
ছবিঃ সংগৃহীত
ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের কাছে সোনা ও রিয়েল এস্টেট—দুই-ই ঐতিহ্যগতভাবে জনপ্রিয় বিনিয়োগ মাধ্যম। একদিকে সোনাকে ধরা হয় মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা ও তরল সম্পদ হিসেবে, অন্যদিকে রিয়েল এস্টেটকে দেখা হয় স্থায়িত্ব, ভাড়া আয় ও সম্পদ সৃষ্টির প্রতীক হিসেবে। কিন্তু যখন গত এক দশক বা দেড় দশকের আর্থিক রিটার্নের হিসেব করা হয়, তখন ছবিটা বদলে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রিয়েল এস্টেট দীর্ঘমেয়াদে মূল্যবৃদ্ধি ও স্থায়িত্ব এনে দেয়। অনেকেই বিশ্বাস করেন, বিলাসবহুল হাউজিং প্রকল্পের চাহিদা, করিডোর-ভিত্তিক উন্নয়ন এবং হাই-নেট-ওয়ার্থ ব্যক্তিদের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ এই খাতকে ভবিষ্যতের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দিল্লির দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ে এলাকায় গত ১৪ বছরে সম্পত্তির দাম পাঁচ গুণ বেড়েছে। নয়ডা-গ্রেটার নয়ডা এক্সপ্রেসওয়ে বা নয়ডা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো প্রকল্পগুলিও রিয়েল এস্টেটের দাম বাড়াতে সাহায্য করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী ১০–১৫ বছরে রিয়েল এস্টেট আরও বেশি লাভজনক হতে পারে।
তবে পরিসংখ্যান কিন্তু ভিন্ন কথা বলছে। BankBazaar-এর সিইও অধিল শেঠি জানিয়েছেন, গত ১৫ বছরে সোনার গড় বার্ষিক রিটার্ন (CAGR) ছিল ১১.৩ শতাংশ, যেখানে রিয়েল এস্টেট দিয়েছে মাত্র ৬.৪ শতাংশ। অর্থাৎ, ১৫ বছর আগে যদি কেউ ₹১ লক্ষ সোনায় বিনিয়োগ করতেন, আজ তা দাঁড়াত ₹৫ লক্ষে। অথচ একই অঙ্ক রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করলে আজ তার মূল্য হতো ₹২.৫ লক্ষ মাত্র।
এছাড়া, ডিজিটাল সোনা, সোনার বন্ড, ETF-এর মতো সহজ বিনিয়োগের পথ এবং কম খরচে প্রবেশাধিকার সোনাকে আরও বেশি সুবিধাজনক করে তুলেছে। অধিল শেঠি বলেন, “যাঁরা সহজবোধ্য, কম ঝুঁকির বিনিয়োগ খুঁজছেন, তাঁদের জন্য সোনা দীর্ঘমেয়াদে ভালো ফল দিয়েছে।” তবে তিনি সতর্ক করে দেন যে, পোর্টফোলিওর ৫–১০ শতাংশের বেশি সোনায় রাখা উচিত নয়, যাতে ভারসাম্য বজায় থাকে।
পরিসংখ্যান বলছে, সোনা ১ বছরে ৪৩.১% রিটার্ন দিয়েছে, যেখানে রিয়েল এস্টেট দিয়েছে মাত্র ৭.৪%। ১০ ও ১৫ বছরের হিসাবেও সোনা সবদিক থেকে এগিয়ে। ১৫ বছরে সোনা পাঁচ গুণ, আর রিয়েল এস্টেট মাত্র ২.৫ গুণ বেড়েছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, দুই ধরনের বিনিয়োগের আলাদা আলাদা সুবিধা আছে। রিয়েল এস্টেট থেকে পাওয়া যায় স্থায়িত্ব, পুঁজিবৃদ্ধি ও ভাড়া আয়। আর সোনা দেয় তরলতা, নিরাপত্তা ও কম জটিলতা। বিনিয়োগকারীদের উচিত নিজের আর্থিক লক্ষ্য, ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা এবং সম্পদ বণ্টনের কৌশল বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
মারিয়া