
সিআরবির পাহাড়ে হাতির বাংলো
১৩২ বছরের পুরানো একটি বাড়ি সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে চট্টগ্রামের সিআরবি (সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং) এলাকায়। সিআরবির সুউচ্চ পাহাড়ে হাতির আদলে তৈরি ডুপ্লেক্স বাড়িটি ঘিরে রয়েছে চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের আলাদা কৌতূহল। শুঁড় তুলে দাঁড়িয়ে থাকা হাতির অবয়বে তৈরি ভবনটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন। সিআরবির পাহাড়ের চূড়ায় এ বাড়িটিকে বলা হয়, হাতির বাংলো। হাতির আকৃতির মতো করেই তৈরি করা এ বাড়িটি বর্তমানে অযত্ম ও অবহেলায় পড়ে আছে। অসাধারণ এ ভবনটিকে রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসছে না।
দূর থেকে দেখতে হাতির আকৃতির মতো লাগার কারণে এটি পরিচিত ‘হাতির বাংলো’ নামে। পুরানো স্থাপত্যশৈলীর কারুকাজ না থাকলেও ফেরো সিমেন্টের তৈরি প্রাচীন বাংলোটি দেখতে এখন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন, দূর থেকে দেখেই ছবি তুলে ফিরে যান দর্শনার্থীরা। লোকালয় থেকে দূরে হওয়ায় ঝুঁকি নিয়েই প্রতিনিয়ত চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানের বাসিন্দারা হাতির বাংলো দেখতে আসেন। ইতিহাস বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, সিআরবি এলাকার এ হাতির বাংলোর পেছনে রয়েছে অনবদ্য ইতিহাস। এটিকে যথাযথ সংরক্ষণ ও সংস্কার করলে এটি হতে পারে এ অঞ্চলের সমৃদ্ধ ইতিহাসের স্মারক।
হাতির বাংলোটিতে যেতে হলে নগরীর লেডিস ক্লাবের পাশে সড়ক দিয়ে উঠতে হবে, না হয় সিআরবির পুলিশ সুপারের কার্যালয় অতিক্রম করেই যেতে হবে। এ বাংলো ঘিরে রয়েছে নানা বৃক্ষরাজি। পত্রপল্লবে ও সৌরভে সুবাসিত হাতির বাংলোর চারপাশ। আছে হরেক পাখির কলতান। বর্ষায় হাতির বাংলো দেখতে যেমন অন্য রকম মুগ্ধতার ছোঁয়া থাকে, তেমনি তা দর্শনার্থীদের হৃদয়ে স্থায়ীভাবে দাগ কাটে। একইভাবে শীতের সিগ্ধতায় আলাদা আবেশে দেখা যায় হাতির বাংলো। কারণ তখন কুয়াশামাখা আবহাওয়ায় অপরূপ লাগে পাহাড়ের চূড়ায় থাকা এ প্রাচীন বাড়িটি।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মালিকানাধীন এ বাংলো হাতির রঙের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে ছাই রঙের প্রলেপ। যার কারণে অনেকে দূর থেকে ভবনটিকে দেখতে হাতির মতো মনে হয়। এ ভবনের সামনে, পেছনে এবং ওপরে মিলিয়ে মোট ১২টি জানালা রয়েছে। বাংলোর ওপরে হাতির চোখের মতো রয়েছে দুটি ছিদ্র। জানা গেছে, সিআরবির পাহাড় চূড়ায় ১৮৯৩ সালে বাংলোটি নির্মাণ করা হয়। সে হিসেবে এর বয়স ১৩২ বছর। তবে ভবনটি এখন নড়বড়ে। সংস্কারের অভাবে হয়ে গেছে বিবর্ণ।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের তথ্যমতে, এ বাংলোটি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছিল ফেরো সিমেন্ট। যার ফলে শত বছর পার হলেও এটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে সগৌরবে। এ বাংলোতে এখন প্রবেশ করার সুযোগ নেই। প্রবেশের গেটটি থাকে তালাবদ্ধ। বাংলোর সীমানা অতিক্রম করে অনেক কৌতূহলী দর্শনার্থী ছবি তুলে আবার ফিরে আসেন। হাতির বাংলো নির্মাণের পর সেখানে রেলওয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা থাকতেন। তবে কালের পরিক্রমায় সেটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ায় এখন সেটি ভূতুড়ে বাড়ি। জরাজীর্ণ এ হাতির বাংলো ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ হলেও এটি রক্ষণাবেক্ষণে নেই কোনো ব্যবস্থা। বেশ কয়েকবার রেলওয়ের শীর্ষ কয়েক কর্মকর্তা এটিকে সংরক্ষণ ও মেরামতে উদ্যোগ নিলেও তা ছিল শুধুই প্রতিশ্রুতি। বাস্তবায়ন হয়নি আজও।
বাংলো বাড়িটি ডুপ্লেক্স হওয়ায় এটির নিচতলা এবং দোতলায় শয়নকক্ষও রয়েছে। এ বাড়িতে এখন লোক থাকেন। তবে সেটি নিয়েও রয়েছে বিভিন্ন বক্তব্য। কেউ বলেন একজন থাকেন, অনেকে বলেন বেশ কয়েকজন থাকেন। ঐতিহাসিক ‘হাতির বাংলো’ নিয়ে রয়েছে ভুতুড়ে গল্প। সিআরবির আশপাশের অনেকে বলেন, রাতে এ ভবনটির আশপাশে বিভিন্ন প্রাণীর আনাগোনা থাকে।
ভোর হতেই যা অনেকে দেখেছে। আবার অনেকে জানিয়েছেন, রাত হতেই এ ভবন থেকে গা ছম ছম করা বিভিন্ন শব্দ শোনা যায়। কিন্তু এসবের কোনো দালিলিক বা বাস্তবিক প্রমাণ নেই। বছরের পর বছর এ বাংলোটি যে নান্দনিক স্থাপত্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। চট্টগ্রামের ভ্রমণপ্রিয় ও ইতিহাস বিশ্লেষকদের দাবি, হাতির বাংলো সংস্কার ও সংরক্ষণ করে এলাকার ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হোক।
প্যানেল/মজি