ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন মাইসাহেবা মসজিদ

সাফিজল হক তানভীর, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, শেরপুর

প্রকাশিত: ১২:২৭, ১০ জুলাই ২০২৫

প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন মাইসাহেবা মসজিদ

ছবি: জনকণ্ঠ

শেরপুর জেলার ধর্মীয়, ঐতিহাসিক এবং স্থাপত্যিক ঐতিহ্যের অন্যতম সাক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাইসাহেবা জামে মসজিদ। প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন এই মসজিদটি শুধু ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, বরং ইতিহাস-ঐতিহ্যের এক জীবন্ত দলিল।

এই দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি শেরপুর জেলা সদরের প্রাণকেন্দ্র শেরপুর সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আড়াইশত বছর আগে শেরপুরের তৎকালীন তিনআনি জমিদার একবার মুক্তাগাছার জমিদারকে আমন্ত্রণ জানান। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে মুক্তাগাছার জমিদার শেরপুরে আসেন এবং বিশ্রামের জন্য একটি স্থানে অবস্থান করেন। ঐ স্থানে ছিল জমিদারের খাজনা আদায়ের ঘর। জায়গাটি তার এতটাই ভালো লাগে যে, বিদায়ের সময় তিনি জমিদারকে অনুরোধ করেন স্থানটি যেন তার নামে লিখে দেওয়া হয়।
শেরপুরের তিনআনি জমিদার অতিথির অনুরোধ রক্ষা করে তা লিখে দেন। তবে পরে মুক্তাগাছার জমিদার চিন্তা করেন, এই স্থানে কোনো একজন ইসলাম ধর্ম প্রচারককে জায়গাটি দান করবেন। তখন খোঁজ মেলে মীর আব্দুল বাকী নামে একজন মুসলিম সাধকের, যিনি ছিলেন একজন ধর্মপ্রচারক। তবে তিনি পুরো জায়গা না নিয়ে বলেন, মসজিদ নির্মাণের জন্য যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই দেবেন। সেই অনুযায়ী জায়গা লিখে দেওয়া হয় এবং সেই জমিতেই প্রতিষ্ঠিত হয় আজকের ‘মাইসাহেবা মসজিদ’।

মসজিদের স্থাপত্যশৈলীতে রয়েছে বক্রাকারে খিলান, একাধিক গম্বুজ এবং চুন-সুরকির নিপুণ কারুকাজ। দেয়ালের গাঁথুনি ও নকশা প্রমাণ করে এটি দক্ষ হাতে নির্মিত একটি পরিকল্পিত স্থাপনা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা পরিবর্তন এলেও মূল কাঠামোর অনেকাংশ এখনো টিকে আছে, যা ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য আকর্ষণ।

মসজিদের নামকরণের পেছনে আছে জমিদার মীর আব্দুল বাকীর স্ত্রী সালেমুন নেছা বিবির উল্লেখযোগ্য অবদান। সমাজে তিনি ‘মাই সাহেবা’ নামে পরিচিত। তার উদ্যোগেই জমি দান ও মসজিদ নির্মাণ হয়েছিল বলে মসজিদের নাম হয়ে যায় 'মাইসাহেবা মসজিদ’। যদিও এ বিষয়ে লিখিত কোনো প্রামাণ্য দলিল পাওয়া যায় না, তবে লোকমুখে এ কথাই প্রচলিত।

বিগত দুই শতকেরও বেশি সময় ধরে এই মসজিদ শুধু নামাজ আদায়ের স্থান হিসেবেই নয়, বরং এটি ইসলাম প্রচার, ধর্মীয় শিক্ষা এবং সামাজিক সম্প্রীতির কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে এসেছে। প্রতি শুক্রবার এখানে হাজারও মুসল্লি জমায়েত হন জুমার নামাজে।

স্থানীয়রা সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন মসজিদটিকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় এনে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক। সেইসঙ্গে ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও মসজিদটিকে পরিচিত করা সম্ভব।

মাইসাহেবা মসজিদ কেবল একটি প্রাচীন মসজিদ নয়, এটি এক নারী উদ্যোগ, ধর্মীয় অবদান এবং ঐতিহ্যের গর্বিত চিহ্ন। সময় এসেছে এই ঐতিহ্য রক্ষায় একযোগে কাজ করার।

মুমু ২

×