫ জুলাই ছাত্রলীগ-পুলিশের যৌথ হামলার খবরে সন্ধ্যার আগে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলন শেষ করা, ১৬ জুলাই মুরাদপুর মোড় থেকে আমাদের কর্মসূচি আরম্ভ করে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করা ও সন্ধ্যার আগে কর্মসূচি শেষ করে শিক্ষার্থীদের নিরাপদে পৌঁছানো, ১৭ জুলাই লালদিঘির মাঠে জানাজা ঘোষণা, ১৮ জুলাই নতুন ব্রিজে দু’পাশ থেকে একযোগে মিছিল শুরু করা, বহদ্দারহাট মোড়ে অবস্থান তৈরি করা, ১৯ জুলাই দ্বিতীয় গায়েবানা জানাজার সিদ্ধান্ত, ২১ জুলাই কারফিউ ভেঙে প্রবর্তকে প্রথম মিছিল বের করা, ২২ জুলাই কারফিউ ভেঙে চকবাজারে মিছিল বের করা, ৩১ জুলাই আদালত চত্বরে জমায়েত, ২ ও ৩ আগস্ট আন্দরকিল্লা মসজিদ থেকে বড় জমায়েত নিয়ে নিউ মার্কেট মোড়ে অবস্থান, সর্বশেষ ৪ আগস্ট আওয়ামী চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সর্বপ্রথম স্লোগান দিয়ে জনশক্তিদের নিয়ে নিউ মার্কেট মোড় দখলে নেওয়ার মতো ইত্যাদি সব সাহসী সিদ্ধান্ত আন্দোলনের মাঠে আমাদের বাস্তবায়ন করতে হয়েছে।
রোদে শুকিয়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, ইট, লাঠি দিয়ে গোলাবারুদ মোকাবেলা করে, টিয়ারশেলের গন্ধ আর পুলিশের হামলা উপেক্ষা করে রাজপথে আমার অবস্থা ছিল সার্বক্ষণিক। গোয়েন্দা সংস্থার নানা সতর্কতা সত্ত্বেও পুরো জুলাইয়ের একটা দিনও আমি আন্দোলনের মাঠের বাইরে কিংবা আত্মগোপনে ছিলাম না।
আন্দোলন শেষ করে আবার শহীদদের লাশ গ্রহণ করতে যাওয়া, আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিতে ছুটে যাওয়া, গ্রেপ্তারকৃতদের খোঁজখবর নিতে আদালত–জেলখানায় যাওয়া-আসার দায়িত্বও পালন করতে হয়েছে। আন্দোলনের শৃঙ্খলা বিভাগ গঠন, লিগ্যাল সেল তৈরি, চিকিৎসা বিভাগ তৈরি করে জুলাই বিপ্লবে এক ঐতিহাসিক অবদান রেখেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর-দক্ষিণ। চট্টগ্রামে জুলাই আন্দোলনে চট্টগ্রামের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে শহীদ, আহত ও পঙ্গুত্বের সারি আরও অনেক বেশি দীর্ঘ হতো সম্ভবত।
ছাত্রজনতার প্রতিনিধি হিসেবে জুলাই বিপ্লবে সামনের সারির যোদ্ধা হিসেবে সিদ্ধান্তে ও বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে পেরে নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করছি। আল্লাহ আমাদের জুলাইয়ের চেতনাকে সমুন্নত রাখুক।
লেখক:
আবরার হাসান রিয়াদ
জুলাই যোদ্ধা, চট্টগ্রাম
মুমু ২