
ছবি: সংগৃহীত
কিডনিতে পাথর গঠন একটি যন্ত্রণাদায়ক স্বাস্থ্য সমস্যা। প্রস্রাবে খনিজ ও লবণের মাত্রা বেড়ে গেলে তা জমে গিয়ে কঠিন আকার ধারণ করে এবং পাথরে পরিণত হয়। এটি মূত্রনালী দিয়ে যাওয়ার সময় প্রচণ্ড ব্যথার সৃষ্টি করে। যদিও জেনেটিক কারণ, পানিশূন্যতা এবং কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা এই পাথর গঠনের জন্য দায়ী, খাদ্যাভ্যাসও একটি বড় ভূমিকা রাখে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু খাবার প্রস্রাবে অক্সালেট, ক্যালসিয়াম, ইউরিক অ্যাসিড ও সোডিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে, যা পাথর গঠনে সহায়তা করে। তাই কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি আছে এমন ব্যক্তিদের জন্য এসব খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো। নিচে এমন ১০টি খাবারের তালিকা দেওয়া হলো, যেগুলো কিডনির জন্য হতে পারে ‘শত্রু’—
১. পালং শাক
পালং শাকে প্রচুর পরিমাণ অক্সালেট থাকে, যা কিডনিতে ক্যালসিয়ামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথর তৈরি করে। নিয়মিত বেশি পরিমাণে পালং খেলে ঝুঁকি বাড়ে, বিশেষ করে যদি তা ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে না খাওয়া হয়।
২. বিট
বিট ও বিটের রসে উচ্চমাত্রার অক্সালেট থাকে। যারা ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথরের ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের এই খাবারটি নিয়মিত খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
৩. বাদাম ও বীজ
আমন্ড, কাজু, চিনাবাদামসহ বেশিরভাগ বাদামে অক্সালেট বেশি থাকে। মাঝেমধ্যে খাওয়া সমস্যা না হলেও অতিরিক্ত খেলে পাথর গঠনের ঝুঁকি বাড়ে।
৪. চকলেট
ডার্ক চকলেট এবং কোকোতেও প্রচুর অক্সালেট রয়েছে। মাঝে মাঝে অল্প পরিমাণে খাওয়া গেলেও নিয়মিত খেলে ক্ষতি হতে পারে।
৫. চা
ব্ল্যাক টি বা কালো চায়ে অনেক অক্সালেট থাকে। অতিরিক্ত পান করলে প্রস্রাবে অক্সালেট বেড়ে পাথর তৈরি হতে পারে। তুলনামূলকভাবে হারবাল চা ভালো বিকল্প।
৬. লাল মাংস
লাল মাংসে থাকে প্রচুর পরিমাণ পিউরিন, যা শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বাড়িয়ে দেয়। ইউরিক অ্যাসিড পাথরের অন্যতম কারণ। তাই প্রাণিজ প্রোটিন কমিয়ে আনা জরুরি।
৭. অতিরিক্ত লবণযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার
চিপস, ইনস্ট্যান্ট নুডলস, ক্যানজাত খাবার ও ফাস্ট ফুডে সোডিয়ামের মাত্রা অনেক বেশি। সোডিয়াম প্রস্রাবে ক্যালসিয়াম নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়, ফলে পাথর গঠনের ঝুঁকি বাড়ে।
৮. কোলা ও মিষ্টি পানীয়
কোলা জাতীয় পানীয়তে থাকে ফসফরিক অ্যাসিড, যা পাথর তৈরিতে ভূমিকা রাখে। এছাড়া চিনি ও সোডা প্রস্রাবের পরিমাণ কমিয়ে এবং ইউরিক অ্যাসিড বাড়িয়ে পাথরের আশঙ্কা বাড়ায়।
৯. রুবাব (Rhubarb)
এর বাংলা প্রতিশব্দ হল রেবচিনি বা রেউচিনি। এটিকে অনেক সময় ‘মাংসল, ভোজ্য ডাঁটা’ হিসেবেও বর্ণনা করা হয়, যা রান্না করে খাওয়া হয়। এই সবজিটিও উচ্চমাত্রার অক্সালেটযুক্ত। যাদের কিডনিতে পাথরের সমস্যা আছে, তাদের জন্য এটি বিপজ্জনক হতে পারে।
১০. ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট
ভিটামিন সি শরীরে অক্সালেটে রূপান্তরিত হয়। নিয়মিত অতিরিক্ত গ্রহণ করলে কিডনি পাথরের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত গ্রহণ করা উচিত নয়।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, যারা কিডনিতে পাথরের সমস্যায় ভোগেন, তাদের উচিত প্রচুর পানি পান করা, অক্সালেট ও ক্যালসিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং লবণ ও প্রাণিজ প্রোটিন কম খাওয়া। এতে করে এই যন্ত্রণাদায়ক রোগের পুনরাবৃত্তি অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি। কোনো চিকিৎসা পরামর্শের বিকল্প নয়। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সূত্র: https://doctor.ndtv.com/living-healthy/kidney-stones-these-foods-might-be-an-enemy-8849753
রাকিব