
ইতিহাসের পাতায় আইয়ামে জাহেলিয়াতের সামাজিক অস্থিরতার চিত্র দেখেছি আমরা, পাথর নিক্ষেপে বনি আদমের হত্যাকাণ্ডের নির্মম ঘটনা পড়েছি। সে হাজার বছর আগের ঘটনা। আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তির এই সময়ে এসেও যদি পাথর নিক্ষেপে মানুষ হত্যার পৈশাচিক দৃশ্য দেখতে হয় সভ্য সমাজকে, তবে আমরা কোন বর্বর সমাজের নাগরিক? রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ইট-পাথর নিক্ষেপ করে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে হত্যা করা হয় ৩৯ বছর বয়সী ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে। মানুষ কতটা হিংস্র হলে এমন আচরণ করতে পারে। মৃত্যুর আগে তাকে পিটিয়ে প্রায় বিবস্ত্র করে শরীরের ওপর উঠে লাফানো হয়। এমনকি মৃত্যুর পর লাশকেও নিস্তার দেওয়া হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা, তদন্ত কর্মকর্তা ও নিহতের স্বজনদের কথায়, হত্যাকাণ্ডের এমন বিবরণ উঠে এসেছে।
গত শুক্রবার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্য দিবালোকে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে। গণধিকৃত ও সমালোচিত এ ঘটনায় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা সম্পৃক্ত। দেশের সব গণমাধ্যমে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
এ ঘটনায় পুলিশ ও র্যাব চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের সবাই বিএনপির অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। যদিও যুবদল, ছাত্রদল অভিযুক্তদের বহিষ্কার করেছে, কিন্তু কথা হলো যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তাদের সবাই সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। এত বড় পদে থেকে এমন হিংস্র আচরণ কীভাবে করে তারা? শুধু গ্রেপ্তার করাই শেষ কথা নয়, দ্রুত আইনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দৃষ্টান্তমূলক ন্যায়বিচার করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
মামলার তদন্তকারী ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, নিহত লাল চাঁদ একসময় যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ চাঁদাবাজি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকদিন ধরে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দেখা যায়, প্রকাশ্যে পিটিয়ে ও পাথর মেরে নৃশংসভাবে এক যুবককে হত্যা করা হচ্ছে। নিথর পড়ে থাকা লাল চাঁদের শরীরের বড় প্রস্তর খণ্ড দিয়ে আঘাত করছে কয়েকজন। লাল চাঁদ হত্যার ঘটনায় রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় ১৯ জনের নামোল্লেখ করে নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম একটি মামলা করেন। ১৫-২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় সারাদেশে সর্বমহলে ব্যাপক জনরোষ সৃষ্টি হয়েছে। গভীর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ, ইসলামী ছাত্রশিবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ অনেক দল ও সংগঠন। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজে সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন মিছিল করেছে। পুরান ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামী ছাত্রশিবির মিছিল করে মিটফোর্ড অভিমুখে যায় এবং প্রতিবাদ সমাবেশ করে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমরা বাংলাদেশে আবারও ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি, জুলাই-আগস্টের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। ফ্যাসিবাদ যদি নতুন মোড়কে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, এ দেশের তরুণ সমাজ আবার জেগে উঠবে নতুন আঙ্গিকে।
প্যানেল/মো.