
সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আবর্জনা ফেলার নিদিষ্ট জায়গা থাকলেও পাড়া মহল্লা থেকে ময়লা এনে রাখা হয় রাস্তার পাশে
‘নির্মল বায়ুর শহর’ হিসেবে এক সময় পরিচিত রাজশাহী এখন ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে দূষিত হয়ে পড়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও এলাকা পরিণত হয়েছে মিনি ভাগাড়ে। সঙ্গে রয়েছে বেহাল সড়ক, নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের ধীরগতি আর সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবÑ সব মিলিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।
রাজশাহী মহানগরীতে ময়লা-আবর্জনা সাময়িকভাবে জমা রাখার জন্য রয়েছে একাধিক এসটিএস (সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন)। এসব স্টেশনে বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগৃহীত বর্জ্য জমা হয়, পরে ভাগাড়ে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু এখন এসটিএসগুলোই পরিণত হয়েছে স্থায়ী ভাগাড়ে। দীর্ঘদিন তদারকি ও পরিচ্ছন্নতা না থাকায় এসব স্থান থেকে ছড়াচ্ছে প্রচÐ দুর্গন্ধ। অনেক এলাকায় এসটিএস না থাকায় রাস্তার ধারে, বাসার পাশে কিংবা ফুটপাতে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য।
বিশেষ করে নগরীর কোর্ট স্টেশনের সামনে ‘স্মার্ট সড়ক’ নামে পরিচিত প্রজাপতি সড়ক এখন কার্যত একটি মিনি ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দিনভর এখানে বাসাবাড়ির ময়লা জমা হচ্ছে। রাতের বেলা সিটি করপোরেশন সেগুলো সরালেও, সারাদিনই পথচারী ও বাসিন্দাদের চলতে হয় দুর্গন্ধ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। এতে ক্ষুণœ হচ্ছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সুনাম, ক্ষুব্ধ হচ্ছেন নগরবাসী।
নগরজুড়ে ময়লা-আবর্জনার পাশাপাশি সড়কের দুরবস্থাও নগরবাসীর দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। এক সময়ের পরিচ্ছন্ন ও প্রশস্ত সড়কগুলো এখন খানাখন্দে ভরা। বর্ষায় এসব গর্তে পানি জমে রূপ নিচ্ছে দুর্ঘটনার ফাঁদে।
নগরীর ভদ্রা লেকের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সড়ক, আমচত্বর থেকে কোর্ট স্টেশন, সিপাইপাড়া, শ্রীরামপুর, লিলি হল মোড়Ñ প্রায় সব জায়গায় রয়েছে বড় বড় গর্ত। কিছু জায়গায় খোয়া-পাথর উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ যানবাহন চলাচল সংকট।
অন্যদিকে, শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সড়কে চলছে ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ। কিন্তু ধীরগতির এই প্রকল্পের কারণে নিচের সড়কগুলো দীর্ঘদিন ধরে মেরামতহীন পড়ে আছে। রেলগেট থেকে নওগাঁ সড়ক, বন্ধগেট থেকে তেরখাদিয়া, ঐতিহ্য চত্বর থেকে বহরমপুর, চারখুটার মোড় থেকে কাশিয়াডাঙ্গাÑ সব সড়কই বর্তমানে চলাচলের অনুপযোগী। চন্দ্রিমা এলাকার এক স্কুলশিক্ষক শাফিউল ইসলাম বলেন, রাজশাহীর রাস্তা একসময় অনেক ভালো ছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, কয়েক বছরের মধ্যে সব নষ্ট হয়ে গেছে। এতে নিশ্চয়ই নির্মাণে দুর্নীতি হয়েছে। ঠিকাদার ও প্রকৌশলীদের জবাবদিহিতায় আনা উচিত।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আহমদ আল মঈন বলেন, দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সড়কগুলো খারাপ হয়ে গেছে। মাঠ পর্যায়ে জরিপ চলছে। আগামী এক মাসের মধ্যে সংস্কার কাজের টেন্ডার করা হবে।
তবে শহরের পরিবেশ ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন সাংবাদিকদের ফোনে বলেন, তিনি জ্বরে আক্রান্ত, কথা বলতে পারবেন না। কথা বলার জন্য তিনি রবিবার অফিসে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
রাজশাহীর পরিচ্ছন্নতা ও সড়ক ব্যবস্থাপনা এখন ভেঙে পড়েছে বলে মনে করছেন নাগরিকরা। একদিকে ময়লার ভাগাড়ে রূপ নিয়েছে এসটিএস, অন্যদিকে ধ্বংসপ্রায় সড়কে চলছে নগরবাসীর ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত। দ্রæত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে রাজশাহীর পরিচিত ‘নির্মল নগরী’র ভাবমূর্তি হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা নাগরিক সমাজের।