ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

জাতীয়

জাতীয় বিভাগের সব খবর

নৃশংস হত্যাকাণ্ডে উত্তাল সারাদেশ

নৃশংস হত্যাকাণ্ডে উত্তাল সারাদেশ

রাজধানীর পুরান ঢাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে মধ্যযুগীয় বর্বর কায়দায় ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যার ঘটনায় সারাদেশে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে। বুধবারের হত্যাকাণ্ড মর্মষ্পর্শী রূপ পায় শুক্রবার রাতের এক ভাইরাল ভিডিওতে। মানবতার ইতিহাসে জঘন্যতম বর্বর এ ভিডিও দেশবাসিকে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টনে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের লগি-বৈঠার তাণ্ডবের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। শুক্রবার রাতেই উত্তাল হয়ে ওঠে সারাদেশ। দেশের সবগুলো বিশ্ববিদ্যায়ে শিক্ষার্থীরা ফেটে পড়েন বিক্ষোভে। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে দেওয়া স্লোগানে মুখরিত হয় আকাশ বাতাস। ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় খুনীদের রাজনৈতিক পরিচয় তথা বিএনপি-ছাত্রদল-যুবদলের বিরুদ্ধেও। শনিবারও দিনভর বিক্ষোভ চলে সারাদেশে। বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল পালন করে কর্মসূচি। দাবি তোলা হয় দ্রুত বিচার আইনে খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির। নিহত সোহাগের পরিবার থেকে দাবি করা হয়, খুনীরা এখনো হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। ফলে পরিবারটি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। হত্যাকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগে যুবদল ও ছাত্রদল থেকে চারজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পুলিশ চার আসামিকে রিমান্ডে নিয়েছে। ছাত্রদল নেতা তারেক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছে। নিহত সোহাগকে বরগুণায় গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। পুলিশ এবং স্থানীয় বিএনপি নেতারা সোহাগের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। খুনীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারের ব্যবস্থা করা হবে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। দেশব্যাপী ভাইরাল হওয়া নৃশংস ভিডিওতে ফুটে ওঠে এক বিভৎস চিত্র। যা দেখে আঁৎকে ওঠে বিবেক। সোহাগ হত্যার ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেট সংলগ্ন এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে থাকা রাস্তায় অর্ধবিবস্ত্র হয়ে শুয়ে পড়ে আছেন সোহাগ। প্রায় নিথর দেহ নিয়ে নড়াচড়ারও উপায় নেই তার। নৃশংস হামলায় তখনো সোহাগের শুধু নিঃশ্বাসটুকু চলছিল। একপাশ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা সোহাগ তখন মৃত্যুপথযাত্রী। এসময় রাস্তা থেকে একটি বড় কংক্রিটের অংশ হাতে তুলে নেন হাল্কা আকাশি রঙের শার্ট ও জিন্সের প্যান্ট পরা রিয়াদ। মাথার ওপরে কংক্রিটের অংশ তুলে সজোরে কোমর আর বুকের মাঝখানে আঘাত করেন তিনি। সোহাগ দুই হাত আর দুই পা ছড়িয়ে রাস্তায় পড়ে থাকেন। এরপর একদম বুক বরাবর আবার আঘাত করলে সোহাগ আবার রাস্তার একপাশে মুখ ফিরিয়ে নেন। তখন টি-শার্ট আর গ্যাবাডিন প্যান্ট পরা সজীব একপাশ থেকে হেঁটে এসে আরেকটা বড় কংক্রিটের অংশ মাথায় তুলে মুখ বরাবর আঘাত করেন। এরপর আরেকটি ইট নিয়ে এসে মাথায় আঘাত করেন ছোট মনির। পাশ থেকে আবার মাথায় আঘাত করেন লম্বা মনির, আর এদের ইট এগিয়ে দেন নান্নু। নৃশংস এই হত্যার ঘটনায় গভীর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন। কেউ কেউ এটাকে আবার ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ শুক্রবার রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পৃথক বিক্ষোভ মিছিল করে। পুরান ঢাকায় বিক্ষোভ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।  নৃশংস এ ঘটনায় শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা, ঢাকা কলেজ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং ইডেন কলেজসহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্যদিকে বরগুনা, পটুয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, ঝালকাঠি, নাটোর ও লক্ষ্মীপুর জেলাসহ অনেক জেলায় ব্যাপক বিক্ষোভ কর্মসূচী পালিত হয়েছে।

একটি পক্ষ চাঁদাবাজি সন্ত্রাস টিকিয়ে রাখতে চায়

একটি পক্ষ চাঁদাবাজি সন্ত্রাস টিকিয়ে রাখতে চায়

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা সংস্কার চেয়েছি, জুলাই গণহত্যার বিচার চেয়েছি এবং নতুন সংবিধান চেয়েছি। কিন্তু একটি পক্ষ আমাদের  বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, যারা পুরানো বন্দোবস্ত টিকিয়ে রাখতে চায়। তারা চাঁদাবাজ এবং সন্ত্রাসকে টিকিয়ে রেখে দেশকে শোষণ করতে চায়।  তিনি বলেন, তারা ভেবেছিল ২ থেকে ৩টি আসনের লোভ দেখিয়ে আমাদের কিনে নেবে, কিন্তু জুলাই বিপ্লবীদের কেনার সাধ্য কারও নেই। গণঅভ্যুত্থানে এত মানুষের জীবনদানের পর তারা যদি মনে করে পুরাতন রাজনীতি করবে বিষয়টি এত সহজ হবে না। গণঅভ্যুত্থানের শক্তি এখনো জেগে আছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবার দেশজুড়ে পুরাতন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের  বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।  শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরার শহীদ আসিফ চত্বরে আয়োজিত এক পথসভায় তিনি এ কথা বলেন। এ সময়  নাহিদ ইসলাম দেশ সংস্কার, নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের ডাক দেন। একই সঙ্গে তিনি চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের  বিরুদ্ধে ‘জিহাদ’ ঘোষণা করে তাদের সামাজিকভাবে বয়কটের আহ্বান জানান।  নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, জুলাই বিপ্লবীরা চেয়েছিল একটি জাতীয় সরকার গঠন করে নতুন রাষ্ট্র গঠন করতে। কিন্তু একটি দল চেয়েছে ৩ মাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। তাদের একটিই উদ্দেশ্য ক্ষমতায় যাওয়া। বক্তরা সাতক্ষীরার মানুষের বঞ্চনার কথা উল্লেখ করে  বলেন, আপনারা ভুক্তভোগী। এই দেশকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। ৫৪ বছরে সাতক্ষীরায় রেললাইন আসে নাই। সাতক্ষীরার শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মানুষ এখনো ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা পায় না । একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং সুন্দরবনসহ উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে দলটির নেতৃবৃন্দ জানান, আমাদের সুন্দরবন, আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে তাকাতে হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি সাতক্ষীরার মানুষ এবং এই উপকূল রক্ষার জন্য কাজ করবে। জাতীয় নাগরিক পার্টির  সাতক্ষীরা জেলার সমন্বয়ক কামরুজ্জামান বুলুর সভাপতিত্বে পথসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দক্ষিণাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মেজবাহ কামাল ও তাসনিম জারা। এছাড়া মঞ্চে ছিলেন   দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। পথসভার আগে শহীদ আসিফ চত্বর এলাকায় জুলাই বিপ্লবে আহত ও নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে একটি পদযাত্রা শহীদ আসিফ চত্বর থেকে বের হয়ে নিউমার্কেট মোড়ে শেষ হয়। এরপর নিউমার্কেট এলাকায় আল বারাকা হোটেলের দ্বিতীয়তলায় জেলা কার্যালয় উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।    বাগেরহাটে এনসিপির সভা ॥ জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেছেন ‘২৪ এর অভ্যুত্থানে যে আকাঙ্খা নিয়ে আমরা রাজপথে নেমেছিলাম, সেই আকাঙ্খা আজও পূরণ হয়নি, তাই রাজপথ ছাড়ার সময় এখনো হয়নি। চাঁদাবাজদের উৎপাত এখনো কমেনি। বরং খুনখারাপি শুরু হয়েছে। ‘পাথর দিয়ে থেঁতলে মারার মতো আইয়ামে জাহেলিয়া শুরু হয়েছে। সন্ত্রাসী কার্যক্রম বেড়েছে। আমাদের লড়াই অব্যাহত আছে এবং এ লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। কেউ যদি কোনো প্রকার অপকর্মের সঙ্গে জড়িত হয় তাকে প্রতিরোধ করতে হবে। তাদেরকে আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে। যদি আমরা ২৪ এর মতো রুখে দাঁড়ালে হবে কাঙ্খিত বাংলাদেশ।’ শনিবার বিকেলে জাতীয় নাগরিক পার্টির দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১২তম দিনে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ফয়লা বাজারে বিশাল পথসভায় তিনি এ কথা বলেন।  পথসভায় আরও বক্তব্য দেন, সদস্য সচিব শেখ আখতার হোসেন, সিনিয়র মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী প্রমুখ। এ সময় দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, সিনিয়র যুগ্ম-সদস্য সচিব সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম- সচিব তাসনিম জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাহিদা সারওয়ার নিভা, সিনিয়র মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, যুগ্ম-মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ, মোহাম্মদ আতাউল্লাহ, ড. মাহমুদা মিতু, কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মুখ্য সংগঠক মোল্যা রহমাতুল্লাহ, যুগ্ম-আহ্বায়ক তাজনুভা জাবিন, বাগেরহাটের প্রধান সমন্বয়কারী সৈয়াদ মোরশেদ আনোয়ার, যুগ্ম-সমন্বকারী মো. শফিউল্লাহ, আবিদ আহমেদ, জেলা সদস্য লাবীব আহমেদ, আল আমিন খান সুমন, অ্যাডভোকেট আল আমিন, অ্যাডভোকেট জান্নাতুল বাকিসহ কয়েক হাজার স্বতঃস্ফূর্ত নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। সদস্য সচিব শেখ আখতার হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে হাসিনা পালিয়েছে কিন্তু তার সিস্টেম রয়ে গেছে। চাঁদার জন্য ঢাকায় একজনকে পাথর দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। রামপালে এখনো ঘের দখল চলে। কোথাকার কোনো পালিয়ে থাকা নেতারা ঘেরের দখল নিতে চায়। বাংলাদেশে যদি কেউ ঘের দখল, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, কমিশনের রাজনীতি করতে চায় বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে হাসিনাকে বিদায় করেছে সেভাবে তাদেরও বিদায় করবে। জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী বলেছেন, ‘এসি রুমে বসে তারা বলে বাংলাদেশের মানুষ সংস্কার বুঝে না, আমরা তাদের হুশিয়ারি দিতে চাই। আমরা রাজপথে নেমেছি। লড়াই শুরু হয়ে গেছে। আমাদের নতুন খেলা খেলতে হবে। পুরানো বন্দোবস্তের সঙ্গে আমরা নেই। যারা পুরানো বন্দোবস্ত, চাঁদাবাজি, লুটপাটে ফিরতে চায়, তাদের আপনারা লাল কার্ড দেখাবেন।’

আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পদত্যাগ করুন: রিফাত রশিদ

আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পদত্যাগ করুন: রিফাত রশিদ

আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ। মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড ও সারাদেশে চাদাবাজি, দখলদারি, হামলা ও খুনের প্রতিবাদে সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত মশাল মিছিল করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, নির্দিষ্ট একটি দলের পক্ষপাতীত্ব নিয়ে ব্যস্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা সরকারের এমন আচরণ দেশের জনগণ মেনে নেবেনা।

সাবেক আইজিপিকে ক্ষমার বিষয় বিবেচনা করা হবে

সাবেক আইজিপিকে ক্ষমার বিষয় বিবেচনা করা হবে

অপরাধ স্বীকার করে জুলাই গণহত্যার মামলায় ‘সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশের’ শর্তসাপেক্ষে সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের ক্ষমার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। শর্ত অনুযায়ী তাকে নিজের ও তার সঙ্গীদের অপরাধের বিষয় ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরতে হবে। চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত বৃহস্পতিবার দুই পৃষ্ঠার এ লিখিত আদেশ দেন। যা শনিবার গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে। গত ১০ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ  আল মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। তাদের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। আদেশের সময় ট্রাইব্যুনাল সাবেক আইজিপিকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি অভিযোগ স্বীকার করছেন কি না? এরপরই মামুন নিজের অভিযোগ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার  আবেদন করেন। পরে আদালত মামুনের আবেদন মঞ্জুর করে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা সংঘটনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে  তা সত্য। এ ঘটনায় আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি। আমি রাজসাক্ষী  হয়ে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার বিস্তারিত  আদালতে তুলে ধরতে চাই। রহস্য উন্মোচনে আদালতকে সহায়তা করতে চাই।’ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আদেশের অনুলিপিতে বলা হয়েছে, সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে ট্রাইব্যুনাল মনে করেন এ অবস্থায় অভিযুক্ত চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে ক্ষমা করা যেতে পারে এবং সে অনুযায়ী তাকে ক্ষমা করা হলো এই শর্তে তিনি জুলাই গণহত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিস্তারিত  ও সত্য বিষয় তুলে ধরবেন এবং যেসব অভিযোগ এসেছে এবং যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, সবার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেবেন, যতটুকু তিনি জানেন। ট্রাইব্যুনালের আদেশে বলা হয়েছে, সুনির্দিষ্ট ৫টি অভিযোগের ভিত্তিতে ১০ জুলাই তিন অভিযুক্ত- শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ এর ধারা ৩(২)(এ), ৩(২)(জি), ৩(২)(এইচ), ৪(১), ৪(২), ৪(৩)-এর অধীনে অভিযোগ গঠন করা  হয়েছে। আদেশের দিন অভিযুক্ত চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। অপর দুই আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক। অভিযোগ গঠন করার পর তা চৌধুরী আবদুল্লাহ  আল মামুনকে পড়ে শোনানো হয় এবং তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় তিনি দোষী, স্বীকার করবেন কি না। তখন তিনি দোষ স্বীকার করেন এবং জানান যে, তিনি সংশ্লিষ্ট অপরাধসমূহ এবং এই অপরাধ সংঘটনে জড়িত প্রত্যেক ব্যক্তির সম্পর্কে তার জ্ঞাতসারে জানা সব তথ্য ‘সৎভাবে ও সম্পূর্ণভাবে’ প্রকাশ করতে ইচ্ছুক। চৌধুরী আবদুল্লাহ  আল মামুনের পক্ষে তার আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ ক্ষমা প্রদান করার জন্য একটি আবেদন করেন ট্রাইব্যুনালে। আদেশে এ বিষয়ে বলা হয়, প্রধান কৌঁসুলি এই শর্তে ক্ষমা প্রদানের বিষয়ে সম্মতি প্রদান করেন যে- অভিযুক্ত চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ‘সম্পূর্ণ ও সত্য তথ্য প্রদান করবেন’, যা অভিযোগের অপরাধের বিচার কার্যক্রমে সহায়ক হবে। উপর্যুক্ত তথ্য ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ট্রাইব্যুনাল মনে করে যে, অভিযুক্ত চৌধুরী আবদুল্লাহ  আল মামুনকে ক্ষমা প্রদান করা উপযুক্ত এবং সেই মোতাবেক তাকে শর্তসাপেক্ষে ক্ষমা প্রদান করা হয়েছে যে- তিনি সংশ্লিষ্ট  অপরাধসমূহ এবং সংশ্লিষ্ট  সব ব্যক্তি সম্পর্কে তার জানা সব তথ্য ‘সম্পূর্ণ ও সত্যভাবে’ প্রকাশ করবেন। ‘অভিযুক্ত এ শর্তে ক্ষমা গ্রহণ করেছেন এবং সে অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল তাকে সাক্ষী হিসেবে পরবর্তীতে সাক্ষ্যদানের জন্য ডাকবে।’ আদেশে বলা হয়, ‘চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন যেহেতু ক্ষমাপ্রাপ্ত  হয়েছেন  এবং তা গ্রহণ করেছেন, তাই তাকে কারাগারে অন্যান্য বন্দি থেকে আলাদা রাখার প্রয়োজন। সে মোতাবেক সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হলো যেন তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাকে অন্য বন্দিদের থেকে আলাদা করে রাখা হয়।’ এই আদেশের একটি অনুলিপি সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করতে এবং প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

হজে ৪৫ বাংলাদেশির মৃত্যু, দেশে ফিরেছেন ৮৭ হাজার ১০০ জন

হজে ৪৫ বাংলাদেশির মৃত্যু, দেশে ফিরেছেন ৮৭ হাজার ১০০ জন

ফিরতি হজ ফ্লাইট শেষ হয়েছে গত ১০ জুলাই। এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়া প্রায় সবাই ফিরে এসেছেন। এবার বাংলাদেশ থেকে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনা মিলিয়ে ৮৭ হাজার ১৫৭ জন হজযাত্রী হজ পালনের জন্য গিয়েছিলেন। এর মধ্যে মোট ৪৫ জন বাংলাদেশি হজে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ে হজ পোর্টালের পবিত্র হজ প্রতিদিনের বুলেটিনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৮৭ হাজার ১০০ জন হাজি দেশে ফিরেছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজার ৪১৩ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ৮১ হাজার ৬৮৭ জন রয়েছেন। গত ৫ জুন সৌদি আরবে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হয়। হজ শেষে ফিরতি ফ্লাইট শুরু হয় ১০ জুন। ফিরতি ফ্লাইট শেষ হয়েছে ১০ জুলাই। হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাওয়ার ফ্লাইট ২৯ এপ্রিল শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ মে। এবার সর্বমোট বাংলাদেশি হজযাত্রীর (ব্যবস্থাপনা সদস্যসহ) সংখ্যা ৮৭ হাজার ১৫৭ জন। তিনটি এয়ারলাইন্সের মোট ২২৪টি ফ্লাইটে হজযাত্রীরা সৌদি আরবে গেছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১০৮টি ফ্লাইটে ৪২ হাজার ৪০৪ জন, সৌদি এয়ারলাইন্সের ৮৩টি ফ্লাইটে ৩১ হাজার ৬৭৬ জন ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সের ৩৩টি ফ্লাইটে ১৩ হাজার ৭৭ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছিলেন। হজ শেষে ২২১টি ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন হাজিরা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১১২টি ফ্লাইটে ৩৮ হাজার ৬৮৪ জন, সৌদি এয়ারলাইন্সের ৭৫টি ফ্লাইটে ২৭ হাজার ৮১ জন ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সের ৩৪টি ফ্লাইটে ১২ হাজার ২৬৭ জন এবং অন্যান্য এয়ারলাইন্সে ৯ হাজার ৬৮ জন হাজি বাংলাদেশে ফিরেছেন। চলতি বছর হজে গিয়ে মোট ৪৫ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী বা হাজি সৌদি আরবে মৃত্যুবরণ করেছেন। এদের মধ্যে পুরুষ ৩৪ জন ও মহিলা ১১ জন। মক্কায় ২৭ জন, মদিনায় ১৪ জন, জেদ্দায় তিনজন ও আরাফায় একজন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। সৌদি আরবের স্থানীয় হাসপাতালে বর্তমানে ১৪ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী ভর্তি আছেন। ৩২৫ জন হজযাত্রী সৌদি আরবের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে বাংলাদেশ হজ অফিস সূত্রে জানা গেছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব হজ (অধিশাখা) মো. মঞ্জুরুল হক বলেন, হজ ফ্লাইট শেষ হয়েছে। মোটামুটি যারা হজে গিয়েছিলেন সবাই ফিরেছেন। এবার হজে গিয়ে মোট ৪৫ জন বাংলাদেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। অসুস্থ থাকায় এখনো বাংলাদেশি নয়জন হজযাত্রী সৌদি আরবের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তারা পরে ফিরবেন। এ ছাড়া আমাদের হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত কয়েক জন এখনোও সৌদি আরব রয়েছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। 

বাংলাদেশে ভারতীয়দের ঠেলে দেওয়ার সমালোচনা করলেন দিল্লির মানবাধিকার কর্মীরা

বাংলাদেশে ভারতীয়দের ঠেলে দেওয়ার সমালোচনা করলেন দিল্লির মানবাধিকার কর্মীরা

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে এক প্রকার জোর করে ভারতে বসবাসকারী মুসলিমদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার অন্যতম কারণ প্রতিশোধ গ্রহণ হিসেবেই দেখছেন খোদ ভারতীয় বিশ্লেষক ও মানবাধিকার কর্মীরা। ভারতীয়দের দাবি, পশ্চিমারা যদি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে ভারতীয়দের দেশে ঠেলে দিতে পারে ভারত কেন  তাদের দেশে থাকা প্রবাসীদের বিশেষ করে মুসলিমদের ঠেলে দিতে পারবে না। কেউ কেউ আবার মুসলিমরা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করেন। অবশ্য বাংলাদেশি বিশ্লেষকরা এভাবে ঠেলে পাঠানোকে সম্পর্কের টানাপোড়েনের ফল বলে মন্তব্য করেছেন। তাদের মতে, ভারত বাংলাদেশকে সম্ভাব্য যতদিক থেকে চাপে রাখা যায় ততদিকে থেকেই চাপে রাখার চেষ্টা করবে। সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর দু’দেশের সম্পর্কের টানাপোড়ন অন্যতম কারণ। তাদের মতে কূটনৈতিক সম্পর্ক তো আর দু-এক বছর বা পাঁচ বছরে শেষ হয়ে যাবার নয়। ভারত যা করছে তা কোনো মতেই ঠিক নয় বলেও মত দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যেকার দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক সম্পর্কে ইদানীং যে ধরনের শীতলতার আভাস দেখা যাচ্ছে এবং দুই দেশ পরস্পরের নানা ধরনের বাণিজ্যিক সুবিধা বাতিল করে দিচ্ছে, সীমান্তে নিয়মবহির্ভূত ঠেলে দেওয়া হচ্ছে এটা তারই ধারাবাহিকতা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের (আইআর) অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসাইন জনকণ্ঠকে বলেন, ‘গত কয়েক দশকে এমন আচরণ হয় নাই। হঠাৎ করে এভাবে ঠেলে দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়।’ তিনি বলেন, ‘একটি দেশের সরকার পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু কূটনৈতিক সম্পর্ক এত তাড়াতাড়ি পরিবর্তন যোগ্য নয়।’ ‘পুশ ইন ‘পুশ ব্যাক’ আগেও ছিল। কিন্তু বর্তমানে যা হচ্ছে তা কোনো ভাবেই ঠিক হচ্ছে না। বাংলাদেশে ইন্টেরিম গভর্নমেন্ট রয়েছে এই জন্য এমন করতে হবে সেটা কেন? ভবিষ্যৎতে পরিবর্তন হবে ভারতও তো সরকার পরিবর্তন হবে তাই বলে এভাবে একটি দেশের  লোকদের আরেক দেশে ঠেলে দিতে হবে তা কাম্য নয়। ভারত কোনোভাবেই কাজটি ঠিক করছে না।’  এ বিষয়ে জানতে চাইলে চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহম্মদ জনকণ্ঠকে বলেন, ভারত বাংলাদেশকে চাপে রাখতেই এ কাজ করছে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কের শীথিলতাই এ জন্য দায়ী। সাবেক এ রাষ্ট্রদূত বলেন, দেশের স্বার্থে বাংলাদেশের আরও কূটনৈতিকভাবে সত্বর সমাধানের দিকে এগোতে হবে।  সংকটময় পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে সমাধান না হলে পরবর্তীতে করে তেমন ফল আশা করা যায় না। তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাইনুল আহসান জনকণ্ঠকে বলেন,  ভারত আইনের তোয়াক্কা না করে এভাবে মুসলমানদের ঠেলে দিচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উচিত এ সকল বিষয়ে সুস্পষ্ট সমাধান চাওয়া। না হয় যতদিন যাবে তত সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। সিনিয়র এ অধ্যাপক আরও বলেন, বর্তমান সরকার দেশের স্বার্থ রক্ষায় যেভাবে কূটনৈতিক পলিসি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তা প্রতিবেশী দেশের জন্য চিন্তার কারণ। এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশেষ করে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ইস্যুতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ে অপপ্রচার চালানোর বিষয়ে বারবার সতর্ক করে বাংলাদেশ। ভারতে বসে বিভিন্ন ইস্যুতে শেখ হাসিনা বক্তব্য শুরু করার পর অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখায়।  এ ব্যাপারে ভারতীয় বিশ্লেষকরা বলছেন, যে কারণেই হোক ভারত-বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক টানাপোড়েন সীমান্ত বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা, ট্রানজিট বন্ধ করার ঘটনায় প্রতিটি স্থলবন্দরে বাণিজ্যের গতি কমে গেছে। বাংলাদেশিদের জন্য কার্যত ভিসা বন্ধ রেখেছে ভারত। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত এক বিশ্লেষণে লিখেছেন, দ্বিপক্ষীয় শীতলতা দক্ষিণ এশীয় উপ-আঞ্চলিক সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করছে। বিমসটেক সম্মেলনে ইউনূস-মোদি বৈঠকও উত্তেজনা কমাতে পারেনি। সাউথ এশিয়া মনিটরে ১৭ এপ্রিল প্রকাশিত ওই নিবন্ধে তিনি বলেছেন, সম্পর্ক উষ্ণ না হলে  কোনো সম্পর্কই পুরোপুরি কাজে আসবে না। খোঁজ নিয়ে  জানা য়ায়, চলতি বছরের প্রথমার্ধে ভারত যে অন্তত বেশ কয়েক হাজার সন্দেহভাজন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে গোপনে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে। পাশাপাশি বেশ কিছু রোহিঙ্গা মুসলিমকেও ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ আন্দামান সাগরে নামিয়ে দিয়ে মিয়ানমারের দিকে সাঁতরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে-এমন ঘটনাও ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ভারত যে এই পদক্ষেপগুলো নিচ্ছে সব ধরনের আন্তর্জাতিক আইন, রীতিনীতি ও সনদের লঙ্ঘন। বিশেষজ্ঞরা সবাই প্রায় তা নিয়ে একমত। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দিল্লি, রাজস্থান, জম্মু, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা বা কর্নাটকের মতো বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে সন্দেহ হলেই ঢালাওভাবে আটক করে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশে। এসব ভারতের  সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফ রাতে বা বন্দুকের মুখে এদের ঠেলে দিচ্ছে। ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ এয়ারক্রাফট এরকম ২৫০ জন নারী-পুরুষকে গুজরাটের ভাদোদরা থেকে এয়ারলিফট করে উত্তর-পূর্ব ভারতে এনে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে ভারতীয় মিডিয়া রিপোর্ট করেছে। সাউথ এশিয়া হিউম্যান রাইটস ডকুমেন্টেশন সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক রবি নায়ার বলেন, অনেকটা যেন ভারত সরকার এই লোকগুলোকে সোজা কিডন্যাপ করে বর্ডারে নিয়ে এসে নো ম্যানস ল্যান্ডে ছেড়ে দিয়ে যাচ্ছে। অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে নিজস্ব রীতিনীতি রয়েছে সেটাও ভারত মানছে না। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক সচিব ও ভারতের লেখক ও মানবাধিকার আইনজীবী নন্দিতা হাকসার বলেন, বাংলাদেশ যে তার আলাদা একটা দুর্বলতা, সেটা তিনি বিভিন্ন প্রসঙ্গে একাধিকবার বলেছেন এবং এই মুহূর্তে যেভাবে বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অসহায় নারীপুরুষদের পুশ ইন করা হচ্ছে, তা তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না।‘  তিনি বলেন, মানবাধিকার নিয়ে যত আন্তর্জাতিক আইন আছে ভারত তা মেনে চলার অঙ্গীকার করেছে, এমনকি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের নির্বাহী কমিটিতেও ভারতের প্রতিনিধিত্ব আছে।‘ তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে শুধু নাগরিকদের নয়, ভারতের সংবিধান কিন্তু এই অধিকার ভারতের ভৌগোলিক সীমানায় বসবাসকারী প্রত্যেক মানুষকে দিয়েছে। ভারতীয় ভূখণ্ডে একবার অবৈধভাবেও যদি কেউ প্রবেশ করে থাকেন তারপরও তার কিছু কিছু অধিকার থাকে, যেগুলো এখানে প্রয়োগ করার সুযোগই তাকে দেওয়া হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডেপুটি এশিয়া ডিরেক্টর মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তিনি কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘একটা দেশের অবশ্যই অধিকার আছে তার দেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করা ব্যক্তিদের বের করে দেওয়ার কিন্তু সেই সঙ্গেই তিনি মনে করিয়ে দেন তার একটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত রীতিনীতি আছে, নিয়ম-কানুন বা প্রোটোকল আছে।’ তিনি স্বীকার কলেছেন, গত কয়েক মাসে ভারত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে যতজনকে আটক করে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে, সেগুলোর কোনোটির ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের কাছে তাদের পরিচয় যাচাই বাছাই করতে পাঠানো হয়নি। অথচ নিয়মমাফিক এই ধৃতদের নাম-পরিচয় এবং বাংলাদেশে কথিত ঠিকানা যাচাই করার জন্য সেটা আগে নিকটতম দূতাবাসে পাঠানোর কথা।’ ভারতের সাবেক শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিবিদ তথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী আবার বিশ্বাস করেন, বর্ডার দিয়ে এই যে লোকজনকে ঠেলে ফেরত পাঠানো সেটা আসলে বাংলাদেশের জন্য ভারতের একটা বার্তা দেওয়া। ঢাকায় ভারতের এই সাবেক হাই কমিশনার বলেন, এই জিনিস তো নতুন কিছু নয়, আগেও যখনই দেখা গেছে ঢাকাতে আমাদের প্রতি তত বন্ধুত্বপূর্ণ নয় এমন সরকার আনফ্রেন্ডলি রেজিম ক্ষমতায় এসেছে, তখনই আমরা এ জিনিস করেছি। শুধু আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা গত ১০ মে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন, তার রাজ্য থেকে সম্প্রতি মোট ৩০৩ জন অবৈধ বিদেশিকে ইমিগ্রান্টস ১৯৫০-র আওতায় বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেটা বাংলাদেশ সরকারের সম্মতিক্রমে, না কি জোর করে তা তিনি প্রকাশ করেননি। গত কয়েক মাসে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালকেও একাধিকবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘নিয়ম আর আইন ভেঙে কেউ যদি ভারতে আসেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবে এঠাই স্বাভাবিক। আমাদের সীমান্তরক্ষীরা এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে এবং তারা নিজেদের কর্তব্য করে যাবেন।

অবহেলায় পড়ে আছে  ১৩২ বছরের ঐতিহ্যের স্মারক

অবহেলায় পড়ে আছে ১৩২ বছরের ঐতিহ্যের স্মারক

১৩২ বছরের পুরানো একটি বাড়ি সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে চট্টগ্রামের সিআরবি (সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং) এলাকায়। সিআরবির সুউচ্চ পাহাড়ে হাতির আদলে তৈরি ডুপ্লেক্স বাড়িটি ঘিরে রয়েছে চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের আলাদা কৌতূহল। শুঁড় তুলে দাঁড়িয়ে থাকা হাতির অবয়বে তৈরি ভবনটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন। সিআরবির পাহাড়ের চূড়ায় এ বাড়িটিকে বলা হয়, হাতির বাংলো। হাতির আকৃতির মতো করেই তৈরি করা এ বাড়িটি বর্তমানে অযত্ম ও অবহেলায় পড়ে আছে। অসাধারণ এ ভবনটিকে রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসছে না। দূর থেকে দেখতে হাতির আকৃতির মতো লাগার কারণে এটি পরিচিত ‘হাতির বাংলো’ নামে। পুরানো স্থাপত্যশৈলীর কারুকাজ না থাকলেও ফেরো সিমেন্টের তৈরি প্রাচীন বাংলোটি দেখতে এখন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন, দূর থেকে দেখেই ছবি তুলে ফিরে যান দর্শনার্থীরা। লোকালয় থেকে দূরে হওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই প্রতিনিয়ত চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানের বাসিন্দারা হাতির বাংলো দেখতে আসেন। ইতিহাস বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, সিআরবি এলাকার এ হাতির বাংলোর পেছনে রয়েছে অনবদ্য ইতিহাস। এটিকে যথাযথ সংরক্ষণ ও সংস্কার করলে এটি হতে পারে এ অঞ্চলের সমৃদ্ধ ইতিহাসের স্মারক। হাতির বাংলোটিতে যেতে হলে নগরীর লেডিস ক্লাবের পাশে সড়ক দিয়ে উঠতে হবে, না হয় সিআরবির পুলিশ সুপারের কার্যালয় অতিক্রম করেই যেতে হবে। এ বাংলো ঘিরে রয়েছে নানা বৃক্ষরাজি। পত্রপল্লবে ও সৌরভে সুবাসিত হাতির বাংলোর চারপাশ। আছে হরেক পাখির কলতান। বর্ষায় হাতির বাংলো দেখতে যেমন  অন্য রকম মুগ্ধতার ছোঁয়া  থাকে, তেমনি তা  দর্শনার্থীদের হৃদয়ে স্থায়ীভাবে দাগ কাটে। একইভাবে শীতের সিগ্ধতায় আলাদা আবেশে দেখা যায় হাতির বাংলো। কারণ তখন কুয়াশামাখা আবহাওয়ায় অপরূপ লাগে পাহাড়ের চূড়ায় থাকা এ প্রাচীন বাড়িটি। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মালিকানাধীন এ বাংলো হাতির রঙের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে ছাই রঙের প্রলেপ। যার কারণে অনেকে দূর থেকে ভবনটিকে দেখতে হাতির মতো মনে হয়। এ ভবনের সামনে, পেছনে এবং ওপরে মিলিয়ে মোট ১২টি জানালা রয়েছে। বাংলোর ওপরে হাতির চোখের মতো রয়েছে দুটি ছিদ্র। জানা গেছে, সিআরবির পাহাড় চূড়ায় ১৮৯৩ সালে বাংলোটি নির্মাণ করা হয়। সে হিসেবে এর বয়স ১৩২ বছর। তবে ভবনটি এখন নড়বড়ে। সংস্কারের অভাবে হয়ে গেছে বিবর্ণ। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের তথ্যমতে, এ বাংলোটি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছিল ফেরো সিমেন্ট। যার ফলে শত বছর পার হলেও এটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে সগৌরবে। এ বাংলোতে এখন প্রবেশ করার সুযোগ নেই। প্রবেশের গেটটি থাকে তালাবদ্ধ। বাংলোর সীমানা অতিক্রম করে অনেক কৌতূহলী দর্শনার্থী ছবি তুলে আবার ফিরে আসেন। হাতির বাংলো নির্মাণের পর সেখানে রেলওয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা থাকতেন। তবে কালের পরিক্রমায় সেটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ায় এখন সেটি ভূতুড়ে বাড়ি। জরাজীর্ণ এ হাতির বাংলো ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ হলেও এটি রক্ষণাবেক্ষণে নেই কোনো ব্যবস্থা। বেশ কয়েকবার রেলওয়ের শীর্ষ কয়েক কর্মকর্তা এটিকে সংরক্ষণ ও মেরামতে উদ্যোগ নিলেও তা  ছিল শুধুই প্রতিশ্রুতি।  বাস্তবায়ন হয়নি আজও। বাংলো বাড়িটি ডুপ্লেক্স হওয়ায় এটির নিচতলা এবং দোতলায় শয়নকক্ষও রয়েছে। এ বাড়িতে এখন লোক থাকেন। তবে সেটি নিয়েও রয়েছে বিভিন্ন বক্তব্য। কেউ বলেন একজন থাকেন, অনেকে বলেন বেশ কয়েকজন থাকেন। ঐতিহাসিক ‘হাতির বাংলো’ নিয়ে রয়েছে ভুতুড়ে গল্প। সিআরবির আশপাশের অনেকে বলেন, রাতে এ ভবনটির আশপাশে বিভিন্ন প্রাণীর আনাগোনা থাকে।

আনাগোনা নেই শিল্পীদের এফডিসি এখন প্রাণহীন

আনাগোনা নেই শিল্পীদের এফডিসি এখন প্রাণহীন

 দেশি চলচ্চিত্রের সূতিকাগার হিসেবে বিবেচিত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)। এক সময় শূটিং, ডাবিং, এডিটিং, প্রিন্ট সবকিছু মিলে এখানকার পরিবেশ ছিল সরগরম। নব্বইয়ের দশকেও সিনেমার বেশিরভাগ কাজ এফডিসিতেই হতো। সে সময় সপ্তাহে পাঁচ-ছয়টি সিনেমার শূটিং হওয়ারও নজির রয়েছে। এখন অনেকটাই জৌলুসহীন, প্রাণহীন, কর্মহীন পরিবেশে পরিণত হয়েছে। শূটিং নেই, নেই অভিনয় শিল্পীদের আনাগোনা। সুনসান নীরবতায় ঘেরা এক পরিবেশ। দিনের বেলা বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যদের আনাগোনা কিছুটা থাকলেও সন্ধ্যার পর হয়ে ওঠে ভূতুড়ে পরিবেশ। মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন সংগঠনের নির্বাচনের সময় কিছুদিন প্রাণ ফিরে পায়। পরে আবারও প্রাণহীন। কালের স্রোতে দেশের চলচ্চিত্রের প্রাণকেন্দ্র এখন এক নীরব সাক্ষী।  এফডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে এখন ডাবিং বা সাউন্ডের কিছু কাজ করা হলেও সিনেমার শূটিং তেমন হয় না। বেশিরভাগ নির্মাতা সিনেমার কাজ করার জন্য ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন শূটিং স্পট বেছে নেন। অনেকে দেশের বাইরেও চলে যান। মাঝে মাঝে কিছু বিজ্ঞাপনের কাজ হয়। টেলিভিশনের কিছু অনুষ্ঠানের শূটিংয়ের জন্য মানুষের আনাগোনা হয়। দেশে অসংখ্য বেসরকারি শূটিং স্পট গড়ে উঠেছে। সেসব স্থানে শূটিংয়ের সুবিধা, ক্যামেরা, এডিটিং, এমনকি থাকার সুযোগ সুবিধাও রয়েছে। ফলে পরিচালক, প্রযোজক এবং নির্মাতারা সেসব স্থানে শূটিং করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট অনেকে। তাদের মতে, এফডিসিতে কাজ করতে যে টাকা খরচ করতে হয় বাইরের শূটিং হাউসগুলোয় এর চেয়ে কমে সেটা করতে পারেন। এখানে যেমন শিফট হিসেবে পেমেন্ট করতে হয়। দুই শিফট কাজ হলে দুই শিফটের টাকা দিতে হয়, কিন্তু ওসব জায়গায় তারা প্যাকেজ আকারে সুবিধা পান। আবার ভ্যাট, ট্যাক্স ইত্যাদি মিলিয়ে এখানে তাদের যে খরচ পড়ে, বাইরে কাজ করলে এর চেয়ে কমে করতে পারেন। এসব কারণেই এফডিসিতে এখন অনেক নির্মাতা আসতেই চান না। সিনেমা সেন্সরে যাওয়ার আগে এফডিসির একটি ছাড়পত্র প্রয়োজন হয়। তাই সেই ছাড়পত্র নিতেই অনেকে আসেন। অন্যথায় তাদের আসতে দেখা যায় না। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এফডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া তেমন কেউ নেই। এমনকি চলচ্চিত্র নির্মাণের শূটিং না থাকায় শিল্পী-কলাকুশলীদেরও পাওয়া যায়নি। তেমন কোনো কর্মকাণ্ড নেই, কর্তৃপক্ষ বলছে, ঠিকঠাকভাবেই চলছে বিএফডিসি।  এফডিসির এই প্রাণচাঞ্চল্য বর্জিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে অগ্রজ চলচ্চিত্র পরিচালক ছটকু আহমেদের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এখন তো ফিল্ম নেই। তাতে করে এফডিসিতে পদচারণা হবে কি করে? আমার একটা ফিল্ম বর্তমানে সেখানেই শূটিং চলছে। ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ নামে যে ছবিটি দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিল সেইটা আবার নতুন আঙ্গিকে হচ্ছে। আমি এটার উপদেষ্টা পরিচালক। এর পরিচালক এখন অন্যজন। সেটা নিয়েই চ্যানেল আই এগুচ্ছে। আমরা যারা মূল ধারার ছবি বানাতাম তারা কেউ এফডিসিতে ছবি বানাচ্ছি না। সেখানে একটা ছবি বানাতে গেলে ফাইল নিয়ে ঘুরতে হবে কমপক্ষে এক মাস। এখানে টাকা জমা দিতে হবে, ওখানে বিভিন্ন নথিপত্র জমা দিতে হবে। মোটকথা সিস্টেমের মধ্যে সেখানে কাজ করতে গিয়ে শুধু এখানে-ওখানে ঘুরতে হয়। একটি ছবি বানাতে গেলে অর্থ উপদেষ্টা থেকে শুরু করে ঘুরতে হবে বিভিন্ন জায়গায়। দেখলাম সেখানে শূটিং করা অনেক ঝামেলার। এখন যারা ছবি বানায় তারা চিন্তা করে বেটার কোথায় ছবির শূটিং করা যায়। মনে করেন এফডিসিতে একটা ক্যামেরা নিতে গেলে কমপক্ষে এক লক্ষ টাকা জমা দিতে হবে। পরবর্তীতে নিতে গেলে আবার এটা-ওটা করতে হবে। অথচ বাইরে যেখানে কাজ করি, তারা ক্যামেরা পাঠিয়ে দেয়। পরে একটা বিল করে পাঠায়। কিন্তু এফডিসিতে সব নিয়ম আপনাকে আগে করতে হবে। কাজেই এফডিসিতে এখন টোটালি ছবির শূটিং নেই বললেই চলে। আর ছবির ব্যবসা তো নেই। যার জন্য এফডিসি এখন পদচারণায় মুখরিত হয় না। মূলত এফডিসি তো ছবির জন্য। আর ছবি যদি না হয় এফডিসিতে যাবে কে? আমরা যারা বুড়ো হয়ে গেছি তারা পরিচালক সমিতিতে বসে মাঝে-মধ্যে পুরানো দিনের কথাবার্তা আলোচনা করি। কিন্তু ছবি বানানোর যে ইনটেনশন তা খুব কমে গেছে। আপনি যদি ভাবেন সেই সোনালি দিনের মতো পদচারণা দেখবেন তা তো হবে না। এফডিসিতে কাজ করতে হলে আগে থেকে প্রযোজক সমিতির সদস্য, পরিচালক সমিতির সদস্য হতে হয়। শিল্পী সমিতিও আছে এফডিসিতে। সঙ্গে আরও রয়েছে ১৬টি সংগঠন। এসব সংগঠনের সদস্যরাই এফডিসিকে সরগরম রাখার চেষ্টা করেন প্রায়শই। বিশেষ করে শূটিংহীন এফডিসিতে পরিচালক সমিতি ও শিল্পী সমিতির সদস্যদের বেশি আনাগোনা দেখা যায়। তবে এর মধ্যে শিল্পী সমিতির সদস্য সংখ্যা বেশি বলে তারাই বেশি থাকেন। এরা সবাই অবশ্য তারকা শ্রেণির নন। নির্বাচন নিয়েই এফডিসি থাকে উত্তপ্ত, থাকে মানুষের আনাগোনা। পরিচালক সমিতির নির্বাচন নিয়ে এফডিসি সরগরম থাকলেও সেটা বলা যায় ঝামেলাহীন। পরিচালকরা ভোটের পক্ষকাল আগে থেকে এফডিসিতে আসেন। আড্ডা দেন। নিজেদের পক্ষে প্রচার চালান। নির্বাচন শেষে আবারও তারা নীরব। কিন্তু যত ঝামেলা তৈরি হয় শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে। বিশেষ করে গত কয়েক বছর ধরে শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে বাগবিতণ্ডা, এমনকি হামলা-মামলাও হয়েছে। এফডিসির এ কর্মহীনতা বা সুনসান নীরবতা প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির বর্তমান সভাপতি শাহীন সুমনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, সবাই বলে এফডিসি আছে, কিন্তু প্রাণ নাই। আমাদের দীর্ঘদিনের পথচলা এফডিসিতেই। এই মুহূর্তে এখানে কাজের গতি নেই বলা যায়। মাঝে মাঝে কেউ কেউ কিছু কাজ করেন। এফডিসি এখন বলা যায় শূন্য বাগান। কিন্তু এটা আমাদের কাম্য না। এফডিসিতে প্রাণচাঞ্চল্য নেই তার কারণ অনেক। প্রধানত দেশে এখন ছবি নির্মাণ তেমন নেই। হল সংকটের কারণে সিনেমাও তৈরি কমে গেছে। অনেকে ঈদকেন্দ্রিক কিছু ছবি বানিয়ে ব্যবসা করেন। এরপর হল আবার বন্ধ হয়ে যায়। যদি হল না থাকে তাহলে টাকা লগ্নি করে সিনেমা বানিয়ে তো দেখাতে পারবে না। সরকারের কছে আমাদের দাবি ছিল প্রত্যেক জেলা শহরে একটি করে সিনেপ্লেক্স তৈরি করা। তাহলে সরকার যে অনুদান দেয় তা দিয়ে সিনেমা বানিয়ে হলে দেখানো সম্ভব। দ্বিতীয়ত এফডিসিতে সিনেমা বানানোর জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক যন্ত্রপাতি ও টেকনিশিয়ানের অভাব। তবে যা আছে তার যদি রেট কমিয়ে দেয় তাহলে কিছুটা কাজ হবে। আমরা ছবি করার সময় দেখেছি আধুনিক যন্ত্রপাতির খুব অভাব। কাজ চালানোর মতো কিছু আছে, সেটাও ভালো মানের না। মানুষের রুচি বদলেছে এখন। তারা নান্দনিক লোকেশন দেখতে চায়। এক জায়গায় গৎবাঁধা কাজ দেখতে চায় না। তাই নির্মাতারাও লোকেশনে বৈচিত্র্য আনার জন্য বাইরে শূটিং করেন। এ কারণে এফডিসিতে শূটিং নেই বললেই চলে। আর এখানকার কিছু নিয়ম-কানুন তো রয়েছেই, যেগুলো নির্মাতাদের অনুকূলে নয়। তাই এখানে শূটিং হয় না।  এফডিসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঝাড়ুদার বলেন, আমি বিএফডিসিতে ৪০ বছরেও অধিক সময় ধরে ঝাড়ুদারের কাজ করে যাচ্ছি। আগের সময় কত জমজমাট ছিল। ভোর থেকেই কত নায়ক-নায়িকা, পরিচালক আসা-যাওয়া করতেন। দেখতেও ভালো লাগত। কিন্তু এখন শূটিং নেই বললেই চলে। চলচ্চিত্র নির্মাণের সেটের কাজ করেন এমন একজন বলেন, আমরা যারা চলচ্চিত্রের সেটের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি কাজ কম থাকায় তাদের সংসার চলাটাও দায় হয়ে পড়েছে। শূটিং না থাকায় ক্যান্টিনের কেনাবেচাও কম। অভিনেতারা বলছেন, লাইট, ক্যামেরা, শূটিং স্পট, ডাবিং, এডিটিংসহ বিভিন্ন টেকনিক্যাল বিষয়ের দাম কমানো হলেই চলচ্চিত্র বাড়বে এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও আসা-যাওয়া করবেন। এফডিসির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব পালন করছেন মাসুমা রহমান তানি। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে তার ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি।  সম্প্রতি এফডিসিতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। গত ৩১ মে বিকেলে মানিক মিয়া নামের এক যুবক চাপাতি হাতে এফডিসিতে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায়। সেই হামলার ঘটনার ১০ দিনের মাথায় গত ১১ জুন এফডিসির কালার ল্যাবে চুরির ঘটনা ঘটে। তবে এফডিসির নিরাপত্তারক্ষীরা বিষয়টি টের পেয়ে হাতনাতে ধরেন দুই কিশোর চোরকে। এফডিসির পাশের রেললাইন হচ্ছে মাদকের আখড়া। যে কারণে দেওয়ালের অবস্থা বেহাল থাকায় অনেক ঝুঁকি রয়েছে। যে কোনো সময় যে কোনো দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।