ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১

জাতীয়

জাতীয় বিভাগের সব খবর

জাতীয় প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বললেন আসিফ নজরুল

জাতীয় প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বললেন আসিফ নজরুল

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, জাতীয় স্বার্থে সব প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন। তিনি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের একটি মন্তব্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ধন্যবাদ জানান। এক ফেসবুক পোস্টে আসিফ মাহমুদ লিখেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকা উচিত। জনগণের কল্যাণে কে কত বেশি অগ্রসর হতে পারে, সেই চেষ্টাই রাজনীতির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ফ্যাসিবাদী শক্তি ছাড়া আর কারও প্রতি শত্রুতা থাকা উচিত নয়। তিনি আরও বলেন, "শত প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও জাতীয় প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। সকল আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদার প্রশ্নে আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে।" এই বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নতুন বার্তা এবং গণতান্ত্রিক ঐক্যের প্রাসঙ্গিকতাকে সামনে নিয়ে এসেছে।

সাতছড়ি বনে বিলুপ্তপ্রায় এশিয়াটিক ব্ল্যাক ভালুকের সন্ধান

সাতছড়ি বনে বিলুপ্তপ্রায় এশিয়াটিক ব্ল্যাক ভালুকের সন্ধান

জেলার চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের গভীর অরণ্যে এশিয়াটিক ব্ল্যাক প্রজাতির একটি ভালুকের সন্ধান পাওয়া গেছে। বিরল এই প্রজাতির বন্য ভালুক অত্যন্ত আক্রমণাত্মক স্বভাবের হয়। ইতোমধ্যে বনের ভেতরে পর্যটকসহ জনসাধারণের প্রবেশে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে উদ্যান কর্তৃপক্ষ।  বৃহস্পতিবার  রাতে এসব তথ্য দেন সাতছড়ি বন্যপ্রাণী বিট কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ। মামুনুর রশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চুনারুঘাটের রঘুনন্দন পাহাড়ে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের অবস্থান। ২৪৩ হেক্টর আয়তনের এ উদ্যানের পাশ ঘেঁষে আছে ৯টি চা-বাগান। উদ্যানের ভেতরে টিপরাপাড়ায় পাহাড়ি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ২৪টি পরিবার বসবাস করে। ১৯৭ প্রজাতির জীবজন্তু ও ১৫০ থেকে ২০০ প্রজাতির পাখি আছে উদ্যানে। বাংলাদেশের সংরক্ষিত এ বনাঞ্চল পাখিদের অভয়াশ্রম। বনের ভেতরে লজ্জাবতী বানর, উল্লুক, চশমাপরা হনুমান, মুখপোড়া হনুমান, কুলু বানর, মেছোবাঘ, মায়া হরিণও আছে। সাতছড়ির টিপরা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বাসিন্দা হারিস দেববর্মা শৌখিন ফটোগ্রাফার হিসেবে পরিচিত। তিনি বনের ভেতরে প্রাণ-প্রকৃতির নানা ছবি তোলেন। সম্প্রতি তিনি উদ্যানের গভীর অরণ্যে ছবি তুলতে গিয়ে বিরল প্রজাতির বন্য ভালুকের (এশিয়াটিক ব্ল্যাক প্রজাতি) সন্ধান পান। সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রাণীটির ছবি তোলেন। হারিস দেববর্মা বলেন, আমি বিরল প্রজাতির ভালুকটি দেখে বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে এই বনে ওদের বসবাস আছে। দেখামাত্রই ছবি তুলতে দেরি করিনি। পরে সেই ছবি প্রাণী বিশেষজ্ঞদের দেখানোর পর নিশ্চিত হই যে প্রাণীটি এশিয়াটিক কালো ভালুক। বন বিভাগ বলছে, এশিয়াটিক ব্ল্যাক জাতের এ ভালুক বিলুপ্তপ্রায়। এরা অত্যন্ত আক্রমণাত্মক স্বভাবের হয়। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ধারণা, ছোট-বড় মিলিয়ে বনে এ প্রজাতির ১০ থেকে ১২টি ভালুক আছে। এ প্রজাতির ভালুকের কালো পশম, একটি হালকা বাদামি মুখ ও বুকে একটি স্বতন্ত্র সাদা বা ক্রিমি প্যাঁচ থাকে, যা কখনো কখনো ইংরেজি ‘ভি’ অক্ষরের মতো দেখতে হয়। প্রাপ্তবয়স্ক ভালুকের ওজন ৬০ থেকে ২০০ কেজি। গড় ওজন ১৩৫ কেজি। সর্বভুক এ প্রাণী পোকামাকড়, বিটল লার্ভা, অমেরুদ-ী প্রাণী, মৌমাছি, ঘাস, ছাল, শিকড়, কন্দ, ফল ইত্যাদি খায়। বিট কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন, আমাদের ভিলেজার হারিস দেববর্মার মাধ্যমে আমরা প্রথম সাতছড়িতে এ ধরনের ভালুক থাকার বিষয়টি জানতে পারি। পরে আমরা অনুসন্ধান করে সত্যতা পাই। এটি বিরল প্রাণী। এটির সংরক্ষণে আমরা কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছি। পর্যটকদের উদ্যানের ভেতরে প্রবেশে নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকার বিষয়টি সতর্ক করেছি। তবে এখন পর্যন্ত কেউ এর দ্বারা আক্রান্ত হয়নি।  তিনি বলেন, তারা ভালুক থাকার বিষয়টি জানার পর নজরদারি বাড়িয়েছেন। পাশাপাশি বন ভ্রমণকারীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, সাতছড়ি বনের ভেতরে বসবাস করা মানুষ বিশেষ করে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে বন্যপ্রাণী রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে আরও আন্তরিক হতে হবে। প্রাণীগুলো কেউ যাতে শিকার বা নিধন না করে, সে ব্যাপারে সতর্ক করতে হবে। যে ভালুকের সন্ধান মিলেছে, তার বসবাসযোগ্য পরিবেশ ও খাদ্য জোগানের দায়িত্ব এখন বন বিভাগের। একই কথা বলেছেন পরিবেশ প্রেমিক সাংবাদিক আব্দুল জাহির মিয়াও।

টিকা সংকটে ওমরাহ যাত্রীরা বিপাকে

টিকা সংকটে ওমরাহ যাত্রীরা বিপাকে

হঠাৎ সৌদি আরব হজযাত্রীর মতোই ওমরাহ ও ভিজিট ভিসার যাত্রীদের জন্যও মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা বাধ্যতামূলক করায় বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ। কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সৌদি আরবের এ ধরনের আকস্মিক সিদ্ধান্তের দরুন এখন ঢাকায় দেখা দিয়েছে টিকা সংকট। হজযাত্রীদের সরকারিভাবে মেনিনজাইটিজ বিনামূল্যে দেওয়া হলেও ওমরাহ যাত্রীদের এ টিকা কিনে নিতে হচ্ছে। দেশের একাধিক প্রতিষ্ঠান এ টিকা প্রস্তুত করলেও এখন পর্যন্ত শুধু ইনসেপ্টাই তা বাজারজাত করছে। যার দাম রাখা হচ্ছে এক হাজার টাকা। অভিযোগ রয়েছে এখন অনেক জায়গায় এ টিকারও সংকট দেখা দিয়েছে। পরিণামে ভিসা ও টিকিটের ব্যবস্থা নিশ্চিত হলেও অনেকেই টিকার সংকটে রমজানের আগে ওমরাহ করার সিদ্বান্ত বাতিল করছেন। এজেন্সিগুলোর অভিযোগ-ওমরাহ করতেও টিকা নিতে হবে- সৌদি সরকার এমন ঘোষণা এক মাস আগে দিয়েছে। আর ঢাকায় সেটা জানানো হয়েছে গত সপ্তাহে। অথচ বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এজেন্সি যোগাযোগ করলেও ধর্ম মন্ত্রণালয়  বলছে- এ দায় তাদের নয়। জানা গেছে, সৌদি আরব গত সপ্তাহে এ ঘোষণা দেওয়ার পর ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক  বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এ ওমরাহ ও ভিজিট ভিসার যাত্রীদের জন্য এ নোটিস জারি করে। ওই নোটিসে বলা হয়েছে, যারা ওমরাহ বা হজ করতে যাবেন   অথবা ভিজিট ভিসায় সৌদি আরব যাবেন তাদের সবার জন্যই এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে। সৌদি আরবে ভ্রমণের কমপক্ষে ১০ দিন আগে মেনিনজাইটিসের টিকা নিতে হবে। ভ্রমণের সময় সেই টিকা নেওয়ার সনদ সঙ্গে রাখতে হবে। এক বছরের নিচের শিশুদের এই টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। কেউ যদি গত ৩ বছরের মধ্যে টিকা নিয়ে থাকেন- তাহলে তাকে সৌদি প্রবেশে নতুন করে টিকা দিতে হবে না। এর আগে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে এ নিয়ম বাস্তবায়নের জন্য সৌদি আরবের সিভিল এভিয়েশন দপ্তর এরই মধ্যে সব এয়ারলাইন্সকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। এই টিকা ছাড়াও কয়েকটি দেশের ওমরাহ যাত্রীদের করোনাভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, পীতজ্বর এবং পোলিওর টিকা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য হজযাত্রীদের জন্য মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিজস্ব বাজেট থেকে এ টিকা দিয়ে থাকে। এতে হজযাত্রী প্রতি সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। তবে হঠাৎ করেই ওমরাহ এবং ভিজিট ভিসার যাত্রীদের জন্য সৌদি সরকার টিকা বাধ্যতামূলক করায় দুশ্চিন্তা-দুর্ভোগ দেখা দেয়। বিশেষ করে এ টিকাই এখন দুর্লভ হয়ে গেছে। জানা গেছে, নতুন ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এ টিকা নিতে হবে যাত্রার অন্তত ১০ দিন আগে। সে হিসেবে বিনা টিকায় ওমরাহ করার সুযোগ শেষ হচ্ছে আগামী ৩১ জানুয়ারি। তারপর যারাই ওমরাহ কিংবা ভিজিজ ভিসায় সৌদি যেতে চান তাদের জন্য ওই টিকা বাধ্যতামূলক। এ অবস্থায় শুরু হয়ে গেছে টিকা নিয়ে ভোগান্তি। যদিও টিকার কোনো সংকট হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২৮ জানুয়ারির পর থেকে মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জার এই টিকা সহজেই মিলবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর। তিনি জানান, সিভিল সার্জন অফিসের মাধ্যমে এই টিকা জেলা শহরেও পাওয়া যাবে। তবে এই টিকা সরকারিভাবে দেওয়া হবে না। অর্থাৎ প্রত্যেককে কিনে নিতে হবে টিকা। এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার টাকা। দেশীয় প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি টিকা ইনগোভ্যাক্স পাওয়াটা খুব কঠিন কিছু নয়। তিনি গণমাধ্যমকে আরও জানিয়েছেন. ওমরাহের ক্ষেত্রে যদিও আমরা টিকা কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনা করছি, কিন্তু এটা সরকারিভাবে দেওয়া হবে না। বেসরকারিভাবে প্রত্যেককে কিনে নিতে হবে। আমরা ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে চুক্তি করেছি। তাদের  তৈরি  ইনগোভ্যাক্স টিকাটি মাত্র এক  হাজার  টাকায় নেওয়া যাবে। তবে এর বাইরেও আরও অনেকগুলো কোম্পানির টিকা বাজারে রয়েছে। যে কেউ চাইলে একটু বেশি দামে অন্য যে কোনো টিকাও নিতে পারবেন। আমরা এ ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা রাখছি না।   এদিকে হজ এজেন্সিগুলো জানিয়েছে, এ টিকা বাধ্যতামূলক করার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গেছে ভোগান্তি। এতদিন এ টিকা বাজারে না চললেও এখন শুরু হয়ে গেছে সংকট। চাহিদা বাড়ায় দামও বেড়েছে, আবার পাওয়াও যাচ্ছে না সর্বত্র। এদের সঙ্গে যোগ হয়েছে সৌদি প্রবাসীদেরও দুশ্চিন্তা। কে বা কারা রটিয়েছে, সৌদি প্রবাসী কর্মীদেরও এ টিকা বাধ্যতামূূলক। এতে অনেকেই বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে টিকা না পেয়ে গত মঙ্গলবার পান্থপথ এলাকায় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনও করেন সৌদি প্রবাসীরা। পরে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয় প্রবাসী শ্রমিকদের টিকার বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু ওমরাহ যাত্রীরাও এ সংকট থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বেইলি রোডের মাহমুদ জানান, তিনি সপরিবারে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি ওমরাহ করতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।  ভিসা ও বিমানের টিকিট কাটাও হয়ে গেছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এজেন্সির মাধ্যমে জানতে পারেন যে, যাত্রার ১০ দিন আগে তাকে মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা নিতে হবে। এ টিকার খোঁজ করতে গিয়ে কোনো কূল-কিনারা করতে পারেননি। এ অবস্থায় তিনি বিমানের টিকিট বাতিল করেন। তার মত উত্তরা শহীদ উল্লাহ, ইব্রাহিম খলিল রেজা ও মিরপুরের খোরশেদ আলমও উমরাহ যাবার সিদ্বান্ত বাতিল করেন। এ টিকা নিয়ে সংকটের কথা জানিয়েছেন এজেন্সিগুলোও। কয়েকটি এজেন্সি মালিক জানান, এ টিকা নিয়ে শুধু সৌদিগামী যাত্রীরাই ভোগান্তিতে নয়, এজেন্সিগুলোও ক্ষতির মুখে পড়েছে। এয়ার টাচ এজেন্সির মালিক মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী বলেছেন প্রথম প্রথম একটু জটিলতা হচেছ। তবে সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ ধর্মমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছ থেক্ েবিষয়টি আরও সহজলভ্য করা। যদিও এখন অনেকেই ফোনে জানতে চাচেছ। আমরা কোনো জবাব দিতে পারছি না। অনেকেই টিকিটের তারিখ পরিবর্তন করে জানুয়ারিতে আনতে চাচ্ছেন। কিন্তু এর মধ্যে বিমানগুলোর ফ্লাইট পাওয়া যাচ্ছে না। পেলেও দ্বিগুণের বেশি ভাড়া চাওয়া হচ্ছে। বাধ্য হয়ে অনেকে টিকিট বাতিল করছেন। এদিকে সৌদি সরকারের আকস্মিক ঘোষণায় উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় নিতে রাজি নয় ধর্মমন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলছে, হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে মন্ত্রণালয় সরাসরি যুক্ত থাকায় হজযাত্রীদের দুটি টিকা ফ্রি দেওয়া হয়। কিন্তু ওমরাহ ব্যবস্থাপনায় সরকার বা মন্ত্রণালয়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তাই এ বিষয়ে সৌদি সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আর ওমরাহযাত্রীদের যাওয়া-আসার কোনো ক্ষেত্রেই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ন্যূনতম সম্পৃক্ততা নেই। এমনকি সৌদি সরকার বা দূতাবাসও এ নিয়ে অফিসিয়ালি তাদের কিছু জানায়নি। ফলে আগ বাড়িয়ে এ নিয়ে তারা কোনো সিদ্ধান্তও নেবে না। জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ওমরাহ সৌদি সরকার ও এদেশের এজেন্সিগুলো ব্যবসা করছে। এখানে ধর্ম মন্ত্রণালয় কোনোভাবে সম্পৃক্ত নয়। সৌদি সরকার ও দূতাবাসকে ধর্ম মন্ত্রণালয় বারবার বলেছে যে, যারা ওমরাহ করতে যাবেন- তাদের তথ্যগুলো যেন মন্ত্রণালয় পায় সেই ব্যবস্থা করা। শুধু তাই নয়, সবশেষে বলা হয়েছে যে, যারা ওমরাহ করতে যাবেন তারা মন্ত্রণালয়ের একটি ফরম পূরণ করে গেলেও সরকারের কাছে তথ্য থাকে। কিন্তু সেটি হয়নি। ফলে প্রতিবছর বা মাসে কতজন ওমরাহ করতে যান তার কোনো তথ্য সরকারের কাছে নেই। ধর্মমন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মঞ্জুরুল হক বলেন, এটা এত জটিল কিছু নয়। ওমরাহ হয়- ব্যক্তি আর সৌদি সরকারের মধ্যে। সৌদি সরকার ভিসা দেয়, আর ব্যক্তি টিকিট কেটে চলে যান। এখানে মন্ত্রণালয়ের ন্যূনতম কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এখন টিকার ইস্যু সামনে আসতেই সবাই ধর্ম মন্ত্রণালয়কে দোষারোপ করছে। আমরা তো টিকা আমদানি বা বিক্রি করি না। এটি করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ফলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এখানে কার্যত কিছুই করার নেই। তবে এ ইস্যু বড় হয়ে দাঁড়াবে না। টিকার সংকট সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, সৌদি সরকারের আকস্মিক সিদ্ধান্তের দরুন এ জটিলতা দেখা দিয়েছে। যদিও আমরা নির্ধারিত সময়ের আগেই সবকিছু ব্যবস্থাপনা করে ফেলব। ইতোমধ্যে আমরা পুরোদমে কাজ শুরু করে দিয়েছি। টিকার জন্য মফলস্বল থেকে যাত্রীদের ঢাকা আসতে হবে না। সিভিল সার্জন অফিসের মাধ্যমে নিজ নিজ জেলাতেই টিকা নিতে পারবেন। আমরা সিভিল সার্জনদের মাধ্যমে আগেই টিকা নেওয়ার কেন্দ্র ঠিক করে দেব। আমরা এ মাসের শেষের দিকে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করতে পারব। প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে যাতে কারোরই খুব বেশি ভোগান্তি না হয়। আমরা তাদের পাসপোর্টের সঙ্গেই টিকা সার্টিফিকেটটি যুক্ত করে দেব। যাতে এয়ারপোর্টে পাসপোর্ট দেখিয়ে যাত্রীরা কোনো ভোগান্তি ছাড়াই চলে যেতে পারেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে- তাদের সঙ্গে টিকা নিয়ে ইসসেপ্টার সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে। চুক্তি মোতাবেক বাজারে সুলভ মূল্যে এটিকার সরবরাবহ নিশ্চিত করা হবে। চলতি সপ্তাহেই বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের কাছ থেকে এই টিকা কিনে নিয়েছে। রাজধানীর ল্যাবএইড, প্রাভা হেলথ, ভাইরোলজি ডিপার্টমেন্ট (বিএসএমএমইউ), প্রিভেন্টাসহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন সেন্টারে এই টিকা পাওয়া যাচ্ছে। ইনসেপ্টার উৎপাদিত মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকার ব্র্যান্ড নাম হচ্ছে- ইনগোভ্যাক্স এসিডব্লিউওয়াই। ইনসেপ্টা নিশ্চিত করেছে তাদের কাছে এ টিকা পর্যাপ্ত আছে। গত সপ্তাহেই ৮ হাজার টিকা বাজারে ছাড়া হয়েছে। আরও প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক টিকার মজুত রয়েছে।  প্রতিমাসেই ৪০ হাজার ডোজ টিকা তৈরি করার সক্ষমতা তাদের রয়েছে। কাজেই টিকার কোনো সংকট নেই।

হাসপাতাল থেকে ছেলের বাসায় ফিরছেন খালেদা জিয়া

হাসপাতাল থেকে ছেলের বাসায় ফিরছেন খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। তবে এখনো তাঁর লিভার প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়নি। শুক্রবার রাতে দ্য লন্ডন ক্লিনিক থেকে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ফিরছেন। দলের চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, সতেরো দিন চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকার পর ছাড়পত্র পাচ্ছেন খালেদা জিয়া। ডা. জাহিদ বলেন, ‘সবকিছু ঠিক থাকলে, রিপোর্টগুলো আসলে, ইনশাআল্লাহ্, ম্যাডামের হাসপাতাল থেকে ছুটি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। গতকালও একজন চিকিৎসক দেখে পরীক্ষা করানোর জন্য দিয়েছিলেন, যেগুলো আজ করা হচ্ছে। সেগুলো যদি করানো শেষ হয়, সব ঠিক থাকে তাহলে হয়তো ইভনিংয়ে ছুটি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে ছুটি পেলেও উনি সার্বক্ষণিক প্রফেসর জন প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রস, এই দুইজনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন থাকবেন এবং ম্যাডামের যে মেডিক্যাল বোর্ড আছে তারাও থাকবেন। অর্থাৎ ইউকের যে নিয়ম, সেই নিয়ম মেনেই উনার চিকিৎসা চলবে।’ গত ৭ জানুয়ারি খালেদা জিয়া কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর পর লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হন। এই হাসপাতালের লিভার বিশেষজ্ঞ জন প্যাট্রিক কেনেডির নেতৃত্বাধীন মেডিক্যাল বোর্ডের অধীনে তার চিকিৎসা চলছে। ৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। লন্ডনে সংবাদমাধ্যমের কাছে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার তথ্য জানিয়েছেন এ জেড এম জাহিদ হোসেন। বিএনপি চেয়ারপারসন কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম এখন সার্বিকভাবে অনেকটা বেটার আছেন। কিন্তু যে কথাটা আমরা আগেও বলেছি, উনার লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। কারণ মনে রাখতে হবে, আমি আগেও এখানে (লন্ডন ক্লিনিকের সামনে) বলেছি, উনার বয়সটা একটা বিবেচ্য বিষয় এবং উনার লিভার ডিজিজ, উনি জেলখানায় যখন ছিলেন একাকিত্ব এবং বলতে গেলে যে চিকিৎসা উনার প্রয়োজন ছিল, সেই চিকিৎসা থেকে উনাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আর দীর্ঘ সময় আটকে রাখার কারণে যে সময়ে উনাকে বিদেশে নিয়ে আসলে হয়তো আরও দ্রুত সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। চিকিৎসকদের বক্তব্য হচ্ছে, হয়তো আগে হলে নতুন চিন্তাভাবনা করা যেত।’ তিনি বলেন, ‘এই অবস্থার মাঝে এখন পর্যন্ত আগামীতে লন্ডন ক্লিনিকের মেডিক্যাল বোর্ডের যে চিকিৎসা অর্থাৎ ওষুধের মাধ্যমে উনার বিভিন্ন রোগের যে চিকিৎসা চলছে, সেটা অব্যাহত রাখার জন্য এখানকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং জন হপকিন্সের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ সবাই মোটামুটি একমত। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা চলবে। উনার শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে যে সকল রিপোর্টের ফলাফল এখনো আসে নাই- কয়েকটা তো বাইরেও পাঠানো হয়েছে- সেইগুলো আসা সাপেক্ষে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের সুস্থতা যাতে অব্যাহত থাকে সেজন্য দেশবাসীর কাছে তার পরিবার এবং তারেক রহমানের পক্ষ থেকে দোয়া চাওয়া হয়েছে বলে জানান এ জেড এম জাহিদ হোসেন। চিকিৎসার জন্য সবশেষ ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। পরের বছর দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাগারে যেতে হয় তাকে। কোভিড মহামারি দেখা দিলে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাহী আদেশে তাঁকে মুক্তি দিয়ে বাড়িতে থাকার সুযোগ করে দিলেও বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। তখন বিএনপির অভিযোগ ছিল খালেদা জিয়াকে সরকার গৃহবন্দি রেখেছেন।  ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর মুক্তি পান খালেদা জিয়া। তারপরই চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান তিনি।

বাংলাদেশের সাড়ে তিন কোটি শিশুর পড়াশোনা বিঘ্নিত

বাংলাদেশের সাড়ে তিন কোটি শিশুর পড়াশোনা বিঘ্নিত

চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার প্রভাবে ২০২৪ সালে স্কুলগামী প্রায় ২৪ কোটি ২০ লাখ শিশুর পড়াশোনা বিঘ্নিত হয়েছে। ৮৫টি দেশের স্কুলশিক্ষার্থীদের প্রতি সাতজনে প্রায় একজন চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার শিকার। এর মধ্যে সাড়ে তিন কোটি শিশুই বাংলাদেশের। আগামী বছরগুলোতে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়। সংস্থাটি বলেছে, বিশ্বজুড়ে জলবায়ু সংকটের ফলেই শিক্ষায় এমন প্রভাব পড়ছে। এরমধ্যে তাপপ্রবাহই অন্যতম। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথেরিন রাসেল সতর্ক করে বলেন, চরম আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ‘অধিকতর ঝুঁকিতে’ আছে শিশুরা। এক বিবৃতিতে ক্যাথেরিন বলেন, ‘শিশুদের শরীর বয়স্কদের তুলনায় দ্রুত উষ্ণ হয় এবং ধীরগতিতে ঠান্ডা হয়। ইউনিসেফের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, যেসব শ্রেণিকক্ষে প্রচণ্ড গরমে কোনো স্বস্তির ব্যবস্থা নেই, সেখানে শিশুরা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না। আবার যদি স্কুলে আসা-যাওয়ার রাস্তা ডুবে যায় বা পানিতে স্কুল প্লাবিত হয়ে, তাতেও তারা ক্লাসে যেতে পারে না। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে বাংলাদেশ, কলম্বিয়া, ভারত, থাইল্যান্ড ও ফিলিপিন্সে শুধু এপ্রিল মাসেই ১১ কোটি ৮০ লাখ শিশুসহ ওই বছর অন্তত ১৭ কোটি ১০ লাখ শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে ফিলিপিন্সে শিশুদের হাইপারথার্মিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার বাইরে থাকা হাজারো স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দশকের পর দশক জীবাশ্ম জ্বালানির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারসহ মানুষের নানা রকম কর্মকাণ্ড এই পৃথিবীকে উষ্ণ করে তুলেছে এবং আবহাওয়ার রূপ বদলে দিয়েছে। গত বছর বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে প্রথমবারের মতো এটি সাময়িকভাবে হলেও ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণায়নের প্রান্তসীমা অতিক্রম করেছে। আবহাওয়ার এ অবস্থায় বর্ষা মৌসুমে আগের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত ও গ্রীষ্মকালে বেশি শুষ্কতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তা ছাড়া বাড়ছে তাপপ্রবাহ ও ঝড়। ফলে লোকজন আরও বেশি দুর্যোগের ঝুঁকিতে পড়ছে। ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে গত বছর ২৪ কোটির বেশি স্কুলশিশুর পড়াশোনা বিঘ্নিত হওয়ার যে পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে, সেটি একটি রক্ষণশীল অনুমান। কেননা, এ ক্ষেত্রে তথ্যপ্রাপ্তিতে ঘাটতি ছিল। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক জানান, সহজলভ্য যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যায়, চরম আবহাওয়ার প্রভাবে ২০২৪ সালে দেশগুলোতে কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময় ক্লাস স্থগিত রাখতে হয়, ছুটি বাড়াতে হয়, স্কুল খোলা বিলম্বিত হয়, পাঠদানের সূচি বদলায়, এমনকি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে স্কুলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত বা বিধ্বস্ত হয়। অনেক দেশে স্কুলবর্ষ শুরুর মাস সেপ্টেম্বরও চরম আবহাওয়ার কারণে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয় গত বছর। ওই মাসে ১৮টি দেশের স্কুলে পাঠদান স্থগিত রাখা হয়। বিশেষত এর কারণ ছিল, পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সৃষ্ট টাইফুন ইয়াগির তাণ্ডব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দশকের পর দশক জীবাশ্ম জ্বালানির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারসহ মানুষের নানা রকম কর্মকাণ্ড এই পৃথিবীকে উষ্ণ করে তুলেছে এবং আবহাওয়ার রূপ বদলে দিয়েছে। জলবায়ুসংশ্লিষ্ট কারণে শিশুদের পড়াশোনা সবচেয়ে বেশি বিঘ্নিত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। এর শিকার হয়েছে ১২ কোটি ৮০ লাখ শিশু। সবচেয়ে বেশি পাঁচ কোটি ৪০ লাখ শিশু ক্ষতির মুখে পড়ে ভারতে। কারণ ছিল তাপপ্রবাহ। বাংলাদেশে ক্ষতিতে পড়ে তিন কোটি ৫০ লাখ শিশু। কারণ ছিল একই। ইউনিসেফ বলছে, তাপমাত্রা অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকায় সামনের বছরগুলোয় ক্ষতির মুখে পড়া শিশুর সংখ্যা সম্ভবত বাড়বে। সংস্থাটি আরও বলছে, জলবায়ু ও পরিবেশগত ক্ষতির উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোতে বাস করে প্রায় ১০০ কোটি (এক বিলিয়ন) শিশু, যা বিশ্বের মোট শিশুর অর্ধেক। ইউনিসেফের অনুমান, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু সংকটের পেছনে দায়ী গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ বর্তমান হারে অব্যাহত থাকলে ২০০০ সালের তুলনায় আটগুণ শিশু ২০৫০ সালে তাপপ্রবাহের শিকার হবে। এ ছাড়া একই সময় ব্যাপক বন্যার ক্ষতিতে পড়তে পারে তিনগুণের বেশি শিশু এবং দাবানলের প্রভাবে পড়তে পারে এক দশমিক ৭ গুণ বেশি শিশু। ইউনিসেফের আশঙ্কা, চরম আবহাওয়ার তাৎক্ষণিক প্রভাবের শিকার হওয়ার বাইরেও কিছু শিশু, বিশেষ করে মেয়ে শিশুরা স্কুল থেকে ঝরে পড়ার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকিতে পড়তে পারে। ক্যাথেরিন রাসেল বলেন, যেসব সেবা প্রায়ই জলবায়ুজনিত ঝুঁকির শিকার হচ্ছে, শিক্ষা সেসবের অন্যতম। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘নীতিসংক্রান্ত আলোচনায় বিষয়টি প্রায় সময় উপেক্ষিত থাকছে। অবশ্যই জলবায়ুসংক্রান্ত সব পরিকল্পনা ও কর্মকাণ্ডের সম্মুখভাগে শিশুদের ভবিষ্যতের বিষয়কে নিয়ে আসতে হবে। শ্রেণিকক্ষগুলো যাতে আরও বেশি জলবায়ুজনিত ক্ষতিপ্রতিরোধী হিসেবে তৈরি করা যায়, সে লক্ষ্যে এ খাতে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।

অবাধ সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করবে অন্তর্বর্তী সরকার

অবাধ সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করবে অন্তর্বর্তী সরকার

বাংলাদেশের নাগরিকরা যেন কোনো বাধা বা হুমকি ছাড়াই অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন সেই প্রক্রিয়া তৈরি করার ওপর জোর দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লাউস শোয়াবের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ডব্লিউইএফ-এর বার্ষিক সম্মেলনের সাইডলাইনে ক্লাউস শোয়াব ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। খবর বাসস। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত বছর জুলাই মাসে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে বৈষম্য নিরসনের দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছিল। তিনি উল্লেখ করেন, আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীরা ঢাকার দেওয়ালগুলোতে গ্রাফিতি এঁকে তাদের আকাক্সক্ষা ও স্বপ্ন প্রকাশ করেছে। ড. ইউনূস বলেন, গত ১৬ বছরে বাংলাদেশে যারা নতুন ভোটার হয়েছেন, তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগই হয়নি, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার এজেন্ডা তুলে ধরে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ৮৪ বছরের এই অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশের মানুষ কি ধরনের নির্বাচন চায়, সেটি না জেনে সরকার নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না। তিনি বলেন, সরকার নির্বাচন আয়োজনের অপেক্ষায় রয়েছে, তবে এখন দেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রক্রিয়াটি কেমন হবে। তারা কি ছোট পরিসরের সংস্কার কর্মসূচিতে যাবে, নাকি দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার চাইবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি মানুষ দ্রুত সংস্কার চায়, তাহলে আমরা এ বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচন করার লক্ষ্য নিয়েছি। আর যদি বলে, না- আমাদের দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার দরকার, তাহলে আমাদের আরও ছয় মাস সময় লাগবে।’ বর্তমান প্রজন্মকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম আখ্যায়িত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই প্রজন্মের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি বর্তমান প্রজন্মকে বদলে দেওয়ার কারণে তারা এখন শুধু বাংলাদেশী আর তরুণ নয় বরং সারাবিশ্বের তরুণ প্রজন্মের অংশ হয়ে গেছে। তিনি উল্লেখ করেন, এই প্রজন্ম পুরনো বাংলাদেশে ফিরে যেতে চায় না, তাই একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে হবে।’ অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তরুণদের কাজের প্রতিটি অংশে ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য একটি ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হচ্ছে। সকল রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের সংগঠনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত করা হবে। তিনি আরও জানান, তাঁর সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে। ইতোমধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থায় গতি ফিরে এসেছে। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. ইউনূসের বক্তব্যে মুগ্ধ হন ক্লাউস শোয়াব এবং সন্তোষ প্রকাশ করেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিশ্বব্যাংকের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত ॥ বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আন্না বিয়ার্দে বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বৈশ্বিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটির সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বৃহস্পতিবার ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের সাইডলাইনে আন্না বিয়ার্দে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে বিশ্বব্যাংকের সমর্থন ব্যক্ত করেন। প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য জানান। বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আন্না বিয়ার্দে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমি আমাদের সমর্থন প্রকাশ করতে চাই। আপনারা যে কোনো সহায়তার জন্য আমাদের ওপর নির্ভর করতে পারেন।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন ব্যাংকটি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের প্রতি তাদের সমর্থন প্রসারিত করতে আগ্রহী। আলোচনায় তারা জুলাই বিপ্লব, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি এবং দেশের অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং জেনেভায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি তারেক আরিফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। ইউনূসের ‘থ্রি জিরো’ আন্দোলনের প্রশংসায় আল গোর ॥ সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর কার্বন নিঃসরণ, সম্পদের কেন্দ্রীকরণ, দারিদ্র্য এবং বেকারত্ব দূরীকরণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্যোগে চালু হওয়া বিশ্বব্যাপী ‘থ্রি জিরো’ আন্দোলনের প্রশংসা করেছেন। বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের পাহাড়ি শহর দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের সাইডলাইনে আল গোর অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি ‘থ্রি জিরো’ আন্দোলনের প্রশংসা করেন। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জলবায়ু কর্মী হিসেবে পরিচিত আল গোর। তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গৃহীত সংস্কার কর্মসূচিকে সমর্থন করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। সাক্ষাৎকালে উভয় নেতা জুলাই বিপ্লব, জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাস, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গৃহীত সংস্কার কর্মসূচি এবং নির্বাচন ও ভূরাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচি এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে সমর্থন করার কথা জানান। অধ্যাপক ইউনূস তাকে জুলাই অভ্যুত্থানের সময় আঁকা গ্রাফিতি ও দেওয়াল চিত্রের ওপর ভিত্তি করে রচিত শিল্পকর্ম সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ বইটি উপহার দেন। আল গোর শিল্পকর্ম সংকলনের বই এবং বাংলাদেশের তরুণদের বিপ্লবী চেতনাকে ‘অসাধারণ’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘আমি বইটির প্রতিটি পৃষ্ঠা মনোযোগ দিয়ে দেখেছি।’ ডব্লিউটিও মহাপরিচালক ও জেনেল গ্রুপের চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎ ॥ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মহাপরিচালক এনগোজি ওকোনজো-ইওয়েলার সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়াও সাক্ষাৎ করেছেন জেনেল গ্রুপের (রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল কোম্পানি) নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আমের আলি রেজা ও মার্কিন বিনিয়োগকারী মারিনো ম্যানেজমেন্ট এবং ডালিও ফ্যামিলি অফিসের প্রতিষ্ঠাতা রে ডালিও। শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সাইডলাইনে এ সাক্ষাৎ হয়। প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য জানান।

এক জেলায় সব আছে, আরেক জেলায় কিছুই নাই-এটা  কোন ধরনের ইনসাফ

এক জেলায় সব আছে, আরেক জেলায় কিছুই নাই-এটা  কোন ধরনের ইনসাফ

‘এটা একটা সীমান্তিক জেলা। একটা মানুষ অসুস্থ হলে ভালো একটা চিকিৎসা পাবে তার কোনো ব্যবস্থা নেই। আজকে বহু জেলার মধ্যে একটি জেলায় কৃষি ইউনিভার্সিটি, একটি জেলায় মেডিক্যাল কলেজ, একটি জেলায় ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি, একটি জেলায় সবকিছু আছে আরেক জেলায় কিছুই নেই। এটা কোন ধরনের ইনসাফ! আওয়ামী লীগ ১৮ কোটি মানুষের ওপর জুলুম করেছে। মানুষ খুন করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিল। ফ্যাসিস্টরা যেন পুনরায় ফিরে না আসে এবং আমরা যেন তাদের আশ্রয়-প্রশয় না দেই। আমরা বাংলাদেশে যত অন্যায়ভাবে যত মানুষকে খুন করা হয়েছে তার প্রত্যেকটির বিচার চাই। এক বছর আগেও মুক্তিপাগল বাংলাদেশী জনগণ চিন্তা করতেও পারে নাই; সব নেতাদের জেলে ভরা হয়েছিল। নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। সেই লাশের ওপর পৈশাচিক নৃত্য করেছিল। আল্লাহকে ভয় করেনি। তাদের কারণে ১/১১ সৃষ্টি হয়েছিল। আওয়ামী লীগ খুনি হতে পারে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ খুনি নয় দেশপ্রেমিক।শুক্রবার কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে জেলা জামায়াতের কর্মিসভায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর তান্ডব চালিয়ে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় স্পষ্ট দিবালোকে পল্টন ক্রসিং-এ আল্লাহ তালার বান্দা ৬ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। নিথর দেহের ওপর দাঁড়িয়ে তারা পৈশাচিক নৃত্য করেছিল। ২০১০ সালের ২৯ জুন আমাদের প্রাণপ্রিয় তিন নেতা তৎকালীন আমির জামায়াত সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির যিনি সারা বিশে^র মানুষকে কোরানের মানবিক দাওয়াত দিয়ে বেড়াতেন যাকে কোরানের পাখি বলা হতো আল্লামা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী, তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এই তিনজনকে খোঁড়া অজুহাতে, মিথ্যা অভিযোগে নির্লজ্জভাবে গ্রেপ্তার করে। তার পরের মাসে আর দুজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামরুজ্জামান এবং আব্দুল কাদের মোল্লাকে গ্রেপ্তার করে। তাদেরকে সাজা দেওয়ার জন্য শাহবাগে আন্দোলন ঘোষণা করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মের মানুষকে কারা জুলুম অত্যাচার করেছে, কারা তাদের জমিগুলো দখল করেছে, ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করেছে, সম্পদ লুণ্ঠন করেছে, তাদের ইজ্জতে হাত দিয়েছে, এই দুষ্কৃতকারীদের তালিকা তৈরি করে জনগণের সামনে প্রকাশ করে দেওয়া হোক। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তরা এসব অপকর্মে জড়িত ছিল।’ দলের নেতাকর্মীদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সাড়ে ১৫ বছরের দুঃখ-ব্যথা-বেদনা-কষ্ট আমরা বুকে বহন করে বেড়াচ্ছি। কিন্তু ৫ আগস্ট জাতি যখন মুক্তি পেল। তখন বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে আমাদের সহকর্মীদের আমরা বললাম, শান্ত থাকুন ধৈর্য ধরুন, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নিজ নিজ জায়গা থেকে সর্বোচ্চ অবদান রাখুন।’ এর আগে আওয়ামী লীগ বলেছিল, কোনোদিন যদি ক্ষমতা থেকে তাদেরকে বিদায় নিতে হয় তাহলে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার দু’দিনের মাথায় ৫ লাখ নেতাকর্মীকে আমরা নাকি খুন করব। আমি জিজ্ঞেস করি তাদের নেতৃত্বের মিথ্যা আতংক ছড়ানো নাকি বাস্তবায়িত হয়েছে। ৫ লাখ মানুষ মারা গেছে! ৫ আগস্ট! ৭ আগস্ট! সারা আগস্ট মাসজুড়ে! এখন পর্যন্ত! তাই তারা খুনি হতে পারে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ দেশকে মানুষকে ভালোবাসে। ’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ২৬ লাখ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে চুরি করে নিয়ে গেছে। যদি এটাই তাদের দেশ হতো তাহলে দেশের টাকা কেউ কি বিদেশে চুরি করে! পাচার করে। পাঠায়! না। এটা ছিল তাদের জমিদারি। এখান থেকে খাজনা আদায় করবে আর দেশের টাকা বিদেশে পাচার করবে।’ নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘১৫ বছর যারা, যাদের কর্মীরা জীবন দিয়েছেন, পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, ঘরছাড়া বাড়িছাড়া হয়েছেন বিভিন্নভাবে কষ্টভোগ করেছেন অসংখ্য মামলায় দফায় দফায় জেলে গিয়েছেন রিমান্ডে নির্যাতিত হয়েছেন, তাদের কাছে হাত জোড় করে বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করব এমন কোনো হঠকারী কাজ যেন আমরা না করি যার কারণে আমাদের জাতীয় কোনো সমস্যা হয়। আমরা যেন কেউ চুরি চামারি না করি। চাঁদাবাজি না করি, দখল বাণিজ্য না করি, ঘুষের ভাগ না বসাই, মামলা-বাণিজ্য না করি। এবং ফেসিজম ফিরে আসে এবং ফেসিস্টকে আমরা যেন কোনো ধরনের আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেই।’ পিলখানায় বিডিআর হত্যাকান্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘চর বড়াইবাড়িতে যে যুদ্ধটা আপনারা রাতের অন্ধকারে করে যে শিক্ষাটা দিয়েছিলেন, সেই শিক্ষার প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছিল বিডিআরের পিলখানায়। সে তো আপনাদের গর্বিত ইতিহাস। এখনো চকচক করছে।’ ৫ আগস্ট শহীদ আবু সাঈদের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরে ফেসিজমকে বিদায় করতে গিয়ে একটা মানুষ বাংলাদেশের ইতিহাসে নয় বিশ্বের ইতিহাসে তার স্থানটি তার নামটি লেখা হয়ে গেছে। এই সন্তানটিও বৃহত্তর রংপুরের। তার নাম কি? আবু সাঈদ। সে আমাদের এখন বিপ্লবের আইকন। প্রতীক। আমাদের নেতা। আমাদের সিপাহসালার। আমাদের বীর সেনাপতি। তার রাস্তা ধরে যারাই জীবন দিয়েছেন মহান রাব্বুল আলামিন তাদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন। যারা পঙ্গু হয়েছেন, তাদেরকে আমরা যাতে গর্বের সঙ্গে সম্মান করতে পারি, শ্রদ্ধার সঙ্গে বুকে ধারণ করতে পারি। শহীদ এবং পঙ্গু সকলের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’ দলের কর্মী সমর্থকদের প্রতি ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা সমাজে অনাচার দেখলে প্রতিবাদ করবই। এটা আপনার বিরুদ্ধে হলেও আমি প্রতিবাদ করব। অনাচার যিনিই করবেন তার ব্যাপারে আমরা মুখ বন্ধ করে তাকব না। এই জন্যই আমরা রাজনীতি করি। আমরা ন্যায়ের পক্ষ নিব। অন্যায়ের প্রতিবাদ করব। যদি অন্যায়কে নীরবে হজম করি। তাহলে আমিও অন্যায়কারীর মদতদাতা হলাম। আমরা এই অপকর্মের দায় নিতে চাই না। এমনকি আমাদের দলের কেউ যদি কোনো জায়গায় এ সমস্ত অন্যায় অপরাধ করে আমরা বলব এদেরকে ধরে দিন। ছাড় দেবেন না। আমাদেরকেও খবর দেবেন প্রশাসনকেও খবর দেবেন। এদের ব্যাপারে আমাদের জিরো টলারেন্স।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই জানুয়ারি মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আমাদের লোকেরা চাঁদাবাজি করে নাই। দখল বাণিজ্য করে নাই। মামলা-বাণিজ্য করে নাই। শত শত নিরীহ মানুষকে মামলায় ঢুকিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে নাই। ঘুষের ভাগাভাগি করে নাই। আমরা জানি এটা হারাম। আল্লাহ তায়ালা এই হারামকে বর্জন করার আজীবন তৌফিক দান করুন।’ কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ^বিদ্যালয় ও জেলার পিছিয়ে পরা মানুষের দুর্দশা নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে একটা কৃষি বিশ^বিদ্যালয় হয়েছে। ঘোষণা হয়েছে। তার কংকাল আছে গোস্তও নাই চামড়াও নাই। হাড্ডিসার। নিজস্ব কোনো ক্যাম্পাস নাই। ধুঁকে ধুঁকে আস্তে আস্তে চলছে। অথচ এগ্রোবেজড এই প্রতিষ্ঠানটি এই অঞ্চলের চেহারা বদলে দিতে পারে। এটা শিক্ষা গবেষণা কেন্দ্রে পরিগণিত হতে পারে। এটা একটা সীমান্তিক জেলা একটা মানুষ অসুস্থ হলে ভালো একটা চিকিৎসা পাবে তার কোনো ব্যবস্থা নাই। আজকে বহু জেলায় একটি জেলায় কৃষি ইউনিভার্সিটি, একটি জেলায় মেডিক্যাল কলেজ, একটি জেলায় ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি, একটি জেলায় সবকিছু আছে আরেক জেলায় কিছুই নাই। এটা কোন ধরনের ইনসাফ!’ ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর কুড়িগ্রামে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার সকাল ৯টায় কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের আমির ডা. শফিকুর রহমান। জেলা শাখার আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য মাওলানা আব্দুল মতিন ফারুকীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় কার্য পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ব্যারিস্টার সালেহীন, অধ্যাপক আজিজুর রহমান স্বপন প্রমুখ। এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যবৃন্দ ছাড়াও জেলা ও উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সম্মেলন উপলক্ষে শুক্রবার সকাল থেকে জেলার ৯টি উপজেলা থেকে মিছিলসহকারে হাজার হাজার কর্মী-সমর্থকরা ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সমাবেশস্থলে সমবেত হন। অনুষ্ঠানে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক কর্মী সমর্থক প্রধান অতিথির বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনেন। শান্তিপূর্ণভাবে ৩ ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠানে সবার মধ্যে ছিল উৎসাহ আর উদ্দীপনা।

বাকশাল কায়েমের পর কারাগারই ছিল বিরোধীদলের ঠিকানা

বাকশাল কায়েমের পর কারাগারই ছিল বিরোধীদলের ঠিকানা

একদলীয় শাসন ‘বাকশাল’ কায়েম করার পর কারাগারই ছিল বিরোধীদলের ঠিকানা- এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিবৃতিতে তারেক রহমান বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করার লক্ষ্যে বহুদলীয় গণতন্ত্রের গলা টিপে হত্যা করে একদলীয় সরকার ব্যবস্থা ‘বাকশাল’ কায়েম করে। এই ব্যবস্থা কায়েম করতে গিয়ে তারা জাতীয় সংসদে বিরোধী মতামতকে উপেক্ষা করে একপ্রকার গায়ের জোরেই অমানবিক মধ্যযুগীয় চতুর্থ সংশোধনী আইন পাস করে।’ তারেক রহমান আরও বলেন, ‘ওই সময় সব সংবাদপত্র বাতিল করে তাদের অনুগত চারটি পত্রিকা চালু রাখার ফরমান জারি করে। দেশবাসীর দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ফলে অর্জিত মানুষের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে তারা ভূলুণ্ঠিত করে সমাজে এক ভয়াবহ নৈরাজ্যের ঘন অমানিশা ছড়িয়ে দেয়।’ তিনি বলেন, ‘একদলীয় বর্বর শাসন দীর্ঘায়িত করার অলীক স্বপ্নে শুধু গণতন্ত্রই নয়, দেশের ঐক্য, সংহতি ও সার্বভৌমত্বকে তারা সংকটাপন্ন করে তুলতেও দ্বিধা করেনি। বিরোধীদলের প্রতি আচরণে তারা কখনোই সভ্য রীতি-নীতি অনুসরণ করেনি। তখন কারাগারই ছিল বিরোধীদলের ঠিকানা।’ তারেক রহমান বলেন, ‘গণতন্ত্রবিরোধী ও জনবিচ্ছিন্ন অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার গত ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার মিলিত দুর্বার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এখন যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে গণতন্ত্র, মানুষের বাক-স্বাধীনতা ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে জনগণকে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হতে হবে।’