ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

প্রতি ১১ জনে ১ জন আক্রান্ত! কিডনিতে পাথর ডেকে আনে যেসব দৈনন্দিন অভ্যাস

প্রকাশিত: ১০:১৫, ১২ জুলাই ২০২৫

প্রতি ১১ জনে ১ জন আক্রান্ত! কিডনিতে পাথর ডেকে আনে যেসব দৈনন্দিন অভ্যাস

ছবি: সংগৃহীত

কিডনিতে পাথর হওয়া মানে শুধুমাত্র তীব্র পাশের ব্যথা নয়। প্রতি ১১ জনে ১ জনের জীবনে কখনো না কখনো কিডনিতে পাথর হতে পারে। পুরুষদের মধ্যে এই ঝুঁকি নারীদের তুলনায় দ্বিগুণ।

অথচ এই পাথর মূলত গড়ে ওঠে আমাদের প্রতিদিনের নীরব কিছু অভ্যাস থেকে। সকালবেলার পানীয় থেকে শুরু করে দৈনন্দিন খাবারের ধরন—অনেক ছোট ছোট অভ্যাস ধীরে ধীরে কিডনির জন্য সমস্যা তৈরি করে।
অনেকে মনে করেন, শুধু বেশি লবণ খেলে বা পানি কম খেলে কিডনিতে পাথর হয়। কিন্তু বাস্তবতা আরও জটিল এবং অনেক ক্ষেত্রেই বিস্ময়কর।

নিচে এমন ৭টি সাধারণ অভ্যাস তুলে ধরা হলো, যেগুলো দেখতে নিরীহ মনে হলেও চুপিসারে কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি বাড়ায়—যা নিয়ে গবেষণায়ও সতর্কতা এসেছে।

১. খালি পেটে গরম চা বা কফি দিয়ে দিন শুরু করা

সকালে উঠে গরম চা বা কফির কাপ হাতে নেওয়া বেশ আরামদায়ক। তবে যখন এগুলোই হয় শরীরে প্রথম গ্রহণ করা জিনিস, বিশেষ করে খালি পেটে, তখন এর ক্ষতি হতে পারে।

চা ও কফিতে থাকে অক্সালেট নামক একধরনের যৌগ, বিশেষ করে কালো চায়ে। বেশি পরিমাণে বা খালি পেটে এগুলো খেলে শরীরে ক্যালসিয়ামের সঙ্গে মিশে কিডনিতে স্ফটিক তৈরি করে, যা পরে পাথরে পরিণত হতে পারে।
এছাড়া, খালি পেটে এগুলো খেলে পেটে অম্লতা (অ্যাসিডিটি) বাড়ে।

সমাধান—খালি পেটে আগে এক গ্লাস ঈষদুষ্ণ পানি পান করুন। পরে কিছু খাবার খাওয়ার পর চা বা কফি গ্রহণ করুন।

২. বেশি পরিমাণে প্রাণিজ প্রোটিন খাওয়া, তবে ভারসাম্য না রাখা

প্রোটিন শরীরের পেশি গঠন ও শক্তির জন্য দরকার। তবে বেশি প্রাণিজ প্রোটিন (যেমন মাংস, মাছ, ডিম) খেলে প্রস্রাবে অম্লতা বাড়ে, যা ক্যালসিয়াম নির্গমন বাড়িয়ে দেয় এবং সাইট্রেট নামক একটি প্রাকৃতিক পাথর-নিয়ন্ত্রক উপাদান কমিয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাণিজ প্রোটিন বেশি খাওয়া কিডনিতে পাথর তৈরির বড় কারণ।

সমাধান—সপ্তাহে কয়েকদিন উদ্ভিজ্জ প্রোটিন বা নিরামিষ খাবার খান। শসা, কলা ইত্যাদি কিডনি-বান্ধব খাবার বেশি রাখুন।

৩. নিয়মিত খাবার মিস করা, বিশেষ করে সকালের নাশতা

খাবার মিস করা, বিশেষত নাশতা বাদ দেওয়া, দেহে পরে প্রস্রাবে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়ায়। নিয়মিত পুষ্টি না পেলে দেহ পেশি ভাঙতে শুরু করে, এতে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যায়—এটিও পাথরের অন্যতম কারণ।

একটি পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, অনিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস দেহে এমন বিপাকীয় পরিবর্তন ঘটায়, যা পাথর তৈরি করে।

সমাধান—অল্প হলেও নিয়মিত খাবার খান। ভেজানো বাদাম, ফল—এমন সহজ খাবারেও উপকার মিলবে।

৪. সারাদিন পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া, এমনকি শীতকালেও

তৃষ্ণা লাগলে পানি খাওয়া ভালো মনে হলেও, তখন শরীর ইতোমধ্যে পানিশূন্য হতে শুরু করে।
কম পানি খেলে প্রস্রাব ঘন হয়, এতে ক্যালসিয়াম, অক্সালেটের মতো উপাদান সহজে জমে পাথর তৈরি করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রস্রাব পাতলা রাখতে পারেন, তাদের পাথরের ঝুঁকি অনেক কম।

সমাধান—প্রতি ঘণ্টায় খানিকটা পানি খান। পানিতে লেবুর স্লাইস বা কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে খেলে আরও ভালো, কারণ লেবুর সাইট্রেট পাথর প্রতিরোধ করে।

৫. প্রতিদিন অতিরিক্ত পালং শাক, বিট বা বাদাম খাওয়া

এই খাবারগুলো পুষ্টিকর হলেও, এতে অক্সালেট বেশি থাকে। যখন এসব বেশি খাওয়া হয় এবং যথেষ্ট ক্যালসিয়াম না থাকলে, তা পাথর তৈরি করতে পারে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, বেশি অক্সালেট খেলে, ক্যালসিয়াম না থাকলে তা পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

সমাধান—উচ্চ অক্সালেটযুক্ত খাবার যেমন পালং শাক, বিট ইত্যাদি খেলে সঙ্গে দই বা পনিরের মতো ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খান। পাশাপাশি প্রতিদিন এসব খাবারের অতিরিক্ত মাত্রা এড়িয়ে চলুন।

৬. প্রস্রাব আটকে রাখা, বিশেষ করে কাজের সময় বা ভ্রমণে

অনেকেই মনে করেন, প্রস্রাব আটকে রাখলে সমস্যা নেই, যদি ব্যথা না থাকে।
কিন্তু দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখলে পাথর-সৃষ্টিকারী পদার্থগুলো কিডনি বা মূত্রথলিতে জমে পাথর তৈরি করতে পারে। এতে প্রস্রাবে সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ে।

সমাধান—প্রস্রাব চেপে না রেখে, নিয়মিত টয়লেট ব্যবহার করুন। দরকার হলে কাজ বা ভ্রমণে একটু সময় বের করুন।

৭. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট খাওয়া

খাবার থেকে পাওয়া ক্যালসিয়াম কিডনির জন্য উপকারী হলেও, অতি মাত্রায় সাপ্লিমেন্ট নেওয়া বিপজ্জনক।
বিশেষ করে যখন খাবার ছাড়া ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট খাওয়া হয়, তখন প্রস্রাবে ক্যালসিয়াম বেড়ে যায়। এতে পাথরের ঝুঁকি অনেক বেশি।

তবে দুধ, তিল, রাগীর মতো প্রাকৃতিক খাবার থেকে ক্যালসিয়াম নিলে পাথরের আশঙ্কা কম থাকে।

সমাধান—চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট খাবেন না। খাবার থেকেই ক্যালসিয়াম নিন।

এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলোই আসলে বড় বিপদের কারণ হতে পারে।
সতর্ক থাকা জরুরি, কারণ কিডনিতে পাথর হলে শুধু ব্যথা নয়, ভবিষ্যতে আরও বড় জটিলতা তৈরি হতে পারে।
দিনের শুরুতেই পানি পান, নিয়মিত খাবার, পর্যাপ্ত পানি, কিডনি-বান্ধব খাবার আর প্রাকৃতিক উপায়ে পুষ্টি গ্রহণ—এটাই কিডনিকে সুরক্ষার মূলমন্ত্র।

আবির

×