ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

অক্টোবর ঘিরে গুমোট হাওয়া

আবদুর রহিম

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ১২ জুলাই ২০২৫

অক্টোবর ঘিরে গুমোট হাওয়া

* অন্তর্বর্তী সরকারের বড় পদে আসতে পারে পরিবর্তন 
* ভোট পেছাতে পারে; বিশেষ নীতিশিক্তি নিয়ে চালাচালি 
* ইসলামপন্থিদের একাংশ নিয়ে নানা ছক, বিস্ফোরণের শঙ্কা  

ছাত্রজনতার রক্ত বিজয়ের অভ্যুত্থানের এক বছর পার করছে দেশ। স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন। বড় ধরনের অঘটন ছাড়াই হাসিনার রেখে যাওয়া সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক কাঠামোতে শান্তনীতিতে পরিচালনা হচ্ছে কার্যক্রম। রয়েছে দেশের মানুষের সমর্থন। তবে চাপ চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর। স্বৈরাচার পতনের অভ্যুত্থানে রাজপথে থাকা বড় একটি অংশ চাচ্ছে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই দৃশ্যমান গণহত্যার বিচার, উপযুক্ত সংস্কার এবং নতুন সংবিধান রচনা।

অন্যদিকে বিএনপিসহ বড় দলগুলোর চাহিদা, সকল প্রক্রিয়াই থাকবে চলমান, এর মধ্যেই ভোটের আয়োজন নিশ্চিত করতে হবে। ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ভোট হতে হবে। এ নিয়ে সব দলগুলোকে একত্রিত করে চলছে ঐকমত্যের সিরিজ বৈঠক। তবুও খুলছেনা মত দ্বিমতের জটিল সমাধান। এমন প্রেক্ষাপটে আগামী রাজনীতি ঘিরে শুরু হয়েছে গুমোট হাওয়া। খুলতে পারে অনেক হিসাবের খাতা। রচিত হতে পারে নতুন অধ্যায়। অক্টোবরেই আংশিক পাওয়া যেতে পারে অভ্যুত্থান রাজনীতির ভালো মন্দের ফলাফল। অগ্নি পরীক্ষায় পড়তে পারে কিছু রাজনৈতিক দল। তবে সুরক্ষার চাদরে থাকবে জনগণ। বিশেষ নীতিশক্তির আওতায় আসতে পারে দেশ। এখন থেকেই সেই বিষয়গুলো নিয়ে বিশেষপাড়ায় চলছে চালাচালি।    

রাজনীতির চলমান ও আগামীর রুপরেখার সম্ভাবনা নিয়ে রাজনীতি, কূটনীতির নির্ভরযোগ্য সূত্রের সঙ্গে কথা হয় জনকণ্ঠের। পাওয়া গেছে অনেক সম্ভাবনা এবং অজানা হাওয়ার আভাস। সূত্রটি বলছে, আগামী অক্টোবর মাস বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ঘটতে পারে অনেক কিছু। পরিবর্তন হতে পারে রাজনীতি এবং সরকারের গতিধারা। কোন দিকে যাবে দেশ সেই হাওয়ার গতিও জানা যাবে। যদি সংবিধান সংস্কার, গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়ার দৃশ্যমান যাত্রার আগে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ভোটের জন্য চাপ অব্যাহত থাকে তাহলে বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি পদত্যাগের সম্ভানাও রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে করে দেশ কোনো সঙ্কটে পড়বে না। জনসমর্থনে বিশেষ নীতিশক্তিতে চলবে স্বাভাবিক কার্যক্রম। পিছিয়ে যেতে পারে নির্বাচনও।

কারণ ছাত্রজনতার অভ্যুত্থান প্রশ্নবিদ্ধ করে শুধুমাত্র ভোটের আয়োজন করে কালিমাযুক্তের দায় নেবেন না বিশ্ব দরবারে গ্রহণযোগ্য ও সম্মানিত সেই ব্যাক্তি। এরপর যদি বিশেষনীতি শক্তির যাত্রা শুরু হয়, সেখানে প্রধান টার্গেট থাকবে দেশের মানুষের ভাষা বুঝে, চাওয়া চাহিদায় গতিপথ ঠিক রাখা।পর্দার আড়ালের এসব হিসাব দৃশ্যমান পর্যন্ত দৃষ্টি রাখতে হবে রাজনীতির অক্টোবর মাস পর্যন্ত। যদি আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সঙ্কট দূরীভূত হয়ে যায় তাহলে যথা সময়ে ভোটের সম্ভাবনা থাকতে পারেও বলেও মত রয়েছে। এখন সেটি নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার উপর।

সংশ্লিষ্ট সূত্রটি বলছে, হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে অনেকগুলো লেয়ার কাজ করছে। দেশের সিংহভাগ মানুষই বাংলাদেশপন্থি। নানা মতবিরোধের মধ্যেই সবার আগে বাংলাদেশকে ভালোবাসেন। রাজনীতির মতদূরত্বের মধ্যেও ঐক্য বজায় রাখতে চেষ্টা করেন। এর মধ্যেও রাজনীতির আড়ালে ঢুকে পড়ে বিদেশি প্রেশক্রিপশন। অতীতে বাংলাদেশের সকল জাতীয় নির্বাচনে বিদেশি প্রেশক্রিপশন বড় শক্তি হিসেবে কাজ করেছে, আগামীতেও করবে। এখন থেকেই দেশদুনিয়ার নানা দরবারে চলছে বিশেষ বৈঠক। খোঁজা হচ্ছে আজ আগামীর হিসাব। ভোট প্রসঙ্গ নিয়ে ইতিমধ্যে রাজমাঠে শুরু হয়েছে বাগযুদ্ধ।

ইসলামপন্থিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর একাংশ চাচ্ছে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন। এ নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম (পীর সাহেব চরমোনাই) জানিয়েছেন, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনই সর্বোত্তম। এ পদ্ধতির পক্ষে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হয়েছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।তিনি বলেন, 'পিআর পদ্ধতিতে দলগুলো প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদীয় আসন পায়। এতে কোনো দল এককভাবে ক্ষমতা দখল করতে পারে না, ছোট দলগুলোরও সংসদে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। এই প্রক্রিয়ায় পারস্পরিক আলোচনা, আপস ও যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিবেশ তৈরি হয়। এতে একনায়কতান্ত্রিক প্রবণতা প্রতিহত করা সম্ভব।

এদিকে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা দেশে ঐক্যের পরিবর্তে বিভক্তিমূলক সমাজ এবং অস্থিতিশীল সরকার সৃষ্টির কারণ হতে পারে কিনা, এই বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে আরও একবার ভেবে দেখার জন্য আমি সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে বিনীত অনুরোধ করবো। সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের আড়ালে পুনরায় দেশে নিজেদের অজান্তে পতিত, পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের পথ সুগম করে দেবে, এই বিষয়টিও সবাইকে অত্যন্ত সিরিয়াসলি ভাবা দরকার বলেও মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

বাগযুদ্ধের এমন প্রসঙ্গ নিয়ে কূটনৈতিক ও রাজনীতির সূত্রটি বলছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সব সময় প্রভাব বিস্তার করে এমন দু একটি দেশ ইসলামপন্থি কয়েকটি দলকে ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে। এর মধ্যে নাম উল্লেখ করে সূত্রটি বলেছে, অতীতে হাসিনার অধিনে জাতীয় নির্বাচনসহ সকল স্থানীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছে চরমোনাইয়ের রাজনৈতিক দল। হাসিনার নির্বাচনকে প্রেশক্রিপশনের আদলে ভোটে অংশ নিয়ে বৈধতা দিয়েছে। এখন যে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার জন্য তাঁরা ভিন্ন প্রেশক্রিপশনে কাজ করছে না তা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

বিশ্বস্ত সূত্রটি বলছে, এটা প্রায় অনেকটাই নিশ্চিত আওয়ামী লীগ আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে না। যদি পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়,  তখন ধর্মীয় দু একটা দল, জাতীয় পার্টি, হিন্দুদের রাজনৈতিক দল এগুলোর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের অবস্থান মজবুত হয়ে পড়বে। তখন আওয়ামী লীগের স্বার্থেই বিদেশি প্রেশক্রিপশন বাস্তবায়ন হবে। আওয়ামী লীগ ভোটে না থাকলেও অন্যর পালে টিকে থাকবে। লক্ষ সিদ্ধ হবে হাসিনার দলীয় রাজনীতির। এজন্য আগে থেকেই বিদেশি প্রেশক্রিপশন ইসলামিক দলগুলোকে লোভের ফাঁদে ফেলছেন। তাদেরকে আসনের স্বপ্ন দেখানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রটি বলছে, হঠাৎ করেই জুলাই সনদ, সংবিধান এবং যৌক্তিক ইস্যুতে চুপ হয়ে ক্ষুদ্র দলগুলো শুধু ভোটের আহ্বান আর প্রক্রিয়ার বিষয় জানাচ্ছেন। এতে অবশ্যই আড়ালের উদ্দেশ্যে ধারণা পাওয়া যায়। বিশ্বস্ত সূত্রটি আরও বলছে, তবে সময়ের আলোকে জামায়াতে ইসলামী অনেক আপডেট হয়েছে। এই দলটি এখন অতীতের নীতি থেকে ফিরে বাংলাদেশমুখী হয়েছে। জনগণের চাওয়া এবং চাহিদার বাহিরে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। তারা সময়ের আলোকে যে সিদ্ধান্তটি নেওয়া প্রয়োজন সেটিই নিচ্ছে বর্তমান কাজেকর্মে তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। সময়মত নির্বাচন প্রসঙ্গ নিয়ে দলটির আরও নতুন সিদ্ধান্ত, নতুন চমক আসবে ধারণা করা হচ্ছে।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসিনার পতনের পর সারাদেশে বিচ্ছিন্নভাবে আওয়ামী লীগের কিছু গোপন মিছিল দেখা গেলেও এখন অনেকটাই নীরব। এ নিয়ে দৃষ্টি রাখা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যতগুলো বর্ডার রয়েছে সেগুলো আওয়ামী লীগ ব্যবহার করতে পারে। জুলাই অভ্যুত্থানে যেভাবে তাঁরা বিদেশি অস্ত্র ব্যবহার করে ছাত্রদের গণহত্যা চালিয়েছে সেই বিদেশি অস্ত্র দিয়ে পাহাড় এবং সীমান্ত এলাকায় প্রশিক্ষণ নিতে পারে। উদ্দেশ্যে বাস্তবায়নে তাদেরকে কিছু দেশ সাহায্যেও করতে পারে। এখন যে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে না তাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আওয়ামী লীগ যদি এই দেশে কখনো ফিরে তাহলে দেখা যাবে বর্ডার এলাকায় প্রশিক্ষিত জঙ্গি গোষ্ঠীর মাধ্যমে তাদের এই দেশে যাত্রা শুরু হতে পারে। তখন বিদেশে পালিয়ে থাকা সকল নেতারা একযোগে দেশে প্রবেশ করবে।

আওয়ামী লীগের সম্পদশালী ব্যাক্তিরা মিডিয়ার পেছনে বিশাল অর্থ ব্যয় করছেও বলেও জানান সূত্রটি। সম্প্রতি মব নামে বিশাল তথ্য সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে গণমাধ্যমের পাতায়। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানে যেসব সন্ত্রাসীরা অস্ত্রচালিয়ে ছাত্রজনতাকে খুন করেছে সেসব অস্ত্র উদ্ধার, হামলাকারীদের গ্রেফতার, হাসিনার প্রশাসনে সরকারের অসহযোগীতা নিয়ে কোনো প্রতিবেদন উঠে আসছে না। আওয়ামী অর্থে গণমাধ্যমে জুলাইকে ঢুবিয়ে দেওয়া হচ্ছে। 

বিশ্বস্ত সূত্রটি বলছে, এখন থেকে যদি পাহাড এবং বর্ডারে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি না থাকে অস্ত্র উদ্ধার না হয়, জুলাই সনদপত্র তৈরি না হয়, উপযুক্ত সংস্কার না হয় তাহলে শুধু অভ্যুত্থানে সামনে থাকা নেতাকর্মীরা নয়, স্বৈরাচার হাসিনা বিরোধী সব দল মহাঝুঁকিতে পড়তে পারে। জুলাই গণহত্যার দায় আওয়ামী লীগের পরিবর্তে শুধু ছাত্ররা নয়, যে সমস্ত রাজনৈতিক দল এখন নীরব রয়েছে তাদেরও বহন করতে হবে।

যদিও বিএনপি মনে করছে তাদের গায়ে জুলাই অভ্যুত্থানের দায় আসবে না তবে সময়ের প্রেক্ষাপটে তাদেরও যে দায় চলে আসতে পারে তা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সম্প্রতি জুলাই ঘোষণাপত্র আদায়ে মাঠে নেমে আবু সাইদের কবরের সামনে দাঁড়িয়ে এক দফার ঘোষক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন উপযুক্ত সংস্কার, জুলাইয়ে গণহত্যার দৃশ্যমান বিচার ও নতুন সংবিধান নিশ্চিত করতে হবে। সারাদেশে জুলাই যাত্রায় এ তিনটি ইস্যু নিয়ে প্রতিদিনই নতুন দলটি কথা বলছেন। 

রাজনীতির কার্যক্রমে নজর রাখা সূত্রটি বলেছে, সকলের ঐকমত্যে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা অব্যহাত রেখেছেন ড. ইউনূস। কিন্তু মাঠের দৃশ্যপটে সমঝোতার ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না। যার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফেব্রুয়ারিতে ভোট হতে পারে সরকারের পক্ষ থেকে এমন সম্ভাবনার কথা বলেছেন তবে নিশ্চয়তা দেননি। বেলাশেষে, জুলাই সনদ, গণহত্যার বিচার, মৌলিক সংস্কারে ঐকমত্যে না হলে নির্বাচন আয়োজনের মতো দায়বার ড. ইউনূস কখনোই নেবেন না বলে মতই বেশী পাওয়া যাচ্ছে।

যার আমলনামা দৃশ্যমান দেখা যেতে পারে চলতি বছরের অক্টোবরে। হতে পারে নানা পালাবদল। সূত্রটি বলছে, সবচাইতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে হাসিনার প্রশাসনে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সব গুরুত্বপূর্ণ যায়গায় হাসিনার অনুগতরা এখনও স্ব অবস্থানে। যারা নির্বাচন সংস্কারে কাজ করছেন তাঁরা বিদেশের হাওয়া বাতাসে বড় হওয়া। দেশের বাস্তবিক মাটির সঙ্গে দূরত্ব। সব মিলিয়ে নির্বাচনের ধাক্কা এই সরকার হজম করা কষ্ট হয়ে যাবে। সারাদুনিয়ায় ড. ইউনূসের অবস্থান নষ্ট হবে। 

প্রাসঙ্গিক ইস্যু নিয়ে কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও রাজনৈতিক তাত্ত্বিক ফরহাদ মজহার এক মতামতে বলেছেন, ৫ আগস্টের পরে ৮ আগস্ট শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান রক্ষার শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ‘সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব’ ঘটেছে। নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়নের যে গাঠনিক ক্ষমতা বা ‘কনস্টিট্যুয়েন্ট পাওয়ার’ জনগণ পেয়েছিল, জনগণের সেই ক্ষমতার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে।সংস্কার প্রক্রিয়ার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে যাদের যুক্ত করা হলো, তাদের খুব কমই গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন; কেউ কেউ গণঅভ্যুত্থানের সমর্থকও ছিলেন না। গণবিচ্ছিন্ন এলিট বা অভিজাত শ্রেণির নেতৃত্বে সংস্কার চলছে। নির্বাচন যে বাংলাদেশকে একটা ভালো জায়গায় নেবে এটা সাধারণ মানুষ তো বিশ্বাস করে না। তাহলে জবরদস্তি করে এটা চাপিয়ে দেওয়া ভুল। আবার সাধারণ মানুষ এই আস্থাও হারিয়েছে যে, ড. ইউনূস তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবেন। এটা হলো রাজনৈতিক বাস্তবতা। জনগণ যা চাইছে তা বোঝার মতো মানসিকতা অন্তর্বর্তী সরকারের চাই। আমাদের ভবিষ্যৎটা খুব ভালো বলে আমি মনে করছি না। ফলে একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হবে।

একদিকে ফ্যাসিস্ট শক্তি– আওয়ামী লীগ নামে যেটি হাজির ছিল, বাঙালি জাতিবাদ আকারে হাজির ছিল; আমাদের দুর্বলতার সুযোগে পরাজিত শক্তি শক্তিমান হবে। ফলে জনগণের গণসার্বভৌমত্ব বা গণআকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে যে একটা গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিকাশের সুযোগ ছিল, সেটি অনেক বেশি রুদ্ধ হবে।

 

রিফাত

×