ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

ভিন্নধর্মী রপ্তানি পণ্য

প্রকাশিত: ২০:০৪, ১২ জুলাই ২০২৫

ভিন্নধর্মী রপ্তানি পণ্য

বিদেশে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের তালিকা দীর্ঘ, যদিও ভিন্নধর্মী পণ্যের রপ্তানি সম্ভাবনাও বিরাট। দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে রপ্তানিযোগ্য নতুন পণ্যের সম্ভাবনার দিকটি ভেবে দেখা প্রয়োজন। দেশে প্রতি বছর এক কোটির বেশি গরু ও মহিষ জবাই করা হয়। পশুর যৌনাঙ্গ, রক্ত, হাড়, শিং, ভুঁড়ি, লেজের লোম ও চর্বি কোনো কিছুই ফেলনা নয়। সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রয়েছে নানা ব্যবহার ও বাণিজ্যিক মূল্য। গরুর লিঙ্গ দিয়ে বানানো হয় কুকুরের খাবার। তাই বিদেশে এ পণ্যের চাহিদা ব্যাপক। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে মোট নয়টি প্রতিষ্ঠান প্রক্রিয়াজাত বুলস্টিক (ষাঁড় গরুর যৌনাঙ্গ) রপ্তানি করছে। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে শুধু মে মাসে ১৪ হাজার ৭৫২ কেজি বুলস্টিক রপ্তানি করেছে ৫টি প্রতিষ্ঠান, যার বাজারমূল্য ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, এই পণ্য যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় রপ্তানি হচ্ছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ যায় যুক্তরাষ্ট্রে। বাকি ৪০ শতাংশ কানাডায়। মান ও প্রকারভেদে প্রতি কেজি বুলস্টিকের দাম ১৮-৩৫ মার্কিন ডলার পর্যন্ত। যেহেতু এই পণ্যের প্রধান রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্র, তাই পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা এই পণ্যের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
গরু ও মহিষের বুলস্টিক (ষাঁড় গরুর যৌনাঙ্গ) থেকে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যায়- এ নিয়ে হয়তো খুব বেশি মানুষ ভাবেননি। তবে এর মধ্যেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় ২০ কোটি টাকার বুলস্টিক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৭ কেজি বুলস্টিক রপ্তানি হয়, যার ৯৫ শতাংশই গরুর। সে বছর অপ্রচলিত এই পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা আয় করে। দেশের প্রায় সব জেলা থেকে গরু ও মহিষের বুলস্টিক সংগ্রহ করেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। এ খাতের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, প্রতি মাসে ১৫-১৭ হাজার বুলস্টিক সংগ্রহ করেন তিনি ১৫টির বেশি জেলা থেকে। ব্যবসা করে প্রতি মাসে ১ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব হয়েছে তার পক্ষে। 
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ১ লাখ ২ হাজার ৮৯ কেজি বুলস্টিক রপ্তানি হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা। বুলস্টিক অপ্রচলিত পণ্য হওয়ায় এ ব্যবসায় ব্যাংকঋণ পেতে নানা সমস্যা বিদ্যমান। ব্যবসায়ীদের উপকারার্থে সরকার এ সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসুক, এমনটাই প্রত্যাশা। এ ধরনের পণ্য রপ্তানিতে আগে ১০-১৫ শতাংশ প্রণোদনা থাকলেও এখন তা কমে নেমে এসেছে ৬ শতাংশে। এদিকটাও পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে, যাতে এ পণ্য রপ্তানিতে ব্যবসায়ীরা আগ্রহ না হারান।

প্যানেল/মো.

×