
ছবি: সংগৃহীত।
প্রোটিন আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য একটি পুষ্টি উপাদান। শুধু পেশি গঠনের জন্য নয়, এটি ত্বক, চুল, নখ, হরমোন, এনজাইম ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ভিত্তি হিসেবেও কাজ করে। অথচ, শরীরে প্রোটিনের ঘাটতির লক্ষণগুলো অনেক সময় এতটাই সূক্ষ্ম যে আমরা তা অবহেলা করে ফেলি কিংবা অন্য কারণে ভুল বুঝি।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এমন ছয়টি লক্ষণ চিহ্নিত করেছেন, যা প্রোটিন ঘাটতির ইঙ্গিত দিতে পারে—তবে সাধারণত সেগুলো আমরা সহজে ধরতে পারি না।
১. বারবার খাওয়ার তীব্র ইচ্ছা বা মিষ্টির প্রতি আকর্ষণ:
শরীরে প্রোটিনের অভাব হলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এতে হঠাৎ খিদে লাগে ও মিষ্টিজাত খাবারের প্রতি তীব্র আকর্ষণ তৈরি হয়। প্রোটিন রক্তে শর্করার শোষণ ধীর করে, কিন্তু ঘাটতি হলে শরীর তা পূরণে তাৎক্ষণিক শক্তির সন্ধানে মিষ্টি বা প্রক্রিয়াজাত খাবার চায়।
২. মুখ ফোলা বা পা ফুলে যাওয়া:
প্রোটিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান অ্যালবুমিন, যা রক্তনালীর বাইরে তরল জমতে বাধা দেয়। ঘাটতি হলে এসব তরল শরীরের কোষে জমে গিয়ে চোখের নিচে, পায়ে বা গোড়ালিতে ফোলাভাব দেখা দিতে পারে।
৩. হঠাৎ মেজাজ খারাপ হওয়া বা হতাশা:
প্রোটিন থেকে তৈরি হয় সেরোটোনিন ও ডোপামিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটার, যা মেজাজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। খাদ্যে প্রোটিন কম থাকলে মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত অ্যামিনো অ্যাসিড পায় না, ফলে আবেগগত ভারসাম্য নষ্ট হয়। বিরক্তি, অস্থিরতা বা অল্প হতাশা—এই পরিবর্তনগুলোর পেছনে প্রোটিন ঘাটতির ভূমিকা থাকতে পারে।
৪. চামড়া সহজে ক্ষত হওয়া এবং নখ ভেঙে যাওয়া:
প্রোটিন টিস্যু পুনর্গঠনে সহায়তা করে। ক্ষত সহজে না শুকানো, ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস বা নখ দুর্বল হয়ে ভেঙে যাওয়া প্রোটিন ঘাটতির লক্ষণ হতে পারে। ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় কোলাজেন নামক প্রোটিনের ঘাটতিও এর কারণ হতে পারে।
৫. চুল ঝরে পড়া—স্ট্র্যান্ড নয়, গোছা ধরে:
চুলের মূল উপাদান কেরাটিন নামক প্রোটিন। শরীরে প্রোটিন ঘাটতি হলে শরীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্য প্রোটিন সংরক্ষণে চুলের বৃদ্ধি কমিয়ে দেয়। ফলে হঠাৎ করে অস্বাভাবিক হারে চুল পড়ে যেতে পারে—এমনকি গোছা ধরে চুল উঠে যেতে পারে।
৬. ঘন ঘন অসুস্থ হওয়া:
ইমিউন সেল, অ্যান্টিবডি ও নিরাময় এনজাইম—সবই তৈরি হয় প্রোটিন থেকে। তাই প্রোটিনের অভাবে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে সহজে ঠান্ডা লাগা, সর্দি বা জ্বর লেগে থাকা এবং এগুলো দীর্ঘস্থায়ী হওয়া দেখা দিতে পারে।
উল্লিখিত উপসর্গগুলো একাধিক থাকলে দ্রুত একজন চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সুষম খাদ্য গ্রহণ ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন—ডিম, মাছ, মুরগি, ডাল, বাদাম ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
মিরাজ খান