ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

জাতীয়

জাতীয় বিভাগের সব খবর

৯শ’ কোটি টাকার প্রকল্পে পরামর্শক ব্যয় ২শ’ কোটি

৯শ’ কোটি টাকার প্রকল্পে পরামর্শক ব্যয় ২শ’ কোটি

দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতে বিশ্বব্যাংকের ৯শ’ কোটি টাকার ঋণের অর্থে ‘সহনশীলতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন এবং কার্যকর লক্ষ্য নির্ধারণে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্প গ্রহণ করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলোর মধ্যে সামাজিক সুরক্ষায় ৫৮৯ কোটি টাকা ব্যয় হলেও পরামর্শক ফি, ডাটা স্টোরেজ, কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক এবং স্থানীয় প্রশিক্ষণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১৫ কোটি টাকা, যেখানে শুধু পরামর্শক ফি প্রায় ২শ’ কোটি টাকা।  পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা পরবর্তী প্রেস ব্রিফিংয়ে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সে সময় পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, দাতা সংস্থাগুলো অনেকক্ষেত্রে তাদের শর্ত চাপিয়ে দেয়। তাদের দেওয়া ঋণের বিপরীতে কিছু শর্ত জুড়ে দেয়, যা অনেক সময় দেশের উন্নয়নের জন্য সহায়ক নাও হতে পারে। এই বিষয়ে আমাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত এবং জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে দাতা সংস্থাগুলোর সহযোগিতা ছাড়া দেশের উন্নয়ন কঠিন বলেও তিনি মনে করেন। এক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এমন একটি পথ খুঁজে বের করতে হবে, যেখানে উভয়পক্ষের স্বার্থ রক্ষা হয়। তথ্য সূত্রে জানা যায়, দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার আওতা প্রসারিত ও সরবরাহ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে এ প্রকল্প নেওয়া হয়। এর মাধ্যমে একটি সামাজিক রেজিস্ট্রি স্থাপন ও চালু, নগদ স্থানান্তর কর্মসূচি শক্তিশালী করা এবং তাদের জীবিকা সহায়তা সম্প্রসারণ করাই ছিল প্রকল্পের উদ্দেশ্য।  প্রকল্পের পটভ‚মিতে বলা হয়, দেশের মানবসম্পদ সূচকের স্কোর কম, অর্থনীতিতে বেশিরভাগ কর্মীরা অনানুষ্ঠানিক। তাই টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য আর্থিক খাতের সংস্কার অপরিহার্য। অপরদিকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে ঘন ঘন বন্যা প্রতিবছর লাখ লাখ জনগোষ্ঠীর ওপর প্রভাব ফেলে। এক্ষেত্রে এসব জনগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষায় ২০২৫ অর্থবছরে সরকার জিডিপির ১ দশমিক ৮ শতাংশ বরাদ্দ করেছে, যার উল্লেখযোগ্য অংশগুলোর মধ্যে রয়েছে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা। এতে বলা হয়, গত এক দশকে সামাজিক সহায়তা কার্যক্রম প্রসারিত হলেও অদক্ষ লক্ষ্যমাত্রার কারণে তা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর তেমন প্রভাব ফেলেনি। এমনকি অনেক দরিদ্র পরিবার কোনো ধরনের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় নেই। তাদের স্বার্থেই সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজ সেবা অধিদপ্তরের আওতায় জুলাই ২০২৫ থেকে জুন ২০৩০ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।  এক্ষেত্রে প্রকল্পটির প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে যেসব ব্যয় উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে দেখা যায়- প্রকল্পের আওতায় সুবিধাভোগীদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৫৮৯ কোটি টাকা, যা মোট প্রকল্পের ৬৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। অপরদিকে পরামর্শক ফি (প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি) ব্যয় হবে ১৯৪ কোটি ৩ লাখ টাকা, যা প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ২১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এছাড়া ডাটা স্টোরেজ ব্যয় (৫ বছরের জন্য) ১২ কোটি টাকা, কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক ৯ কোটি ৭ লাখ টাকা এবং স্থানীয় প্রশিক্ষণ (৩শ’ জন) বাবদ ৫০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।  কোনো সম্ভাব্যতা পরীক্ষা (ফিজিবিলিটি টেস্ট) ছাড়াই কারিগরি সহায়তা প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। চলতি বছরের জুলাই থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পটিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ব্যয় বরাদ্দ হয়েছে ১৮০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদকাল ২০৩০ পর্যন্ত।

৯ দফা ঘোষণা সারাদেশে  কার্ফু জারি

৯ দফা ঘোষণা সারাদেশে  কার্ফু জারি

২০২৪ সালের ১৯ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, গুলি, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। রাজধানী ঢাকা ছিল কার্যত অচল, পরিস্থিতি ছিল থমথমে। ছাত্রশিবিরের সহযোগিতায় এদিন ৯ দফা ঘোষণা করে তৎকালীন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের। এদিকে রাতে সারা দেশে কার্ফু জারি ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করে সরকার। ইন্টারনেটসেবা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেদিন বিকেল থেকেই হেলিকপ্টার থেকে ছাত্রজনতার ওপরে গুলি ছুড়ে র‌্যাব ও পুলিশ।  কোটা সংস্কার আন্দোলন দমাতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষার্থীদের ওপর নানা নির্যাতন-নিপীড়ন, হামলা-মামলা, নির্বিচারে গুলি এবং ইন্টারনেট বন্ধসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালাতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় সংঘর্ষে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই সারাদেশে এক দিনেই নিহত হন ১৪৮ জন। এর মধ্যে ৫৪ জনকে মাথায় বা গলায় গুলি করা হয়েছিল। অধিকাংশেরই বয়স ৪০ বছরের মধ্যে। হতাহতের মাত্রা এত বেশি ছিল যে ঢাকায় একটি হাসপাতালে আক্ষরিক অর্থে গজ এবং ব্যান্ডেজ ফুরিয়ে যায়। ঢাকা একটি যুদ্ধক্ষেত্রের মতো হয়ে ওঠে। ‘বøাডশেড ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।  প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে ইন্টারন্যাশনাল ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস প্রজেক্ট (আইটিজেপি) এবং টেক গেøাবাল ইনস্টিটিউট (টিজিআই)। ৬০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে উঠে আসে, নিহতদের পরিবারগুলোর একটি যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। যেখানে তারা ‘পা রক্তে ভিজিয়ে’ পুলিশের গুলিতে আহত সন্তানদের খুঁজতে হাসপাতালের মর্গে ঘুরে বেড়িয়েছেন। আহত কিংবা শহীদ পরিবারগুলোর কাছে অপরিচিত লোকজন ফোন করে গুলিবিদ্ধ সন্তান কিংবা ভাইবোনের খবর দিতেন। এরপর টালমাটাল অবস্থায় এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছোটাছুটি করা অথবা গুরুতর আহত অবস্থায় কোনোমতে বেঁচে নিরাপদ আশ্রæয়ে যাওয়ার মতো হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রবল মানসিক আঘাতের মধ্যেও শোকাহত পরিবারগুলোকে ক্ষমতাসীনদের বৈরিতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। প্রিয়জনের মৃতদেহ দাফনের জন্ম-মৃত্যুসনদ ও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট সংগ্রহ করতেও নানা ঝুঁকি-ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। ভয় ও আতঙ্কে আচ্ছন্ন ছিল দাফনের আয়োজন, যেখানে কিছু পরিবার বাধা এড়াতে ভোরের আলো ফোটার আগেই গোপনে দাফন সম্পন্ন করেছে, যেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় কর্মীদের কোনো বাধার মুখে পড়তে না হয়।

ভিসাপ্রাপ্তিতে কদর কমছে  বাংলাদেশিদের

ভিসাপ্রাপ্তিতে কদর কমছে  বাংলাদেশিদের

বিশ্বে এক সময় বাংলাদেশি ভিসাপ্রাপ্তিদের কদর থাকলেও বর্তমানে সুবিধা দিন দিন কমছে। যে দেশগুলো বাংলাদেশিদের ফ্রি ভিসার সুযোগ দিয়েছিল, বর্তমানে সে দেশেও ভিসা পাওয়া কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। ফলে, বাংলাদেশিদের ভ্রমণে যাওয়া যেমন কঠিন হয়ে পড়েছে, ঠিক তেমনি পড়াশোনা, ব্যবসা এমনকি অনেকক্ষেত্রে মেডিক্যাল ভিসা পাওয়ার কদরও জটিলাকার ধারণ করছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘শেনজেনের’ দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে মোট ৩৯ হাজার ৩৪৫টি শেনজেন ভিসার আবেদন করা হয়েছিল। এর মধ্যে ২০ হাজার ৯৫৭টি আবেদনই প্রত্যাখ্যান করা হয়, যা মোট আবেদনের ৫৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। ২০২৩ সালে প্রত্যাখ্যানের হার ছিল ৪২ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজারেরও ওপরে ভিসার আবেদন পড়ে। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ ভিসার আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। বাকি সবই প্রত্যাখ্যাত। যদিও প্রতিবছর শেষে তাদের জরিপ কার্য পরিচালনা করার কারণে  ২০২৫ সালের পূর্ণাঙ্গ তথ্য  পাওয়া যায়নি। এদিকে, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে বাংলাদেশিদের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেয় ভারত। ফলশ্রæতিতে বাধ্য হয়ে বিকল্প দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে বাংলাদেশিদের চেষ্টা করতে হয়েছে। বিকল্প হিসেবে থাইল্যান্ড জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সেখানেও ভিসার নিয়ম কঠিন করছে দেশটি। দেশটিতে আবেদন করতে গেলে ন্যূনতম ৪৫ দিন সময় নিতে হচ্ছে, যা ভ্রমণকারীদের জন্য কষ্টের। তারপরও নতুন সমস্যা হচ্ছে থাইল্যান্ডের পাতায়া, ফুকেট কিংবা ব্যাংকক ছুটি কাটানোর জনপ্রিয় গন্তব্যের জায়গায় যেতে ইচ্ছে থাকলেও সেখানকার ভিসা প্রত্যাখ্যানের হারও বেশি। আবার যারা ভিসা পাচ্ছেন, তাদের সময় লাগছে দেড় থেকে দুই মাস। একই অবস্থা অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশেও। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভিয়েতনাম বাংলাদেশিদের জন্য ফ্রি ভিসার দেশ থাকলেও বাংলাদেশিদের আচরণের কারণে দেশটি এখন বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা ইস্যু বন্ধ করে দিয়েছে। এর আগে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে অন-অ্যারাইভাল ভিসাসুবিধা বাতিল করেছে ভিয়েতনাম। একইভাবে মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ায়ও অন-অ্যারাইভাল ক্যাটাগরিতে আগে সহজে ভিসা দিত, এখন সেখানেও ভিসা পেতে সময় লাগছে দুই মাসের বেশি। ফিলিপিন্সে আগে ১০ দিনের মধ্যে ভিসা পাওয়া গেলেও এখন সময় লাগছে দেড় মাস। অন্যদিকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া বাংলাদেশিদের জন্য নতুন নতুন নিয়ম চালু করে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রাপ্তি কঠিন করেছে। এ দেশগুলোতেও ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার বেড়েছে।  কিছু বাংলাদেশির কারণে সকলের জন্যই ভিসা প্রাপ্তি কঠিন হয়ে পড়ছে। এদিকে ভারত, নেপাল ও ভুটানেও অন-অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়া যেত। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে ভারত জরুরি চিকিৎসা ছাড়া অন্য কোনো ভিসা দিচ্ছে না। ফলে, বাংলাদেশিদের নেপাল ও ভুটান সফরও সীমিত হয়ে পড়েছে। ভিসা জটিলতা বাড়ানোর তালিকায় এশিয়ার ছোট দেশগুলোও রয়েছে। এসবের প্রধান কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশিদের পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন কমছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স প্রকাশিত সূচকে বাংলাদেশের পাসপোর্টের অবস্থান এখন ৯৫তম, যা উত্তর কোরিয়া ও লিবিয়ার মতো যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশের সমান। নোমাড ক্যাপিটালিস্ট প্রকাশিত ভিন্ন আরেকটি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮১তম।  প্রতিষ্ঠানটির মতে, ভিসামুক্ত ভ্রমণ, কর ব্যবস্থা,  বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা,  দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ এবং ব্যক্তিস্বাধীনতার মানদণ্ডে বাংলাদেশের স্কোর মাত্র ৩৮। ভিসা জটিলতার কারণ জানতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভুয়া সনদপত্র জমার প্রবণতাও ভিসা প্রত্যাখ্যান বৃদ্ধির পেছনে ভ‚মিকা রাখছে। তাছাড়া বিভিন্ন দেশে যাওয়া যাত্রীর মধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের চেয়ে প্রবাসীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ভিসাপ্রাপ্তি কঠিন হচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার এয়ারলাইনসগুলো ফ্লাইট কমিয়ে দিয়েছে। দেশের পর্যটন খাতের অন্যতম সংগঠন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ( টোয়াব) পরিচালক এবং বিজকন হলিডেজের  প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাসলিম আমিন শোভন গণমাধ্যমকে  জানান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া বাংলাদেশিদের ভিসা রিফিউজ করছে। অন-অ্যারাইভাল ভিসায় নেপাল যেতেও বাংলাদেশিরা বিমানবন্দরে নানা  প্রশ্নের মুখে পড়ছেন। এক সময় ভিয়েতনাম অনলাইনে ই-ভিসা দিত; কিন্তু এখন তা বন্ধ করে দিয়েছে। একই পথে হেঁটেছে কম্বোডিয়া ও লাওসও।  সূত্র জানায়, ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাওস এবং মধ্য এশিয়ার উজবেকিস্তান ও কাজাখস্তানের মতো দেশগুলো বাংলাদেশি পর্যটকদের অতিরিক্ত সময় অবস্থানের অভিযোগ তুলে ভিসা  প্রদান বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু ভিয়েতনামেই গত দুই বছরে ৩০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি পর্যটক নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি অবস্থান করেছেন। তিনি বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সহজভাবে পাওয়া ভিসা সংগ্রহ করে তা ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় নিয়ে পরে ১ থেকে ২ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। এতে করে ওই সব দেশের ভিসাব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রকৃত পর্যটকরাও ক্ষতিগ্রস্তের শিকার হচ্ছেন। এ ধরনের অপব্যবহার ও জালিয়াতি ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো এখন ভিসা প্রক্রিয়ায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করছে, যা পুরো পর্যটনশিল্পের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ফলে, গত ঈদে দীর্ঘ ছুটি থাকলেও বাংলাদেশিদের বিদেশে অবকাশ যাপনের আগ্রহ নেই বললেই চলে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি এ  বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। এদিকে দেশের বিত্তবান শ্রেণির বড় অংশ অবকাশের জন্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গেলেও বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। ভাষা একটি বড় সমস্যা। জার্মানিতে  ভ্রমণ বা কর্মের কারণে গেলে সেখানের ভাষা আয়াত্ত করতে হয়, অন্যথায় ভিসা দেয় না। এদিকে মধ্য ও নিম্নমধ্যবিত্ত বাংলাদেশিদের জন্য ভারত, নেপাল এবং ভুটানে ভ্রমণে বাংলাদেশিদের আকর্ষণ ছিল। যেখানে অন-অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়া যেত। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে ভারত জরুরি চিকিৎসা ছাড়া অন্য কোনো ভিসা দিচ্ছে না। ফলে, বাংলাদেশিদের নেপাল ও ভুটান সফরও সীমিত হয়ে পড়েছে। ভিসা জটিলতা বাড়ানোর তালিকায় এশিয়ার ছোট দেশগুলোও রয়েছে। এর পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশিদের পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিনিয়তই কমছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স প্রকাশিত সূচকে বাংলাদেশের পাসপোর্টের অবস্থান এখন ৯৫তম, যা উত্তর কোরিয়া ও লিবিয়ার মতো যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশের সমান। এক ভিসায় ছয় দেশ \ নোমাড ক্যাপিটালিস্ট  প্রকাশিত ভিন্ন আরেকটি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮১তম।  প্রতিষ্ঠানটির মতে, ভিসামুক্ত ভ্রমণ, কর ব্যবস্থা,  বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা,  দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার মানদণ্ডে বাংলাদেশের স্কোর মাত্র ৩৮। কুয়েত এয়ারওয়েজ, মালদিভিয়ান, থাই এয়ার এশিয়া ও এয়ার এশিয়ার জিএসএ টাস গ্রæপের পরিচালক কাজী শাহ মুজাক্কের আহাম্মেদুল হক জানান, বর্তমানে বিভিন্ন গন্তব্যে পরিচালিত হওয়া বিমানগুলোর অধিকাংশ যাত্রী  প্রবাসী। পর্যটকের সংখ্যা তুলনামূলক  কম। ভিসাপ্রাপ্তি কঠিন হওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যার ধারাবাহিকতায় থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার এয়ারলাইনসগুলো ফ্লাইট কমিয়ে দিয়েছে। পর্যটন ও অভিবাসন বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পর্যটক হিসেবে গিয়ে অনেক বাংলাদেশি থেকে গেছেন, যা দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। অনেকেই ট্যুরিস্ট ভিসায় গিয়ে অবৈধভাবে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন বা অন্য দেশে পালিয়ে যাচ্ছেন। পর্যটন বিশেষজ্ঞ ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহেদুল আলম বলেন, পর্যটক ভিসায় বিদেশে গিয়ে ওভারস্টে, ক্ষেত্রবিশেষে থেকে যাওয়ার  প্রবণতার কারণেই বাংলাদেশিদের ভিসা জটিলতা বাড়ছে এবং দেশের পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা কমছে। তিনি বলেন, প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক মানুষ  শ্রমবাজারে আসছেন, যাদের মধ্যে কিছু মানুষ বিদেশে যাবেন। তবে তারা যেন শিক্ষিত, দক্ষ এবং বৈধ পথে যান, তা নিশ্চিত করতে হবে। ভুয়া তথ্য বা ভুয়া ভিসা ব্যবহার করে কেউ যেন বিদেশে না যেতে পারেন, সে নিশ্চয়তা দরকার। বিভিন্ন দেশে শিক্ষাগ্রহণ, চিকিৎসা, ব্যবসা ও ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ভিসা পেতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন বাংলাদেশিরা। সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। ভারতের ভ্রমণ ভিসা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে, অন্য ক্যাটাগরির ভিসার অনুমোদন হারও কম। শুধু ভারত নয়, থাইল্যান্ড, চীন, তাজিকিস্তান, মালয়েশিয়া, এমনকি ইউরোপ ও আমেরিকার ভিসাও এখন অনেক বাংলাদেশির জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। নিয়মিত ভ্রমণকারী ও ইউটিউবার নাদির নিবরাস জানান, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার  বৈধ ভিসা থাকা সত্তে¡ও সম্প্রতি তিনটি দেশের ই-ভিসা  বন্ধ রয়েছে। ভ্রমণ ও ভিসা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, আগে তুলনামূলক সহজ ভিসা পাওয়া যেত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। এখন সেই দেশগুলোর দূতাবাসও বাংলাদেশিদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করছে। ‘দ্য মনিটর’ সম্পাদক কাজী ওয়াহিদউদ্দিন আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে  বেড়ে চলা অবৈধ অভিবাসন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা এর অন্যতম কারণ।’ এদিকে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন জানিয়েছে, শুধু অতি জরুরি ও মেডিক্যাল ভিসা সীমিত পরিসরে চালু রয়েছে।  যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও ভিসা না পাওয়ায় হতাশ হয়ে ফিরছেন বহু শিক্ষার্থী।  ভারতীয় হাইকমিশন সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে নিরাপত্তা ইস্যুতে ভারতীয় হাইকমিশন ও ভিসা সেন্টারে অনেক কর্মকর্তাই এখনো বাংলাদেশে ফেরেননি। ফলে, জনবল সংকট রয়েছে। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যকার শীতল সম্পর্কও ভিসা জটিলতার জন্য দায়ী। হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘আমরা অগ্রাধিকারভিত্তিতে মেডিক্যাল ভিসা দেওয়ার চেষ্টা করছি। ধীরে ধীরে অন্য ক্যাটাগরিগুলোও চালু করা হবে।’ পশ্চিমা দেশের ভিসা পাওয়া আরও কঠিন \ পশ্চিমা দেশগুলোর ভিসা পাওয়া যেন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহামা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের খরচে ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থী জানান, দীর্ঘ প্রস্তুতির পরেও গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে তার ভিসা আবেদন  প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ভিসা আবেদনকারী জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আমার দুই বছরের  প্রস্তুতি দুই মিনিটেই শেষ। আমার চোখের সামনে ১০-১২ জন ভিসার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু তাদের সবাইকে ভিসা প্রত্যাখ্যাত হতে দেখেছি। এদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী।’ এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, ‘প্রয়োজনীয় নথি যাচাই-বাছাইয়ের পর ভিসা দেওয়া না দেওয়া সম্পূর্ণভাবে দায়িত্বশীল কর্মকর্তার ওপর নির্ভও করে। এমনকি মার্কিন রাষ্ট্রদূতও সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।’ দেশের অ্যাভিয়েশন ও ট্যুরিজম বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘দ্য মনিটর’এর সম্পাদক কাজী ওয়াহিদউদ্দিন আলম বলেন, ‘আগে যেসব দেশের ভিসা পাওয়া তুলনামূলক সহজ ছিল, এখন সেগুলোও কঠিন হয়ে গেছে। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর সবখানেই রিজেকশন বেড়েছে। এর পেছনে বাংলাদেশ থেকে বেড়ে চলা অবৈধ অভিবাসনের হার এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা বড় ভ‚মিকা রাখছে।’ তবে  নাম প্রকাশ না করা শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, ‘ভিসা  প্রত্যাখ্যানের সংখ্যা বেড়েছে এমন ডেটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেই। তবে অনেকেই সঠিক ও প্রকৃত কাগজপত্র জমা দেন না। আবার এখন সব দেশই ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই অনেক বাড়িয়েছে। তবে সেটা শুধু বাংলাদেশিদের জন্য নয়, সব দেশের জন্যই।’ তবে  এ বিষয়ে  প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত  লুৎফে সিদ্দিকী জানান, বিদেশগামীদের মধ্যে জাল সনদ ও ব্যাংক স্টেটমেন্ট জমা দেওয়ার প্রবণতা ভিসা জটিলতার অন্যতম প্রধান কারণ। এ বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।