
ছবি: সংগৃহীত।
কর্মপ্রত্যাশী যুবকদের জন্য অনলাইন নিবন্ধন চালু, নিবন্ধিত যুবদের এক বছরের মধ্যে কাজ নইলে বেকার ভাতা প্রদান, অবিলম্বে সকল শূন্যপদে ঘুষ ছাড়া যোগ্যতাভিত্তিক নিয়োগ, নিয়োগ বাণিজ্য-বদলি বাণিজ্য বন্ধ, দুর্নীতি, দলীয়করণ ও স্বজন প্রীতি বন্ধ, সহজ শর্তে ঋণ প্রদান ও প্রয়োজনীয় প্রণোদনার মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরিতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগসহ ৮ দফা দাবিতে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের উদ্যোগে ‘ঢাকা যুব সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হয়।
শুক্রবার বিকালে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুব ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি শাহিন ভূঁইয়া। সমাবেশে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সহকারী সাধারণ সম্পাদক জননেতা মিহির ঘোষ, যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নান্নু, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ইরান মোল্লা, দক্ষিণের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন, নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি রাশেদুল মন্জু, গাজীপুর জেলার সভাপতি মেহেদী হাসান, সমাবেশ প্রস্তুতি পরিষদের আহ্বায়ক রফিজুল ইসলাম, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহির শাহরিয়ার প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তরে সাধারণ সম্পাদক যুব নেতা অনিন্দ্য দ্বীপ।
সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ বলেছেন, দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি দাবি করেন, সরকার নিরপেক্ষ থাকার কথা বললেও বর্তমানে একটি বিশেষ দলকে সহযোগিতা করছে।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের আন্দোলনের ফসল। অথচ আমরা দেখছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি রাজনৈতিক দলকে গঠনে ভূমিকা পালন করছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি ( এনসিপি) নামের একটা দলকে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। জেলায় জেলায় ডিসি-এসপির পাহারায় সভা সমাবেশে করছে। শুধু তাই নয়, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দলকেও তারা পেট্রোনাইজ করছে।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে তাদের নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। আপনার দ্রুত নির্বাচন দিয়ে সরে যান। সেটা অবশ্যই নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হবে।
মিহির ঘোষ বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধ কে তাদেরমত করে নানানভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের যে মূল চেতনা গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ তারা ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল।এবং তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী শক্তি ক্ষমতায় থাকার জন্য আপস করেছিল। আজকেও দেশে একই পরিস্থিতি। আজকে মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে অর্জিত সংবিদান ছুড়ে ফেলার কথা বলা হচ্ছে। আজকে আক্রান্ত হচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যকে আক্রান্ত করা হচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে ভাস্কর্য, আক্রান্ত হচ্ছে সংস্কৃতি।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। দিনের ভোট রাতে করেছে। উন্নয়নের নামে লুটপাট করেছে। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে। দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে মানুষ জর্জরিত ছিল। ব্যাংকগুলো লুট করা হয়েছে। মানুষের মানবাধিকার হরণ করেছে। এসবের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান তৈরি করেছে। সে সময় আমাদের স্লোগান ছিল দুঃশাসন হঠাও, ব্যবস্থা বদলাও। আমরা আশা করেছিলাম এই অপশাসন থেকে এবার দেশের দেশের মানুষ মুক্তি পাবে৷ কিন্তু দুঃশাসনও যায়নি, ব্যবস্থাও বদল হয়নি।
গোপালগঞ্জে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এই নেতা বলেন, সেখানে যে হত্যাকাণ্ড হল সেসব লাশ পোস্টমর্টেম ছাড়া কবর দেয়া হয়েছে। এসব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা ভয়ংকর রূপে আরেক ফ্যাসিস্ট দেখছি। এ অবস্থা দেখার জন্য দেশের মানুষ গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত করে নাই।
যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আওয়ামী লীগ বাণিজ্য করেছে। মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আমরা রাজপথে ছিলাম। শতশত মানুষ জীবন দিয়েছে৷ হাজারো মানুষ পঙ্গু হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখলাম জুলাইয়ের এক বছর যেতে না যেতেই জুলাইয়ের চেতনার সাথে বেইমানী করা হয়েছে। সারা দেশে চাঁদাবাজি, লুটপাট, মাজারে হামলা, খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই চলমান রয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে। আমরা এমন বাংলাদেশ চাইনি।
জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে বড় স্লোগান ছিল বৈষম্য রোদ করা। কিন্তু আমরা দেখলাম বড় বৈষম্য হয়েছে দেশের শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষের সঙ্গে। যে রিকশা চালকরা জীবন দিলো জুলাই অভ্যুত্থানে তাদের ওপর চরম জুলুম হয়েছে। বৈষম্য হয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিকের সঙ্গে, বৈষম্য হয়েছে এদেশের বেকার যুবকদের সঙ্গে। সরকারের এসবের দিকে কোনো নজর নেই। তারা ব্যস্ত আমেরিকার সঙ্গে নানা চুক্তি করতে।
যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম নান্নু বলেন, গত জুলাইয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। তার ওপর ভিত্তি করে দেশে একটা অভ্যুত্থান হয়েছে। সেই অভ্যুত্থানের দেশের সকল রাজৈনতিক দল অংশগ্রহণ করে। দাবি ছিল একটাই বৈষম্য নিরসন হবে, বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু আমরা দেখলাম পাঁচ আগস্টের পর গত এক বছরে ৬১ লাখ মানুষ কর্ম হারিয়েছে। ২০০ এর বেশি গার্মেন্টস বন্ধ হয়েছে৷ মব তৈরি করে এসব কারখানা লুটপাট করা হয়েছে। সরকার বিনোয়গ বাড়াতে ঢাকঢোল পিটিয় একটা সামিট করা হল। বলা হয়েছে দেশে কর্মসংস্থানের বন্যা বয়ে যাবে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
তিনি বলেন, দেশের কোটি যুবক বেকার তাতে কিছু যায় আসে না। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধিতে জনজীবনের সংকট আরও তীব্রতর হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশের বিপুল কর্মহীন যুবককে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কর্মসংস্থানের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া বিকল্প নেই।
সমাবেশের পূর্বে একটি সুসজ্জিত মিছিল পুরানা পল্টন থেকে প্রেসক্লাব, হাইকোর্ট, মৎস্য ভবন মোড়, শাহবাগ মোড়, টিএসসি মোড় হয়ে শহীদ মিনারে সমাবেশ মঞ্চে এসে শেষ হয়।
সমাবেশের শুরুতে এবং শেষে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী ও ব্যান্ড দল স্বপ্নবাজ-এর শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।
নুসরাত